মহাকাশে নতুন স্বপ্নের ডানা

- প্রকাশের সময় : ১২:৫০:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
- / ৬৪ বার পঠিত
দেরিতে হলেও মহাকাশ বিজ্ঞানে নিজেদেরকে দক্ষ করে তোলার প্রশিক্ষণে পা রেখেছে বাংলাদেশ। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রও প্রস্তুত। দেশে বৃহৎ পরিসরে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে রকেট তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে পুরোদমে। ফলে মহাকাশকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করেছে। এটা নিয়ে বড় পরিসরে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন কৃতী উদ্ভাবক ও মহাকাশ বিজ্ঞানী আজাদুল হক।
ব্যক্তিপর্যায়ে বা ছোট দলের মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের উদ্যোগও প্রশংসিত হচ্ছে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল রহমান অলির উদ্যোগটিও এক্ষেত্রে আলোচিত। বাংলাদেশ শিগগির নিজস্ব রকেট উৎক্ষেপণের কথা ভাবছে। সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বলা হচ্ছে, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী দেশগুলো নব-উদ্যমে মহাকাশ বিজয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই প্রতিযোগিতায় যে সকল দেশ পিছিয়ে থাকবে, তাদের বিজয়ী দেশগুলোর কাছে দাসত্ব বরণ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ফলে পিছিয়ে থাকতে চায় না বাংলাদেশও।
যেভাবে কাজ করতে চান আজাদুল হক
‘আমার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে এক্সপেরিমেন্টাল মডেল রকেট তৈরি ও মহাকাশ বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য বা এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইকোসিস্টেম করে দেওয়া। যাতে আমাদের দেশের এসব শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে প্র্যাক্টিস করতে পারে, ডিজাইন তৈরি করতে পারে। এ ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র করেছে ১৯৫০ সালে। আর আমাদের দেশে ব্যক্তিগত চেষ্টার কথা শোনা যায়। কয়েকজন মিলে এ ধরনের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা যায়। কিন্তু সত্যিকারভাবে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে চাইলে, দক্ষতা বাড়াতে চাইলে এক্ষেত্রে বড় পরিসর দরকার। দুই-চার জন মিলে তা হবে না। দেশে মহাকাশ বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
কথাগুলো বলছিলেন, বাংলাদেশে রকেট তৈরির সেরা উদ্ভাবকদের অন্যতম আজাদুল হক। গত বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে রকেট তৈরির আইডিয়া দিয়ে যে উদ্ভাবকরা রকেট্রি ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-এর সেরা উদ্ভাবক হিসেবে নির্বাচিত হন, তাদের প্রথমজন হচ্ছেন আজাদুল হক। তাকে তার ‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’ আইডিয়ার জন্য ১ কোটি টাকার সিডমানি দেওয়া হয়।
আজাদুল হক একসময় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে ম্যাক্সগ্রুপের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি সপ্তাহেই এ দায়িত্ব শেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএএইউ) সঙ্গে দেশে রকেট্রি ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করার ইচ্ছা আছে তার। আজাদুল হকের পৈতৃক বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ায়।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্কুল বিজ্ঞান মেলার কথা জানি। সংবাদপত্রে খবর পড়ি বিজ্ঞান মেলায় কেউ কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে। কিন্তু ওই আবিষ্কারককে আমরা ইনস্টিটিউশনাল ব্যাকআপ দিতে পারি না। ফলে স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় যে ছেলে বা মেয়েটা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে না। কিন্তু দেশে এখন এ বিষয়ে একটা ইতিবাচক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে এক নম্বরে।’
