নিউইয়র্ক ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রাশিয়ার অস্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৬১ বার পঠিত

হত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদ ও খুচরা সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার সামর্থ্য কমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে চীনের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ হওয়া ঠেকাতেও সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে দেশটি। খবর রয়টার্স।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশটি এখন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে। রাশিয়ার প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনকে মোকাবেলা করতে চাইছে তারা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দুই দশকে ভারতের ক্রয়কৃত অস্ত্রের ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে রাশিয়া। যার আনুমানিক মূল্য ৬ হাজার কোটি ডলার।

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নন্দন উন্নিকৃষ্ণান বলেন, ‘‌ভারত শিগগিরই রাশিয়ার সঙ্গে কোনো বড় সামরিক চুক্তি করছে না। ওয়াশিংটনের জন্য এটি একটি রেড লাইন।’ ভারত সরকারের চারটি সূত্র জানিয়েছে, মস্কোর একাধিক প্রস্তাবের পরও এমন অবস্থান নিচ্ছে দিল্লি। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক কামভ হেলিকপ্টার, সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান যৌথভাবে ভারতে উৎপাদন।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া প্রকাশ্যে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমা প্রযুক্তিতে দেশে উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছেন। মোদির ‘মেক ইন ভারত’ প্রকল্পের জন্য এমন উদ্যোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার পথে হাঁটছেন তিনি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে তারা।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় জেনারেল ইলেকট্রিক ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য দেশটিতে ইঞ্জিন তৈরি করবে। কোনো মিত্র দেশের বাইরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রথম চুক্তি। এছাড়া আরো বেশকিছু খাতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও যৌথ উৎপাদন আলোচনায় রয়েছে। চীনের সঙ্গে বিরোধও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক এবং ২০২২ সাল থেকে বৃহত্তম তেলের ক্রেতা ভারতকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এমন বাণিজ্য থমকে গেলে বেইজিংয়ের আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে মস্কো। ভারতের পর চীনের সঙ্গে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাশিয়ার।

রাষ্ট্র পরিচালিত মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ স্বস্তি রাও বলেন, ‘‌ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠছে রাশিয়া পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে কিনা। এটি অস্ত্র ক্রয়ে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করছে।’

সূত্রগুলো বলেছে, ভারত নিজের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বহরের জন্য ফরাসি যুদ্ধবিমানে নজর দিচ্ছে। একই সঙ্গে ফরাসি, জার্মানি বা স্পেনের প্রযুক্তিতে সাবমেরিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ও ফরাসি ইঞ্জিন দিয়ে যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চাইছে। স্বস্তি রাও বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারতের একাধিক পক্ষের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত থাকবে। এদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ২৭ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে আরো প্রতিরক্ষা চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ওই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মস্কো সফরে ছিলেন।

ল্যাভরভ বলেছিলেন, যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনসহ সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারতের দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। জয়শঙ্কর বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়। দ্বিমুখী বাণিজ্যে রেকর্ড হয়েছে। জ্বালানি, সার ও কয়লার সংশ্লিষ্ট চুক্তির কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন। সূত্র : বণিক বার্তা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রাশিয়ার অস্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত

প্রকাশের সময় : ১২:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪

হত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদ ও খুচরা সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার সামর্থ্য কমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে চীনের সঙ্গে মস্কোর ঘনিষ্ঠ হওয়া ঠেকাতেও সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে দেশটি। খবর রয়টার্স।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশটি এখন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে। রাশিয়ার প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনকে মোকাবেলা করতে চাইছে তারা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দুই দশকে ভারতের ক্রয়কৃত অস্ত্রের ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে রাশিয়া। যার আনুমানিক মূল্য ৬ হাজার কোটি ডলার।

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নন্দন উন্নিকৃষ্ণান বলেন, ‘‌ভারত শিগগিরই রাশিয়ার সঙ্গে কোনো বড় সামরিক চুক্তি করছে না। ওয়াশিংটনের জন্য এটি একটি রেড লাইন।’ ভারত সরকারের চারটি সূত্র জানিয়েছে, মস্কোর একাধিক প্রস্তাবের পরও এমন অবস্থান নিচ্ছে দিল্লি। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক কামভ হেলিকপ্টার, সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান যৌথভাবে ভারতে উৎপাদন।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া প্রকাশ্যে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমা প্রযুক্তিতে দেশে উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছেন। মোদির ‘মেক ইন ভারত’ প্রকল্পের জন্য এমন উদ্যোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার পথে হাঁটছেন তিনি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে তারা।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় জেনারেল ইলেকট্রিক ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য দেশটিতে ইঞ্জিন তৈরি করবে। কোনো মিত্র দেশের বাইরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রথম চুক্তি। এছাড়া আরো বেশকিছু খাতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও যৌথ উৎপাদন আলোচনায় রয়েছে। চীনের সঙ্গে বিরোধও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক এবং ২০২২ সাল থেকে বৃহত্তম তেলের ক্রেতা ভারতকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এমন বাণিজ্য থমকে গেলে বেইজিংয়ের আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে মস্কো। ভারতের পর চীনের সঙ্গে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাশিয়ার।

রাষ্ট্র পরিচালিত মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ স্বস্তি রাও বলেন, ‘‌ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠছে রাশিয়া পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে কিনা। এটি অস্ত্র ক্রয়ে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করছে।’

সূত্রগুলো বলেছে, ভারত নিজের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বহরের জন্য ফরাসি যুদ্ধবিমানে নজর দিচ্ছে। একই সঙ্গে ফরাসি, জার্মানি বা স্পেনের প্রযুক্তিতে সাবমেরিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ও ফরাসি ইঞ্জিন দিয়ে যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চাইছে। স্বস্তি রাও বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারতের একাধিক পক্ষের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত থাকবে। এদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ২৭ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে আরো প্রতিরক্ষা চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ওই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মস্কো সফরে ছিলেন।

ল্যাভরভ বলেছিলেন, যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনসহ সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারতের দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। জয়শঙ্কর বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়। দ্বিমুখী বাণিজ্যে রেকর্ড হয়েছে। জ্বালানি, সার ও কয়লার সংশ্লিষ্ট চুক্তির কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন। সূত্র : বণিক বার্তা।