নিউইয়র্ক ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

জীবন সিনেমার চেয়েও বড় সিনেমা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৬ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: সুলতানা রহমান। বাংলাদেশের টিভি মিডিয়ার ‘স্টার সাংবাদিক’ হিসেবে যার পরিচয়। দাপটের সাথে কাজ করেছেন ঢাকার নিউজ ২৪, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি, মাছরাঙ্গা, এনটিভি প্রভৃতি চ্যানেলে। এছাড়াও সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকার ইংরেজী পত্রিকা ডেইলী স্টার, বাংলা দৈনিক আজকের কাগজ প্রভৃতি গণমাধ্যমে। পটুয়াখালীর সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর পুরোপুরি সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার পাঠ চুকিয়ে একমত্র সন্তানকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তথা নিউইয়র্কে স্থায়ী বসতি গড়েন। আমেরিকান প্রবাসী জীবনের শুরুতে যোগ দেন নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশনে। পরবর্তীতে টাইম টিভি ছেড়ে যোগ দেন নিউইয়র্কের আরেক টিভি চ্যানেল টিবিএন ২৪-এ। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে এখন মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব ফার্মে কাজ করছেন। জীবনের তাগিদে করেছেন নানা অডজব। সম্প্রতি নিউইয়র্কে নতুন করে ঘর সাজিয়ে নতুন স্বামী আর সন্তান নিয়ে এখন স্থায়ীভাবে আবাস গেড়েছেন রাজধানী আলবানী এলাকায়। অতিবাহিত করছেন আমেরিকান কঠিন জীবন সংগ্রাম।
সাংবাদিক সুলতানা রহমান তার সেই আমেরিকান জীবন সংগ্রাসের কথা প্রকাশ করেছেন তার নিজস্ব ফেজবুক পেইজে। ১ এপ্রিল সোমবার তাতে তিনি লিখেছেন-
‘আর চার মাস বাদে ছেলে আমার ১৮ হবে। এতো কঠিন একটা সময় আমরা পাড়ি দিয়েছি আমরা, সবার দোয়া আর ভালবাসার শক্তিতেই বোধহয় আমরা টিকে গেছি।
জীবন সিনেমার চেয়েও বড় সিনেমা। নিউইয়র্কে আসার পর কি করবো কোথায় যাবো কাকে বলবো- এতো নিষ্ঠুর সময় কারো জীবনে কোনোদিন না আসুক। আমার ছেলেটা ছিলো বলেই কঠিন সময়াটা দুজনে ভাগাভাগি করে পাড়ি দিতে পেরেছি। তবে এই জীবনে সবচে বড় শিক্ষা পেয়েছি- আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো।
ছেলেটা আমার অনেকটা একাই বড় হয়েছে, ১০ বছর বয়সেই তাকে বেসিক রান্না শিখতে হয়েছে, শিখতে হয়েছে একা একা চলতে। নিউইয়র্কের প্রথম ক’ বছর আমার বাসা ভাড়া আর খাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই গায়ের রক্ত পানি হয়ে গেছে। প্রথম কাজ শুরুর পর বেতনের ১৬শ টাকার এক হাজার টাকা দিতে হতো বোন-দুলাভাইকে বাসা ভাড়া আর খাওয়া বাবদ। বাকী ৬ শ টাকার দুই শ টাকা মেট্রোকার্ড আর মোবাইল বিল। দুইশ টাকা ছেলের হাত খরচ। বাকী দুই শ টাকায় জীবনের বাদ বাকি প্রয়োজন। তবু ছেলেটা আমার কোনোদিন এতটুকুও অভিযোগ করেনি, এমন কি কিছু দরকার হলে জিজ্ঞেস করেছে- মাম্মা তোমার কাছে কি টাকা আছে? আমি কি এটা নিতে পারি? এখন তার কাছে ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড-সবই আছে, তবু ওই প্রশ্ন তার বদলায়নি।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য চাকরির পাশাপাশি গ্রোসারি, পিৎজা ডেলিভারি, কনসালটেন্সি, অনুবাদ, মেন্টরশিপ শেষমেষ উবার লিফটও চালিয়েছি। পরিশ্রম করলে জীবন বদলায়, কিন্তু ওই সময়টা তো আর ফিরে আসে না। গত একটা বছর ধরে ফুল টাইম কোনে জব করছিনা- যে বাচ্চাটা ১০ বছর বয়স থেকে স্কুল থেকে ফিরে চাবি দিয়ে শূন্য ঘরের দরোজা খুলে প্রবেশ করেছে, কিছু খেয়েছে কি খায়নি, আমিই তাকে এখন ঘরের দরোজা খুলে দিতে পারি, তাকে খাবার দিতে পারি- এরচে বড় প্রাপ্তি জীবনে বোধহয় আর কিছু নেই!
আজ এতো কিছু মনে হওয়ার কারণ- ছেলেটাকে আজ এক সপ্তাহের জন্য সিটিতে রেখে এলাম- পড়ালেখার জন্য। বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে তার উদ্বেগ আর সতর্কতামূলক পরামর্শ শুনে চোখ ভিজে গেলো। একা একা ফিরবো বলে কত কথা যে ছেলেটা বললো- গাড়ি চালানোর সময় তোমার গান প্লে করার জন্য কেউ থাকবে না কিন্তু, জিপিএস কাজ না করলে দুশ্চিন্তা করো না একটু পরই ঠিক হয়ে যাবে। পানির বটলের ক্যাপটা লুস রেখো যেনো অক হাতে নিজেই খুলে পানি খেতে পারো, প্রমিজ করো বেশি জোড়ে গাড়ি চালাবা না, বাসায় পৌছে ফোন দিও, আমি ফোন না ধরলে কান্নাকাটি শুরু করোনা- তার পরামর্শ আর উপদেশ শুনতে শুনতে আমিই তারে আর কোনো পরামর্শ দিতে পারলাম না।
জীবন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো, আপস এন্ড ডাউনস। ভালো মন্দ কোনোটিই স্থায়ী না। সুখের সময় দুখের কথা ভুলতে নেই, আর দুখের সময় হতাশ হতে নেই- দিন বদলাবেই!’

