শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে কেন ধস
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪৫:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৮১ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : চলতি অর্থবছরে শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছে। সবচেয়ে বেশি অবনমন হয়েছে বড় শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে। এটি নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। উৎপাদনের প্রধান উপকরণ গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং বিনিয়োগের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে এই খাতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসেবে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে উৎপাদন খাতে।
যা বলছেন অর্থনীতিবিদরা—
অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থবছরের শুরুতে ডলার সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি সংকট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে দেশের শিল্প খাতকে। পাশাপাশি বৈদেশিক এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। এসব কারণেই জিডিপিতে খাতটির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
এ বিষয়ে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগ আসার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগও কমেছে। বিনিয়োগ কমায় শিল্পের উৎপাদনও কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে শিল্প উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধিতে।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
উৎপাদন খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির এই হার ছিল ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় আড়াই শতাংশ কম। আর ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরে।
উৎপাদন খাতের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবনমন হয়েছে বড় শিল্প উৎপাদন খাতে। এই খাতে অর্থবছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
কুটির শিল্পেও কমেছে প্রবৃদ্ধি—
জিডিপির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বড় শিল্প উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫.৬৮ শতাংশ। সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বড় শিল্পের পাশাপাশি কুটির শিল্পের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুটির শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, আগের অর্থবছরে ছিল ১১ দশমিক ১২ শতাংশ। অর্থবছরের ব্যবধানে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ১১ শতাংশ।
তবে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) প্রবৃদ্ধিতে। বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বড় শিল্পগুলোর প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নামলেও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসএমই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক অর্থবছরের ব্যবধানে এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে ব্যাপক হারে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সে হিসাবে এ খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গিয়েছিল।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব পড়েছে—
অন্যদিকে গ্যাস উৎপাদনে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্যাস খাতে দশমিক ৬১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরো বেশি নেতিবাচক হয়েছে। এ সময় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল। সাধারণ শিল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের। গত অর্থবছর দেশের শিল্প খাত আগের অর্থ বছরের তুলনায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ কম পেয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ উপখাতগুলোয় প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প উৎপাদন খাতে। এতে প্রবৃদ্ধিও কম হয়েছে।
গ্যাসের উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং) কমার পাশাপাশি গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের উত্তোলনও অনেক কমে গেছে। গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য উত্তোলনে গত দুটি অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। গত অর্থবছর এ খাতে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর আগের অর্থবছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
তবে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কয়লা উত্তোলনে। এ খাতে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা প্রবৃদ্ধির সব উপাদানের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কয়লা উত্তোলন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে করেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : ডেইলি-বাংলাদেশ
হককথা/নাছরিন