নিউইয়র্ক ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হঠাৎ রাশিয়ায় আইএস হামলা করল কেন?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৫ বার পঠিত

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে আবারও আলোচনায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়াকে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা দেশ মনে করে গোষ্ঠীটি। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের সামলোচনাও করেছে গোষ্ঠিটি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রই সৃষ্টি করে আইএস। রাশিয়াও বেশ কয়েকবার জঙ্গী গোষ্ঠীটিকে মদদ দেয়ার অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় শুক্রবার (২২ মার্চ) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আবারও আলোচনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। হঠাৎ করে রাশিয়ায় এ ধরণের হামলার পেছনে গোষ্ঠীটির উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করে আসছিল। দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে টার্গেট করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান বা আইএস। রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একটি দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস। নিজেদের প্রচারণায় প্রায়ই পুতিনের সমালোচনা করেছে গোষ্ঠীটি। তবে আইএসের উত্থান ও দেশে দেশে ত্রাস সৃষ্টির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এর আবির্ভাব। চূড়ান্ত পর্যায়ের নৃশংসতা দেখিয়ে দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে গোষ্ঠীটি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীর একটি আইএস।

আইএস গঠন ও এর উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের হাত আছে এমন অভিযোগ বেশ পুরানো। আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই কথিত লড়াইয়ের কথা বলে এলেও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই একবার বলেছিলেন, এসবই মনভোলানো বুলি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সামরিক বাহিনীই ইসলামিক স্টেটের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, রাজনৈতিক মদদ ও সামরিক রসদ যুগিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকে গোপনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে তারা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর উপস্থিতি, নজরদারি, সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আইএসের উত্থান ঘটেছে।

২০১৯ সালের দিকে সিরিয়া ও ইরাকে শোচনীয় পরাজয়ে আইএস নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এই গোষ্ঠীটির সদস্যদের আফগানিস্তানে ঢোকার সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানের ভেতরে প্রায়ই হেলিকপ্টারে করে অবাধে অস্ত্র প্রবেশ করাতো আইএস। ওই এলাকার আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ সেসময় পুরোটাই ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হাতে।

তবে কখনোই তারা হেলিকপ্টারগুলোকে চিহ্নিত করা কিংবা আটকানোর চেষ্টা করেনি। সেজন্য এ ধারণা পোক্ত হয় যে, জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানোয় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর হাত আছে। আইএসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বে ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ও নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যা করে যেন, বাগদাদি ও আইএস সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার বিষয়টি গোপনই থেকে যায়।

সে সময় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, আইএস ও বাগদাদি যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি। যুক্তরাষ্ট্র নিজের হাতে বাগদাদিকে তৈরি করে আবার নিজেই তাকে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। একই রকম মন্তব্য আসে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রকে আইএসের গডফাদার বলেও আখ্যা দেয় তেহরান।

কেবল রাশিয়া-ইরান কিংবা আফগানিস্তান নয়, আইএস যে যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি তা খোদ সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছিলেন। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএস সৃষ্টি করেছেন।

এমনকি আইএস সৃষ্টিতে সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনেরও হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। এতে করে এবার মস্কোয় হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হঠাৎ রাশিয়ায় আইএস হামলা করল কেন?

প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে আবারও আলোচনায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়াকে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা দেশ মনে করে গোষ্ঠীটি। সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের সামলোচনাও করেছে গোষ্ঠিটি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রই সৃষ্টি করে আইএস। রাশিয়াও বেশ কয়েকবার জঙ্গী গোষ্ঠীটিকে মদদ দেয়ার অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় শুক্রবার (২২ মার্চ) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আবারও আলোচনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। হঠাৎ করে রাশিয়ায় এ ধরণের হামলার পেছনে গোষ্ঠীটির উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গোষ্ঠীটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করে আসছিল। দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে টার্গেট করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান বা আইএস। রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা একটি দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস। নিজেদের প্রচারণায় প্রায়ই পুতিনের সমালোচনা করেছে গোষ্ঠীটি। তবে আইএসের উত্থান ও দেশে দেশে ত্রাস সৃষ্টির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’ বা আইএস-কে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এর আবির্ভাব। চূড়ান্ত পর্যায়ের নৃশংসতা দেখিয়ে দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে গোষ্ঠীটি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের সবচেয়ে সক্রিয় আঞ্চলিক সহযোগীর একটি আইএস।

আইএস গঠন ও এর উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের হাত আছে এমন অভিযোগ বেশ পুরানো। আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই কথিত লড়াইয়ের কথা বলে এলেও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই একবার বলেছিলেন, এসবই মনভোলানো বুলি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সামরিক বাহিনীই ইসলামিক স্টেটের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, রাজনৈতিক মদদ ও সামরিক রসদ যুগিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকে গোপনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে তারা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর উপস্থিতি, নজরদারি, সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আইএসের উত্থান ঘটেছে।

২০১৯ সালের দিকে সিরিয়া ও ইরাকে শোচনীয় পরাজয়ে আইএস নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এই গোষ্ঠীটির সদস্যদের আফগানিস্তানে ঢোকার সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানের ভেতরে প্রায়ই হেলিকপ্টারে করে অবাধে অস্ত্র প্রবেশ করাতো আইএস। ওই এলাকার আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ সেসময় পুরোটাই ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হাতে।

তবে কখনোই তারা হেলিকপ্টারগুলোকে চিহ্নিত করা কিংবা আটকানোর চেষ্টা করেনি। সেজন্য এ ধারণা পোক্ত হয় যে, জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানোয় যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর হাত আছে। আইএসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বে ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ও নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যা করে যেন, বাগদাদি ও আইএস সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার বিষয়টি গোপনই থেকে যায়।

সে সময় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, আইএস ও বাগদাদি যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি। যুক্তরাষ্ট্র নিজের হাতে বাগদাদিকে তৈরি করে আবার নিজেই তাকে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। একই রকম মন্তব্য আসে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রকে আইএসের গডফাদার বলেও আখ্যা দেয় তেহরান।

কেবল রাশিয়া-ইরান কিংবা আফগানিস্তান নয়, আইএস যে যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি তা খোদ সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছিলেন। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএস সৃষ্টি করেছেন।

এমনকি আইএস সৃষ্টিতে সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনেরও হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। এতে করে এবার মস্কোয় হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল।