‘ক্ষমতায় থাকতে বারবার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে আ. লীগ’
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৫:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৩৯ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘শুধু ক্ষমতায় থাকতে বারবার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি এমন অসহনীয় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক, কূটনীতিকসহ সকল খাতে বিপর্যয় হবে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।’
আজ বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জনগণের দৃষ্টি ভঙ্গি অন্যদিকে সরাতে নানা সময় যৌথভাবে অপচেষ্টা চালিয়েছে সরকার। মিয়ানমার সেনা সদস্যদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া নতুন কোনো ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি যে প্রহসনমূলক ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার উদ্দেশ্য জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্খার প্রতিফলন ছিল না। বরং নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা, যার উদ্দেশ্য অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোট ডাকাতির অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করে তারই ধারাবাহিকতায় ডামি প্রার্থী, ডামি দল, ডামি ভোটার ও ডামি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশব্যাপী নজিরবিহীন হুমকি-ভীতি উপেক্ষা করে, ভাগ-বাঁটোয়ারার নির্বাচনে, শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোটার উপস্থিতি একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ, তথা ১২ কোটি ভোটারের প্রায় সকলের এই ঐক্য মূলত, জনগণের আদালতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিচার। স্বাধীনতাকামী জনগণ সমস্বরে-প্রবলভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও ৬২টি গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য গণমানুষের ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায়ের আকাঙ্খা পূরণের লক্ষে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মানুষের কাছে যাওয়া, মানুষকে সম্পৃক্ত করা, জনমত সৃষ্টি করা, গণতন্ত্রহীনতার যে পরিস্থিতি সেটি থেকে উত্তরণের জন্য শেখ হাসিনার অধীনে প্রহসনের ভোট বর্জন করা। বিএনপির আবেদনে সাড়া দিয়ে, নির্বাচনকে বর্জন ও ফলাফলকে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, জনগণ প্রমাণ করেছে, বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান গণআকাঙ্খারই প্রতিফলন। বিএনপির সঙ্গে একাত্র হয়ে গণমানুষের এই নীরব প্রতিবাদ, এই স্বতঃসৃফুর্ত সমর্থন, বস্তুত বিএনপির রাজনীতির সফলতা তথা বিজয়ের বহিপ্রকাশ।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে, বিএনপির মতো আর কোন রাজনৈতিক দল কি আছে, যার ৫০ লক্ষেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে? কোন অপরাধে, আমাদের ২ হাজার ৭০০ এরও বেশি নেতা-কর্মীকে শেখ হাসিনা ও তার অনুগত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা করেছে? কেন প্রায় ৭০০ জন নিরপরাধ মানুষকে গুম করেছে? কিসের ভিত্তিতে, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাকস্বাধীনতা হরণ করে, একের পর এক সাজানো মামলার পাতানো রায় দেওয়া হচ্ছে? বানরের পিঠা ভাগের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে কেন ফ্যাসিস্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করেছে? এই সময়ে, বিএনপির রাজনীতি করার অপরাধে কেন ১১ জন কর্মীকে কারাগারে হত্যা করেছে? এই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত, দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দল হিসেবে, গণতন্ত্রের পক্ষের প্রধান শক্তি হিসেবে, বিএনপির আত্মত্যাগ, তথা সার্থকতা।’
চলমান আন্দোলন থেকে বিএনপি পিছু হটেছে কিনা জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘না। আমরা চলমান আন্দোলনে আছি। আন্দোলনের গতি একেক সময় একেক দিকে রূপ নেয়। অপেক্ষা করেন, নিশ্চয়ই আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা আপনারা দেখতে পাবেন।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হারুনুর রশিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সিরাজুল ইসলাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, তাহসিনা রুশদির লুনা প্রমুখ। সূত্র : আমাদের সময়
হককথা/নাছরিন