ভোটারের স্বাক্ষর জমার বিধান বাতিলের উদ্যোগ
- প্রকাশের সময় : ০৪:১৫:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধামালা’য় সংশোধনী আনতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়।
খসড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার বিদ্যমান বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই সুযোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে ভুঁইফোঁড় প্রার্থীর সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সেজন্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একইভাবে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধানেও কড়াকড়ি আরোপের চিন্তা রয়েছে ইসির। নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোট পড়বে তার ১৬.৬৬ শতাংশ ভোট না পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রদত্ত ভোটের ১২.৫ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালাতেও ব্যাপক সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রচারের সুযোগ দেওয়া এবং নির্বাচনি প্রচারের পোস্টারে পলিথিনের আবরণ বা প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার বিধিমালার আওতায় আনা হচ্ছে।
জনসভা ও মিছিল আইনি বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে মাইক ব্যবহারে শব্দের মানমাত্রাও বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়াতে। এতে নির্বাচনি প্রচারে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার ব্যবহারের সুযোগ আবারও ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে এসব সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ২৭তম সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধনীর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বাধীন ‘আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি’র বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় এসব সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সুপারিশ কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠাবে। নির্বাচন কমিশনের গতকালের সভাতে এবার উপজেলা পরিষদগুলোতে চার ধাপে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে এ চার ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। প্রতি ধাপে শতাধিক উপজেলায় ভোট হবে। যেসব উপজেলার মেয়াদ আগে শেষ হবে সেগুলোতে আগে ভোট হবে-এই নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায় কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব রয়েছে। ওইসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে আইন সংস্কার কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশ কমিশন সভায় তোলা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন সভায় সিদ্ধান্তের আগে বিধিমালা দুটির সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ দুটি বিধিমালা সংশোধনের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। এসআরও জারি করে এসব সংশোধনী করা যাবে। সংসদ অধিবেশনে পাশ করার প্রয়োজন হবে না।
নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন : ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ার্যান পদে ভোট হওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬ সালে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন’ করা হয়। তখন থেকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়।
এই স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের কারণে অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন না। আবার ওই তালিকার গরমিল, স্বাক্ষরকারীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে তা অস্বীকার করানোসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রার্থিতা বাতিলের অনেক নজির রয়েছে। একই কারণে সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ দিতে বিধিমালা সংশোধন করতে যাচ্ছে। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার বিধি ১৫ এ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে। এর যৌক্তিকতা হিসাবে বলা হয়েছে, প্রার্থীর সমর্থনে ২৫০ জনের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার ফলে ওইসব ভোটারের নাম ভোটের আগেই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় সংসদের আদলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কিছু বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন বিধিমালার ৮০ ক বিধিতে নির্বাচনি দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভীতি ও বাধা দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। জাতীয় সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তার হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে বিধিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। নির্বাচন বিধিমালায় আরও যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শুধু অনলাইন পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচনি ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা এবং নির্বাচন প্রচার মনিটরিংয়ে কমিটি গঠন করা।
রঙিন পোস্টার-ব্যানারে ফিরতে চায় ইসি : জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালাতেও বড় ধরনের সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পোস্টারে পলিথিনের আবরণ এবং প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে। নির্বাচনে শব্দদূষণ কমানোর লক্ষ্যে মাইকের সাউন্ড ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখার বিধান যুক্তের জন্য বলা হয়েছে। এ দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া প্রায় ১৫ বছর পর উপজেলা নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের বিষয়টি এবার বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রচারণা মনিটরিংয়ে বেশকিছু নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। এছাড়া আচরণ বিধিমালায় নির্বাচন প্রচার মনিটরিং করতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবে। সূত্র : যুগান্তর
হককথা/নাছরিন