টেক্সাসে নিহত নিউইয়র্কের সৌরভ দম্পতির দাফন সম্পন্ন

- প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ২৫৬০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: টেক্সাসে এক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর এলমহার্ষ্টে বসবাসকারী বাংলাদেশী সৌরভ দম্পতির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ৩১ আগষ্ট বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, গত ২৭ আগষ্ট শনিবার রাতে সড়ক দূর্ঘটনাটি ঘটে। দুটি কারের মুখোমুখী সংঘর্ষের এই দূর্ঘটনায় আরো একজন নিহত এবং সৌরভ দম্পতির পুত্র সাদাব সৌরভ সহ আরো দু’জন গুরুতর আহত হয়ে হাসাপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে সৌরভ দম্পতির নিহতের ঘটনায় নিউইয়র্ক প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। সেই সাথে টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ ও প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ ইনক’র নেতৃবৃন্দ তাদের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা এবং বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করেছেন।
টেক্সাস থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, স্থানীয় নরম্যানগির কাছে হাইওয়ে ৩০ এর উপর ২৭ আগষ্ট শনিবার রাত ১০টা ১৭ মিনিটে সড়ক দূর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় দুটি কারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মাহবুবুল সৌরভ (৫৭) ও তার স্ত্রী সাফিনা সৌরভ (৪৮) এবং অপর কারের আরোহী কার্লজ লোপেজ (২৭) নামে একজন নিহত হন। এই ঘটনায় সৌরভ দম্পতির পুত্র সাদাব সৌরভ (২৩) সহ অপর কারের আরো আরোহী লাউরা ওলভেরা (২৪) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দ্য টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব সেফটি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। দূর্ঘটনার তদন্ত চলছে। খবর ইউএনএ’র।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, হেলথ ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রীধারী পুত্র সাদাব সৌরভের নতুন কর্মস্থলে যোগাদানের পর মাহবুবুল সৌরভ পুত্রকে দেখতে সপরিবারে টেক্সাস গিয়েছিলেন। সৌরভের ছোট ভাই রুহুনুল ইসলাম রুহেল নিউইয়র্ক ছেড়ে গত কয়েক বছর ধরে টেক্সাসে বসবাস করছেন। নিহত সৌরভ দম্পতির বাড়ী টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায়। মাহবুবুল সৌরভ নিউইয়র্কের ম্যানহাটানাস্থ ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক বার্কলি রেষ্টুরেন্টে আর সাফিনা সৌরভ একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
টেক্সাস থেকে রুহেল ৩ সেপ্টেম্বর ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার ভাতিজা সাদাব এখন আশংকামুক্ত হলেও তার মাথা সহ হাত, পা ও বুকে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। তাকে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। কৃত্তিম উপায়ে তাকে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তাকে স্বাভাবিক জ্ঞান ফিরিয়ে আনতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া সাদাবের জন্য তার মা-বাবার নেয়া ১০ হাজার ডলার দূর্ঘটনা কবলিত কার থেকে পেয়ে পুলিশ পরিবারের কাছে ফেরৎ দিয়েছে। সাদাবের নতুন কর্মস্থলের বাসা-বাড়ী সাজানো-গুছানোর সৌরভ দম্পতি জন্য অর্থগুলো সাথে নিয়েছিরেন। তিনি তার ভাতিজার দ্রুত সুস্থ্যতা আর ভাই-ভাবীর বিদেহী আতœার শান্তি কামনায় সকল প্রবাসী বাংলাদেশীর দোয়া কামনা করেছেন।
জেএমসি-তে নামাজে জানাজা: সড়ক দূর্ঘটনা নিহত সৌরভ দম্পতির নামাজে জানাজা ৩১ আগষ্ট বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জেএমসি) তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন জেএমসি’র পেশ ইমাম ও খতিব মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। জানাজায় সৌরভ দম্পতির দুই পরিবারের সদস্য আর কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশ নেন। জানাজা নামাজের আগে জেএমসিতে উপস্থিত প্রবাসীরা শেষ বারের মতো এক নজর তাদেরকে দেখার জন্য ভীড় জামান। সর্বস্তরের প্রবাসীরা একে একে নিহত মাহবুবুল সৌরভেকে আর ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক শুধুমাত্র নারীরা সাফিনা সৌরভকে দেখেন। তাদেরকে দেখতে গিয়ে এসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফলে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশেষ করে সাফিনা সৌরভের বয়োবৃদ্ধ পিতা আর সৌরভ দম্পতির দুই পরিবারের সদস্যরা এবং সাফিনার সাথী শিক্ষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এর আগে ৩০ আগষ্ট মঙ্গলবার রাতে পৃথক দুটি বিমানে সৌরভ দম্পতির মরদেহ টেক্সাস থেকে নিউইয়র্কে আনা হয় বলে রুহুনুল ইসলাম রুহেল জানান। ফোনে আবগ আপ্লুত কন্ঠে রুহেল বলেন, আমি নিজ হাতে আমার ভাইয়ের মরদেহকে গোসল করিয়েছি। তার মুখে আঘাত ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। দূর্ঘটনার সময় মাথায় আঘাত লেগেই আমার ভাই-ভাবী মৃত্যুও শিকার হন বলে তিনি জানান। লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে তাদের মরদেহ স্থানীয় ফিউনেরাল হোমে রাখার পর বুধবার সকালে জেএমসি প্রাঙ্গণে আনা হয়।
জানাজা নামাজের আগে মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ, মাহবুবুল সৌরভের বড় ভাই এমডি আমিনুল হক ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক বার্কলি রেষ্টুরেন্টের জেনারেল ম্যানেজার হার্ভে হুদরে, অপর কর্মকর্তা জিন ওলমস্টেড, জেএমসি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আকতার হোসেন, এটর্নী শেখ সেলিম প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা মরহুম সৌরভকে একজন ভালো ও পরোপকারী এবং অজাত শত্রু মানুষ হিসেবে অভিমত প্রকাশ করেন।
জানাজা নামাজ শেষে সৌরভ দম্পতির মরদেহ লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবর স্থানে নেয় হয় এবং অপরাহ্নে সেখানে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়। দাফনের সময় বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।