বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশের মুকুট হারালো জাপান
- প্রকাশের সময় : ০২:৪৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১১২ বার পঠিত
একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ ছিল জাপান, এক দশক আগে সে স্থানটি হারায় চীনের কাছে। এবার মন্দার কবলে পড়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশের মুকুটও হারালো। আর সেই স্থান দখল করে নিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ জার্মানি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, দেশটির মুদ্রা ইয়েনের দরপতন, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে দেশটির অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে এসেছে। এক ধাপ পিছিয়ে এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জাপান। ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি আসে ১.৯ শতাংশ। তবে গত বছরের শেষ দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়।
ফলে দেশটি কৌশলগত মন্দায় পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই প্রান্তিকেও অর্থনীতি সংকুচিত হবে। সর্বশেষ হিসাবে ডলারে দেশটির জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৪.২ ট্রিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে জার্মানির জিডিপি বেড়ে হয়েছে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। দুই বছর ধরে ডলারের বিপরীতে ব্যাপক দরপতন হয়েছে মুদ্রা ইয়েনের। এ সময়ে জাপানি এই মুদ্রার দর কমে এক-পঞ্চমাংশ। শুধু ২০২৩ সালেই ডলারের বিপরীতে দর হারায় ৭ শতাংশ। জার্মানিও অবশ্য খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। বয়স্ক জনসংখ্যার বিপুল চাপে থাকার পাশাপাশি দেশটি রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরে দেশটি গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিলে জার্মানি জ্বালানি স্বল্পতায় পড়ে, এতে জ্বালানির দাম বেড়ে যায় এবং শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে জার্মানির মন্দায় পড়ার শঙ্কায় ছিল, অবশেষে তা কাটিয়ে উঠেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শেষ প্রান্তিকে হঠাৎই মন্দার কবলে পড়ে জাপান। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের চাহিদা, জাপানের অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় কমে যাওয়া এবং টয়োটা মোটর করপোরেশনে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চলতি প্রান্তিকেও জাপানের অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে। এসব দেখে মনে হচ্ছে, জাপানের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জিং হবে।
দাই-চাই লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী অর্থনীতিবিদ ইওসিকি সিনকে রয়টার্সকে বলেন, ‘যে বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য তা হলো, ভোগব্যয় ও পুঁজি বিনিয়োগ কমে যাওয়া। এই দুটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার মূল ভিত্তি। এই কারণে এ দুটি সূচকের নিম্নগামী হওয়া ভালো লক্ষণ নয়।’ ইওসিকি সিনকে আরো বলেন, ‘সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে গতির অভাব দেখা যাবে; প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিগুলো শক্তি হারাবে।’
শেষ অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে জাপানের মোট দেশজ উৎপাদন ০.৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে অর্থনীতির এ চিত্র দেখা গেছে। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি ৩.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়, যদিও পূর্বাভাস ছিল যে প্রবৃদ্ধি হবে ১.৪ শতাংশ।
অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুসারে, টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকোচন হলে বলা যায়, কৌশলগত মন্দায় পড়েছে। অনেক বিশ্লেষক এখনো আশা করেন, জাপান চলতি বছর বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এ সপ্তাহের দুর্বল পরিসংখ্যান দেখে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে ক্রমবর্ধমান মজুরির কারণে মানুষের ভোগব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও দীর্ঘ মেয়াদে ২ শতাংশের ঘরে থাকবে।
মুডিস অ্যানালিটিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ স্টিফেন অ্যাংগ্রিক রয়টার্সকে বলেছেন, পরপর দুই মেয়াদে অর্থনৈতিক সংকোচন হওয়া এবং টানা তিন প্রান্তিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া ভালো খবর নয়। এমনকি পরিসংখ্যান সংশোধনের পর চূড়ান্ত সংখ্যায় পরিবর্তন এলেও বিষয়টি ভালো নয়। উন্নত অর্থনীতিগুলোর মধ্যে জাপানি মুদ্রা ইয়েন অনেক দুর্বল। এই দুর্বলতার প্রধান কারণ ছিল জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল মুদ্রানীতি। ব্যাংক অব জাপান একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যারা এখনো স্বল্পমেয়াদি সুদহার নেতিবাচক রেখেছে। প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া দিতেই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ফেডারেল রিজার্ভ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সুদহার হ্রাস শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কঠোর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এপ্রিল মাসের মধ্যে তারা নেতিবাচক সুদহারের ধারা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও তারা নিজে থেকে দিনক্ষণ জানায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, মন্দা কাটিয়ে উঠলেও জাপানের প্রবৃদ্ধির পালে তেমন একটা হাওয়া লাগবে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, জাপানের গার্হস্থ্য সঞ্চয়ের হার নেতিবাচক। ফোর্বস ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান এখন জাপানের পর অর্থাৎ পঞ্চম। এরপর আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল ও কানাডা। সূত্র : রয়টার্স