নিউইয়র্ক ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৪
  • / ৮৫৫ বার পঠিত

ঢাকা: বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আর নেই। গত রোববার (৩০ নভেম্বর) রাত নয়টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। ঘটনার সময় রাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিল্পে দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নিঙরে থাকা গুনী এই শিল্পী ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার পর প্রথম দফায় নেমে গিয়ে আবার কিছু একটা বলার জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন। কিন্তু সেই কথাটি আর বলা হয়নি তার। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় উচাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসবে নেমে আসে রাজ্যের নিরবতা। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানেই শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পালন করা হয় এক মিনিট নিরবতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানিয়েছেন, পড়ে যাওয়ায় তিনি মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি মারাত্মকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার পাশাপাশি তেল ও জল রঙে আবহমান বাংলা ও বাংলার লোকজ উপাদানগুলোকে চিত্রে ফুটিয়ে তোলার জন্য কাইয়ুম চৌধুরী বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীই।
জীবন বৃত্তান্ত: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর ফেনী জেলায়। ক্ষয়িঞ্চু জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি যেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল। তার পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী দেশের অনেক এলাকা ঘুরে ফিরেছেন। গ্রামের মক্তবে তার শিক্ষার হাতেখড়ি। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল কুমিল্লায় কাটিয়ে চলে যান নড়াইলে। চিত্রা পাড়ের এই শহরে কাটে তাঁর তিনটি বছর। সেখান থেকে সন্দ্বীপ এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুলে ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে চলে যান ফেনীতে। ভর্তি হন ফেনী হাই স্কুলে, সেখানে থেকে যান ফরিদপুরে। ফরিদপুর থেকে ময়মনসিংহ এসে ১৯৪৯ সালে সিটি কলোজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন ছিলেন তার শিক্ষক। সদ্য প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কাইয়ুম চৌধুরীও ছিলেন তাদের একজন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণের কাজ করেছেন । কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬১ সালে রেলওয়ের টাইম টেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর তিনি এতে যোগ দেন অধ্যাপক হিসেবে। এখান থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত কয়েকটি নোটেরও অলঙ্করণ করেছেন।  তিনি ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাহেরা খানমও ছিলেন আর্ট কলেজের প্রথম সময়কার শিক্ষার্থী। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজারভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। নিজের শিল্পকর্মের জন্য ১৯৮৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভুষিত হন। ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন । চলতি বছর গুনী এই শিল্পী শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছেন। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আর নেই

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৪

ঢাকা: বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আর নেই। গত রোববার (৩০ নভেম্বর) রাত নয়টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। ঘটনার সময় রাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিল্পে দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে নিঙরে থাকা গুনী এই শিল্পী ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার পর প্রথম দফায় নেমে গিয়ে আবার কিছু একটা বলার জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন। কিন্তু সেই কথাটি আর বলা হয়নি তার। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় উচাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসবে নেমে আসে রাজ্যের নিরবতা। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানেই শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পালন করা হয় এক মিনিট নিরবতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানিয়েছেন, পড়ে যাওয়ায় তিনি মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি মারাত্মকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার পাশাপাশি তেল ও জল রঙে আবহমান বাংলা ও বাংলার লোকজ উপাদানগুলোকে চিত্রে ফুটিয়ে তোলার জন্য কাইয়ুম চৌধুরী বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ আঁকার মধ্য দিয়ে শিল্পে তার পদচারণা শুরু। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’র প্রচ্ছদশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীই।
জীবন বৃত্তান্ত: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর ফেনী জেলায়। ক্ষয়িঞ্চু জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি যেখানে অর্থের জৌলুস না থাকলেও শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল। তার পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক। পরবর্তীতে তিনি সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে কাইয়ুম চৌধুরী দেশের অনেক এলাকা ঘুরে ফিরেছেন। গ্রামের মক্তবে তার শিক্ষার হাতেখড়ি। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। এরপর কিছুকাল কুমিল্লায় কাটিয়ে চলে যান নড়াইলে। চিত্রা পাড়ের এই শহরে কাটে তাঁর তিনটি বছর। সেখান থেকে সন্দ্বীপ এসে ভর্তি হন প্রথমে সন্দ্বীপ হাই স্কুলে ও পরে কারগিল হাই স্কুলে। এরপর নোয়াখালী জেলা সদরে কিছুকাল কাটিয়ে পিতার সঙ্গে চলে যান ফেনীতে। ভর্তি হন ফেনী হাই স্কুলে, সেখানে থেকে যান ফরিদপুরে। ফরিদপুর থেকে ময়মনসিংহ এসে ১৯৪৯ সালে সিটি কলোজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ১৯৪৯ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন ছিলেন তার শিক্ষক। সদ্য প্রতিষ্ঠিত আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কাইয়ুম চৌধুরীও ছিলেন তাদের একজন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাইয়ুম চৌধুরী নানা ধরনের ব্যবহারিক কাজ করেছেন, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আর বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণের কাজ করেছেন । কাইয়ুম চৌধুরী, ছায়াছবি নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন কিছুকাল। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬১ সালে রেলওয়ের টাইম টেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। চারুকলা ইনস্টিটিউট হওয়ার পর তিনি এতে যোগ দেন অধ্যাপক হিসেবে। এখান থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছিলেন। কাইয়ুম চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত কয়েকটি নোটেরও অলঙ্করণ করেছেন।  তিনি ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাহেরা খানমও ছিলেন আর্ট কলেজের প্রথম সময়কার শিক্ষার্থী। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজারভার হাউজে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। নিজের শিল্পকর্মের জন্য ১৯৮৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভুষিত হন। ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন । চলতি বছর গুনী এই শিল্পী শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হয়েছেন। (দৈনিক মানবজমিন)