আজাদুল হক বলেন, ‘একটা রকেট বানানো কঠিন কিছু নয়। আমরা এক হাজার রকেট বানাতে চাই। আমাদের ছেলে-মেয়েরাই এগুলো বানাবে। এগুলো বানানোর জন্য যে মেশিন, প্রযুক্তি দরকার তা যেন আমাদের দেশেই তৈরি হয়। মাঝে মাঝে খবর প্রচার হয়, আমরা ড্রোন বানিয়ে ফেলেছি। আসলে তা নয়। বাইরে থেকে পার্টস এনে এখানে অ্যাসেম্বল করা হয়। যারা তৈরি করে, তারা ড্রোনের কার্বন ফাইবার বাংলাদেশে তৈরি হয়েছেÑ এ দাবি করতে পারবে না। শুধু কার্বন ফাইবার নয়, ডিজাইন থেকে শুরু করে সব কিছু নতুন করে তৈরি করতে হবে। আমরা অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে রকেট বানাতে যাচ্ছি, তার সেল থেকে শুরু করে নজেল পর্যন্ত সবকিছু বাংলাদেশেই তৈরি হবে। আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এই আস্থা তৈরি করতে চাই যে, যদি প্রয়োজন হয় আমরাই বানাতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কমার্শিয়াল রকেটের কথা বলছি না। আমরা বলছি, এক্সপেরিমেন্টাল রকেটের কথা। রকেট সায়েন্সটা বোঝার জন্যই এটা করতে হবে।’ এজন্য একটি জাতীয় গাইডলাইনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
পিছিয়ে থাকলেই দাসত্ব বরণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএএইউ) প্রো-উপাচার্য এয়ার কমডোর এ টি এম হাবিবুর রহমান সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার একটি লেখায় উল্লেখ করেন, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী দেশগুলো নব-উদ্যমে মহাকাশ বিজয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই প্রতিযোগিতায় যে সকল দেশ পিছিয়ে থাকবে, তাদের বিজয়ী দেশগুলোর কাছে দাসত্ব বরণ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। মহাকাশ প্রতিযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে, এখানে সকল দেশের জন্য সমান সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত নতুন দেশ হলেও এরই মধ্যে নিজেকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রমাণ করেছে। রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতির মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টা অনেকটাই সহজতর হবে।
নাহিয়ান আল রহমান অলির উদ্ভাবন
আইসিটি বিভাগের অধীন এটুআই প্রকল্প আয়োজিত প্রথম রকেট্রি চ্যালেঞ্জে ১২৪টি টিমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে ধূমকেতু দল লাভ করে ৫০ লাখ টাকার অনুদান। সেই টাকায় চারটি রকেট বানিয়ে ফেলে বাংলাদেশে প্রথম মহাকাশ গবেষণা উন্নয়ন কোম্পানি ধূমকেতু এক্স। ধূমকেতু-১ লম্বায় ৬ ফুট, প্রস্থে ৩.৫ ইঞ্চি। আর ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ধূমকেতু ৩ ও ৪-এর ডায়ামিটার ৪.৫ ইঞ্চি। এই তথ্য জানিয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ধূমকেতু এক্সের প্রধান নির্বাহী নাহিয়ান আল রহমান অলি।
অলি আরও জানান, গত বছরের ২৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ টাউন হল মাঠে প্রদর্শন করা হয়েছিল ৪৫ কেজি ওজনের রকেট ‘ধূমকেতু এক্স একুশ’। পরিদর্শন শেষে এ উদ্যোগকে চাঁদ ও মঙ্গল জয়ে দামালদের জন্য অনুপ্রেরণা বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের অ্যাডভাইজার আরিফুল হাসান অপু। তার ভাষায়, ‘একটি রকেট লঞ্চিং জাতিকে বিজ্ঞানমুখী করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা যারা স্বপ্ন দেখছে যেকোনো সময় আমরাও চাঁদে যাব, মঙ্গল গ্রহে যাব এবং সেখানে স্পেস এক্সপ্লোরেশন করবÑ আমি মনে করি তাদের জন্য এটি একটি বিশাল অনুপ্রেরণা।’
ছোটবেলা থেকে বিমান ও রকেট আবিষ্কারের নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমানের। সেই স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির পর। গাইবান্ধায় বেড়ে ওঠা এ যুবক সাহস করে স্পেস এক্স হওয়ার স্বপ্নে গড়ে তোলেন ধূমকেতু এক্স স্টার্টআপ। এ কাজে বন্ধুরাও সহায়তা করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত পত্রিকা ধূমকেতুর সঙ্গে মিলিয়ে রকেটগুলোর নাম রাখা হয় ধূমকেতু। সে সময় ২০ জনের টিমকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ বছরের চেষ্টায় অলি তৈরি করেন ধূমকেতু এক্স নামে একটি রকেট। নিজের প্রাইভেট পড়ানোর জমানো টাকা আর মায়ের ব্যাংক হিসাব থেকে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন নাহিয়ান।
এখন দেশেই টেকসই একটি রকেট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেও ধূমকেতু এক্সে যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশি ৩০ জন রকেট গবেষক ও বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ইন্টার্ন। বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট উৎপাদক দেশের কাতারে নিয়ে যেতে গবেষণা করছেন তারা। এর মাধ্যমে ১৯৬৩ সালে প্রতিবেশী ভারত যে কাজটি শুরু করেছিল, ২০২০-এ এসে সে কাজ শুরু করল ধূমকেতু এক্স। এত পরে এসে শুরু করে সাফল্য মিলবে কি? এমন সংশয়ের জবাবে অলি বলেন, ‘এখন টেকনোলজি খুব ফাস্ট। আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তার