অর্থ উদ্ধারে এখনও অগ্রগতি নেই
- প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চুরির আট বছর পূর্ণ হয়েছে। চুরির বছরই স্বেচ্ছায় সামান্য অংশ ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলছে। মামলা পরিচালনায় আইনজীবী ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের ফি বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে। তবে অর্থ ফেরত বা চলমান মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের প্রস্তাবেও সাড়া নেই ফিলিপাইনের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফিলিপাইন থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত না পেয়ে পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে সমঝোতায় অর্থ আদায়ের একটি রায় দেন দেশটির আদালত। সমঝোতার জন্য ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা দেশটিতে চলমান বিভিন্ন মামলায় তিনটি আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে সমঝোতায় সাড়া মেলেনি। আবার ফিলিপাইনের আদালত থেকে কোনো রায় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আদৌ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে, নাকি মামলা পরিচালনায় বছরের পর বছর শুধু অর্থ খরচ করতে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় নেওয়া ২ কোটি ডলার ওই সময় ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে নেওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করে। শুরুর দিকে দেশটির জোর তৎপরতা ছিল। পরে তা থেমে গেছে। এখন পর্যন্ত একটি মামলায়ও রায় হয়নি। পরে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত এবং দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালের মার্চে এই কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাদের এখতিয়ারাধীন নয়। ওই বছরের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।
মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর বিবাদীদের নোটিশ দেয়। এরপর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ ভি টান, রাউল টান, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে এবং কিম অং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করে। তাদের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল আংশিক রায় হয়। ১৩ জানুয়ারি ছয় বিবাদীর ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলা না চালানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্য বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশ দেন স্টেট কোর্ট। তবে সমঝোতায় সাড়া দেয়নি ফিলিপাইন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও পরে কোনো শুনানি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে অর্থ ফেরত পাওয়া অনেক জটিল। যে কারণে শুরু থেকেই সমঝোতার মাধ্যমে চেষ্টা ছিল। তবে তাতে ফিলিপাইনের দিক থেকে সাড়া মিলছে না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ। ফলে বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পাওয়ায় অনিশ্চয়তা বাড়ছে। সূত্র : সমকাল।