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

জীবন সিনেমার চেয়েও বড় সিনেমা

প্রকাশের সময় : ০১:০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

হককথা ডেস্ক: সুলতানা রহমান। বাংলাদেশের টিভি মিডিয়ার ‘স্টার সাংবাদিক’ হিসেবে যার পরিচয়। দাপটের সাথে কাজ করেছেন ঢাকার নিউজ ২৪, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি, মাছরাঙ্গা, এনটিভি প্রভৃতি চ্যানেলে। এছাড়াও সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকার ইংরেজী পত্রিকা ডেইলী স্টার, বাংলা দৈনিক আজকের কাগজ প্রভৃতি গণমাধ্যমে। পটুয়াখালীর সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর পুরোপুরি সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার পাঠ চুকিয়ে একমত্র সন্তানকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তথা নিউইয়র্কে স্থায়ী বসতি গড়েন। আমেরিকান প্রবাসী জীবনের শুরুতে যোগ দেন নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশনে। পরবর্তীতে টাইম টিভি ছেড়ে যোগ দেন নিউইয়র্কের আরেক টিভি চ্যানেল টিবিএন ২৪-এ। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে এখন মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব ফার্মে কাজ করছেন। জীবনের তাগিদে করেছেন নানা অডজব। সম্প্রতি নিউইয়র্কে নতুন করে ঘর সাজিয়ে নতুন স্বামী আর সন্তান নিয়ে এখন স্থায়ীভাবে আবাস গেড়েছেন রাজধানী আলবানী এলাকায়। অতিবাহিত করছেন আমেরিকান কঠিন জীবন সংগ্রাম।
সাংবাদিক সুলতানা রহমান তার সেই আমেরিকান জীবন সংগ্রাসের কথা প্রকাশ করেছেন তার নিজস্ব ফেজবুক পেইজে। ১ এপ্রিল সোমবার তাতে তিনি লিখেছেন-
‘আর চার মাস বাদে ছেলে আমার ১৮ হবে। এতো কঠিন একটা সময় আমরা পাড়ি দিয়েছি আমরা, সবার দোয়া আর ভালবাসার শক্তিতেই বোধহয় আমরা টিকে গেছি।
জীবন সিনেমার চেয়েও বড় সিনেমা। নিউইয়র্কে আসার পর কি করবো কোথায় যাবো কাকে বলবো- এতো নিষ্ঠুর সময় কারো জীবনে কোনোদিন না আসুক। আমার ছেলেটা ছিলো বলেই কঠিন সময়াটা দুজনে ভাগাভাগি করে পাড়ি দিতে পেরেছি। তবে এই জীবনে সবচে বড় শিক্ষা পেয়েছি- আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো।