যে গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত-চীনে রয়েছেন তাদের নিয়ে এজন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। তাই আমাদের ক্যাচআপ করতে বেশি সময় লাগবে না। সরকারি নীতি ও আর্থিক সহযোগিতা পেলে ২০২৬-২৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকেই ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের একটি ভেহিকল টেস্ট করব। সেটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে হবে। নজরুল-১ রকেট ২৬০ কেজি পেলোড নিয়ে লো-অরবিটে যেতে সক্ষম হবে। এভাবেই একদিন আমরা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু-৫ বা ৬ উৎক্ষেপণ করতে পারব।’
এই প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবেডেড সিস্টেম প্রকৌশল প্রধান ইরফান মাহমুদ তুষার, ইউরোপীয় কমিশনের ইরামাস মান্ডাস স্কলারশিপপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, অ্যারোস্পেস স্পেশালিস্ট শাহরুখ খান, ময়মনসিংহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশলী আদিল আরহাম, ফজলে রাব্বি বিন্দু, আশরাফ মিয়া, জান্নাতুল নাইম, পদ্মা স্মার্ট টেকনোলজির তাজমিউল হাসান, পরিবেশ-বিশ্লেষক নাদিম আহমেদ, কেমিক্যাল গ্রাফিক প্রকৌশলী লিয়ান মল্লিক লিহান, এআই অ্যানিমেটর রোহান বিন মিজান, যন্ত্র প্রকৌশলী সারা করিম, তড়িৎ ও ম্যাটেরিয়াল প্রকৌশলী বৃষ্টি পল প্রমুখ।
মহাকাশ গবেষণার অতীত ও বর্তমান
১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকার কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে আবহাওয়াসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য অটোমেটিক পিকচার ট্রান্সমিশন (এপিটি) নামে একটি সংস্থা গঠন করেÑ যা পরবর্তীকালে স্পারসো নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই সংস্থা বর্তমানে বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তবে মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি হলো বাংলাদেশের উদ্যমী তরুণ-তরুণীরা। ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামক বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এই তরুণরাই মহাকাশে পাঠিয়েছিল। বর্তমানে তারা জাতিসংঘের উদ্যোগে নেওয়া নানাবিধ মহাকাশসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত আছেন।
গত বছর জানুয়ারিতে মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং এ-সংক্রান্ত গবেষণা-উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। ওই সমঝোতা স্মারকের আওতায় খসড়া কৌশলপত্র তৈরি, কৌশলপত্রের আলোকে কারিগরি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্পারসোর দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে।
এ ছাড়া মহাকাশ গবেষণার সম্ভাব্য সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। এসব উদ্যোগের সুফল যদি আমরা সঠিকভাবে পেতে চাই, তবে বাংলাদেশকে আরও বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে যার মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম।
গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে হাইব্রিড রকেট ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা চালানো হয়। অ্যামেচার এক্সপেরিমেন্টাল রকেট্রি ঢাকা (এইআরডি) এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) ডা. আনোয়ারুল আবেদীন ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশনের সহযোগিতায় সম্প্রতি এই পরীক্ষা চালানো হয়। ২০২২ সালে দেশে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএএইউ) যৌথ উদ্যোগে রকেট তৈরির আইডিয়া নিয়ে একটি বড় ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। মডেল রকেটের নকশা তৈরি, নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য নিরাপদ ইকোসিস্টেম তৈরির উদ্দেশ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে আসা ১২৪টি উদ্ভাবনী আইডিয়া থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, বুটক্যাম্প, গ্রুমিং এবং টেকনিক্যাল ইভাল্যুয়েশন প্যানেলসহ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী দুটি আইডিয়াকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। এর একটি ছিল আজাদুল হকের ব্রিজ টু বাংলাদেশ ও অন্যটি ছিল নাহিয়ান আল রহমান অলির ধূমকেতু ০.১। গত বছর ১৮ জানুয়ারি এই দুই আইডিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়। সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ।