নিউইয়র্ক ০৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিশ্বে প্রথম কাঠ দিয়ে স্যাটেলাইট তৈরি করল জাপান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৭২ বার পঠিত

এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের রকেটে করে জাপানের এই কাঠের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ছবি: প্রতীকী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহাকাশ দূষণ মোকাবিলায় এক অভিনব উপায় বের করেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে প্রথম কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) তৈরি করেছে দেশটি।

ম্যাগনোলিয়া কাঠের তৈরি লিগনোস্যাট প্রোব নামের স্যাটেলাইটটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট তুলনামূলক স্থিতিশীল ও ফাটল রোধী। চলতি গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের রকেটে করে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং কাঠের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুমিৎমো ফরেস্ট্রি মিলে এই কাঠের স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছেন। কাঠের মতো ক্ষয়যোগ্য উপকরণ বর্তমানে উপগ্রহ নির্মাণে ব্যবহৃত ধাতুগুলোর পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে কি না তা দেখার জন্য তাঁরা এ পরীক্ষা করেন।

জাপানি নভোচারী এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহাকাশ প্রকৌশলী তাকাও দোই সম্প্রতি সতর্ক করে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া বা অন্য কোনো কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় স্যাটেলাইট পুড়ে যায় এবং ক্ষুদ্র অ্যালুমিনা কণা (অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড) তৈরি করে। এ কণাগুলো বহু বছর ধরে ওপরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকবে। অবশেষে, এটি পৃথিবীর পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

এ সমস্যা মোকাবিলা করতে কিয়োটো গবেষকেরা মহাকাশে উৎক্ষেপণের সময়কার তীব্র ঝাঁকি ও পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে দীর্ঘসময় ধরে আবর্তন কতটা সহ্য করতে পারে তা নির্ধারণ করতে কাঠের ধরন মূল্যায়ন করার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করেন। মহাকাশের মতো পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষাগুলো প্রথম পরীক্ষাগারে চালানো হয়েছিল। কাঠের নমুনাগুলোতে ভরের কোনো পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন বা ক্ষতির লক্ষণ দেখা যায়নি।

প্রকল্পের প্রধান কোজি মুরাতা বলেন, ‘কাঠের এই পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের অবাক করে দিয়েছিল।’ পর্যবেক্ষণের পর নমুনাগুলো আইএসএসে পাঠানো হয়। সেখানে এ নমুনাগুলো পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে পাঠানো হয় এবং প্রায় এক বছর পর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এবারও এগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়নি।

মুরাতা এ ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, মহাকাশে কাঠকে পোড়ানোর জন্য কোনো অক্সিজেন নেই এবং কাঠকে পচানোর জন্য কোনো অণুজীবও নেই।

পর্যবেক্ষণের জন্য জাপানি চেরিসহ নানা ধরনের কাঠ পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাগনোলিয়া গাছের কাঠ সবচেয়ে টেকসই প্রমাণিত হয়েছে। কিয়োটোর কাঠের স্যাটেলাইটে তাই এ কাঠটি ব্যবহার করা হয়েছে। মুরাতা বলেন, এই স্যাটেলাইটের ওপর এখন নানা ধরনের পরীক্ষা চালানো হবে, যা থেকে বোঝার চেষ্টা করা হবে এ মহাকাশযানটি কক্ষপথে কেমন টিকে থাকতে পারে।

সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভারকে তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইটটির অন্যতম লক্ষ্য হলো মহাকাশে কাঠের কাঠামোর বিকৃতি পরিমাপ করা। কাঠ একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘূর্ণনের সময় টেকসই এবং স্থিতিশীল থাকে, হঠাৎ ঘূর্ণনের দিক পরিবর্তন হলে এতে ফাটল ধরতে পারে।’

মুরাতা আরও বলেন, কোন মহাকাশযানে করে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি। এই গ্রীষ্মে আইএসএসের সরবরাহ মহাকাশযান অরবিটাল সায়েন্সেস সিগনাসে করে পাঠানো হতে পারে। অথবা আরও কিছু সময় পর স্পেসএক্স ড্রাগন কার্গো রকেটে করেও এটি পাঠানো হতে পারে।

কফি মগের চেয়েও ছোট আকৃতির স্যাটেলাইটটি মহাকাশে অন্তত ছয় মাস থাকবে। এরপর এটিকে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। কক্ষপথে আবর্তনের সময় যদি লিগনোস্যাটের কার্যক্রম ভালো হয়, তবে আরও কাঠের স্যাটেলাইট তৈরির দুয়ার খুলে যাবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে প্রতি বছর ২ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এ স্যাটেলাইটগুলো পুনরায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় পুড়ে যাওয়ার কারণে যে পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম ওপরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে জমা হবে তা শিগগিরই বড় ধরনের পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্যাটেলাইটগুলো বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের ফলে অ্যালুমিনিয়াম কণা ওজোন স্তরের মারাত্মক ক্ষয় ঘটাতে পারে। এ ওজোন স্তর পৃথিবীকে সূর্যের অতিবেগুনি বিকিরণ থেকে রক্ষা করে এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সূর্যালোকের মাটিতে পৌঁছানোর পরিমাণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তবে লিগনোস্যাটের মতো কাঠের তৈরি স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হবে না। মিশন শেষে বায়ুমণ্ডলে আবার প্রবেশের সময় এটি পুড়ে যে ছাই তৈরি হবে সেটি মাটিতে দ্রুতই মিশে যাবে।

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিশ্বে প্রথম কাঠ দিয়ে স্যাটেলাইট তৈরি করল জাপান

প্রকাশের সময় : ০৬:৪০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহাকাশ দূষণ মোকাবিলায় এক অভিনব উপায় বের করেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে প্রথম কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) তৈরি করেছে দেশটি।

ম্যাগনোলিয়া কাঠের তৈরি লিগনোস্যাট প্রোব নামের স্যাটেলাইটটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট তুলনামূলক স্থিতিশীল ও ফাটল রোধী। চলতি গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের রকেটে করে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং কাঠের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সুমিৎমো ফরেস্ট্রি মিলে এই কাঠের স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছেন। কাঠের মতো ক্ষয়যোগ্য উপকরণ বর্তমানে উপগ্রহ নির্মাণে ব্যবহৃত ধাতুগুলোর পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে কি না তা দেখার জন্য তাঁরা এ পরীক্ষা করেন।

জাপানি নভোচারী এবং কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহাকাশ প্রকৌশলী তাকাও দোই সম্প্রতি সতর্ক করে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া বা অন্য কোনো কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় স্যাটেলাইট পুড়ে যায় এবং ক্ষুদ্র অ্যালুমিনা কণা (অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড) তৈরি করে। এ কণাগুলো বহু বছর ধরে ওপরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকবে। অবশেষে, এটি পৃথিবীর পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।’

এ সমস্যা মোকাবিলা করতে কিয়োটো গবেষকেরা মহাকাশে উৎক্ষেপণের সময়কার তীব্র ঝাঁকি ও পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে দীর্ঘসময় ধরে আবর্তন কতটা সহ্য করতে পারে তা নির্ধারণ করতে কাঠের ধরন মূল্যায়ন করার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করেন। মহাকাশের মতো পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষাগুলো প্রথম পরীক্ষাগারে চালানো হয়েছিল। কাঠের নমুনাগুলোতে ভরের কোনো পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন বা ক্ষতির লক্ষণ দেখা যায়নি।

প্রকল্পের প্রধান কোজি মুরাতা বলেন, ‘কাঠের এই পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের অবাক করে দিয়েছিল।’ পর্যবেক্ষণের পর নমুনাগুলো আইএসএসে পাঠানো হয়। সেখানে এ নমুনাগুলো পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে পাঠানো হয় এবং প্রায় এক বছর পর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এবারও এগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়নি।

মুরাতা এ ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, মহাকাশে কাঠকে পোড়ানোর জন্য কোনো অক্সিজেন নেই এবং কাঠকে পচানোর জন্য কোনো অণুজীবও নেই।

পর্যবেক্ষণের জন্য জাপানি চেরিসহ নানা ধরনের কাঠ পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাগনোলিয়া গাছের কাঠ সবচেয়ে টেকসই প্রমাণিত হয়েছে। কিয়োটোর কাঠের স্যাটেলাইটে তাই এ কাঠটি ব্যবহার করা হয়েছে। মুরাতা বলেন, এই স্যাটেলাইটের ওপর এখন নানা ধরনের পরীক্ষা চালানো হবে, যা থেকে বোঝার চেষ্টা করা হবে এ মহাকাশযানটি কক্ষপথে কেমন টিকে থাকতে পারে।

সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভারকে তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইটটির অন্যতম লক্ষ্য হলো মহাকাশে কাঠের কাঠামোর বিকৃতি পরিমাপ করা। কাঠ একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘূর্ণনের সময় টেকসই এবং স্থিতিশীল থাকে, হঠাৎ ঘূর্ণনের দিক পরিবর্তন হলে এতে ফাটল ধরতে পারে।’

মুরাতা আরও বলেন, কোন মহাকাশযানে করে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি। এই গ্রীষ্মে আইএসএসের সরবরাহ মহাকাশযান অরবিটাল সায়েন্সেস সিগনাসে করে পাঠানো হতে পারে। অথবা আরও কিছু সময় পর স্পেসএক্স ড্রাগন কার্গো রকেটে করেও এটি পাঠানো হতে পারে।

কফি মগের চেয়েও ছোট আকৃতির স্যাটেলাইটটি মহাকাশে অন্তত ছয় মাস থাকবে। এরপর এটিকে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। কক্ষপথে আবর্তনের সময় যদি লিগনোস্যাটের কার্যক্রম ভালো হয়, তবে আরও কাঠের স্যাটেলাইট তৈরির দুয়ার খুলে যাবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে প্রতি বছর ২ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এ স্যাটেলাইটগুলো পুনরায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় পুড়ে যাওয়ার কারণে যে পরিমাণে অ্যালুমিনিয়াম ওপরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে জমা হবে তা শিগগিরই বড় ধরনের পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সম্প্রতি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্যাটেলাইটগুলো বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের ফলে অ্যালুমিনিয়াম কণা ওজোন স্তরের মারাত্মক ক্ষয় ঘটাতে পারে। এ ওজোন স্তর পৃথিবীকে সূর্যের অতিবেগুনি বিকিরণ থেকে রক্ষা করে এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সূর্যালোকের মাটিতে পৌঁছানোর পরিমাণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তবে লিগনোস্যাটের মতো কাঠের তৈরি স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হবে না। মিশন শেষে বায়ুমণ্ডলে আবার প্রবেশের সময় এটি পুড়ে যে ছাই তৈরি হবে সেটি মাটিতে দ্রুতই মিশে যাবে।

হককথা/নাছরিন