ছেলেটা আমার অনেকটা একাই বড় হয়েছে, ১০ বছর বয়সেই তাকে বেসিক রান্না শিখতে হয়েছে, শিখতে হয়েছে একা একা চলতে। নিউইয়র্কের প্রথম ক’ বছর আমার বাসা ভাড়া আর খাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই গায়ের রক্ত পানি হয়ে গেছে। প্রথম কাজ শুরুর পর বেতনের ১৬শ টাকার এক হাজার টাকা দিতে হতো বোন-দুলাভাইকে বাসা ভাড়া আর খাওয়া বাবদ। বাকী ৬ শ টাকার দুই শ টাকা মেট্রোকার্ড আর মোবাইল বিল। দুইশ টাকা ছেলের হাত খরচ। বাকী দুই শ টাকায় জীবনের বাদ বাকি প্রয়োজন। তবু ছেলেটা আমার কোনোদিন এতটুকুও অভিযোগ করেনি, এমন কি কিছু দরকার হলে জিজ্ঞেস করেছে- মাম্মা তোমার কাছে কি টাকা আছে? আমি কি এটা নিতে পারি? এখন তার কাছে ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড-সবই আছে, তবু ওই প্রশ্ন তার বদলায়নি।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য চাকরির পাশাপাশি গ্রোসারি, পিৎজা ডেলিভারি, কনসালটেন্সি, অনুবাদ, মেন্টরশিপ শেষমেষ উবার লিফটও চালিয়েছি। পরিশ্রম করলে জীবন বদলায়, কিন্তু ওই সময়টা তো আর ফিরে আসে না। গত একটা বছর ধরে ফুল টাইম কোনে জব করছিনা- যে বাচ্চাটা ১০ বছর বয়স থেকে স্কুল থেকে ফিরে চাবি দিয়ে শূন্য ঘরের দরোজা খুলে প্রবেশ করেছে, কিছু খেয়েছে কি খায়নি, আমিই তাকে এখন ঘরের দরোজা খুলে দিতে পারি, তাকে খাবার দিতে পারি- এরচে বড় প্রাপ্তি জীবনে বোধহয় আর কিছু নেই!
আজ এতো কিছু মনে হওয়ার কারণ- ছেলেটাকে আজ এক সপ্তাহের জন্য সিটিতে রেখে এলাম- পড়ালেখার জন্য। বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে তার উদ্বেগ আর সতর্কতামূলক পরামর্শ শুনে চোখ ভিজে গেলো। একা একা ফিরবো বলে কত কথা যে ছেলেটা বললো- গাড়ি চালানোর সময় তোমার গান প্লে করার জন্য কেউ থাকবে না কিন্তু, জিপিএস কাজ না করলে দুশ্চিন্তা করো না একটু পরই ঠিক হয়ে যাবে। পানির বটলের ক্যাপটা লুস রেখো যেনো অক হাতে নিজেই খুলে পানি খেতে পারো, প্রমিজ করো বেশি জোড়ে গাড়ি চালাবা না, বাসায় পৌছে ফোন দিও, আমি ফোন না ধরলে কান্নাকাটি শুরু করোনা- তার পরামর্শ আর উপদেশ শুনতে শুনতে আমিই তারে আর কোনো পরামর্শ দিতে পারলাম না।
জীবন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো, আপস এন্ড ডাউনস। ভালো মন্দ কোনোটিই স্থায়ী না। সুখের সময় দুখের কথা ভুলতে নেই, আর দুখের সময় হতাশ হতে নেই- দিন বদলাবেই!’