নিউইয়র্ক ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রানা প্লাজা ধস: এখনো শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৩৫ বার পঠিত

ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রধান আসামি ভবন মালিক সোহেল রানা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। পরে তা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আটকে যায়।

সর্বোচ্চ আদালত সোহেল রানার জামিন স্থগিত করে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। সে হিসাবে চলতি বছরের জুলাইয়ে মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার কথা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ১০ তলা ওই ভবন ধসে পড়ে। ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক এর নিচে চাপা পড়েন। কয়েক দিনের উদ্ধার তৎপরতায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়।

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন। ওই ঘটনায় তখন তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি পরিকল্পিত হত্যা মামলা, একটি ইমারত নির্মাণ আইনে এবং অন্যটি ভবনের নকশাসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে।

তবে একটি মামলারও বিচার শেষ হয়নি। পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা, তাঁর মা-বাবা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র, কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত নির্মাণ বিধি না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি।

হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত তিন আসামি মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। পলাতক সাতজন। জামিনে আছেন ৩১ জন আসামি।

ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল এই মামলার কার্যক্রম। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যাঁরা অপরাধ করেননি, তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন পেয়ে ২০১৫ সালের ১ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন সিআইডির সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। কয়েকজন আসামি এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করলে ছয়জনের পক্ষে স্থগিতাদেশ আসে। এরপর তা উঠিয়ে নেওয়া হলে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এ মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) বিমল সমাদ্দার কালের কণ্ঠকে বলেন, মোট সাক্ষী ৫৯৬ জন। এখন ৮৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল ৮৫তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রয়েছে। সব মিলিয়ে শতাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

ভবন নির্মাণে ত্রুটি এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরের বছর ১৪ জুন অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সিজেএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর জানান, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া মামলাটি তাঁর আদালতে নিয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে গেলে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর স্থগিতাদেশ আসে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া নকশাসংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড, তাঁর মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সাভার বাজার রোডের ৬৯/১ নম্বর বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেন আদালত। সূত্র : কালের কণ্ঠ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রানা প্লাজা ধস: এখনো শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার

প্রকাশের সময় : ০২:০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রধান আসামি ভবন মালিক সোহেল রানা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। পরে তা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আটকে যায়।

সর্বোচ্চ আদালত সোহেল রানার জামিন স্থগিত করে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছিলেন। সে হিসাবে চলতি বছরের জুলাইয়ে মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার কথা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ১০ তলা ওই ভবন ধসে পড়ে। ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক এর নিচে চাপা পড়েন। কয়েক দিনের উদ্ধার তৎপরতায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়।

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন। ওই ঘটনায় তখন তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি পরিকল্পিত হত্যা মামলা, একটি ইমারত নির্মাণ আইনে এবং অন্যটি ভবনের নকশাসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে।

তবে একটি মামলারও বিচার শেষ হয়নি। পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা, তাঁর মা-বাবা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র, কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত নির্মাণ বিধি না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়। দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি।

হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত তিন আসামি মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। পলাতক সাতজন। জামিনে আছেন ৩১ জন আসামি।

ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল এই মামলার কার্যক্রম। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যাঁরা অপরাধ করেননি, তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন পেয়ে ২০১৫ সালের ১ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন সিআইডির সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। কয়েকজন আসামি এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করলে ছয়জনের পক্ষে স্থগিতাদেশ আসে। এরপর তা উঠিয়ে নেওয়া হলে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এ মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) বিমল সমাদ্দার কালের কণ্ঠকে বলেন, মোট সাক্ষী ৫৯৬ জন। এখন ৮৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল ৮৫তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ রয়েছে। সব মিলিয়ে শতাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

ভবন নির্মাণে ত্রুটি এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরের বছর ১৪ জুন অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সিজেএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর জানান, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া মামলাটি তাঁর আদালতে নিয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে গেলে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর স্থগিতাদেশ আসে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া নকশাসংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড, তাঁর মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সাভার বাজার রোডের ৬৯/১ নম্বর বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেন আদালত। সূত্র : কালের কণ্ঠ।