নিউইয়র্ক ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এত মূল্যের বিনিময়ে হামাস কী পেল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৯৯ বার পঠিত

ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলা হামাসকে শক্তিশালী করেছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  গত বছর ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তারা এক হাজার ২শ লোককে হত্যা ও শতাধিক ইসরায়েলি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। বৈশ্বিক সব গোয়েন্দাকে ফাঁকি দিয়ে তারা যে এত বড় হামলা চালাবে সেটা কেউ ভাবতে পারেনি। এর জবাব ইসরাইল যেভাবে দিয়েছে তাতে কোনো মানবতার লেশমাত্র ছিল না। গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পুরো এলাকাজুড়ে যে রক্তের বন্যা সেখানে বয়ে গেছে তা বর্ণনার অতীত। প্রশ্ন হলো, হামাস এ থেকে কী পেল?

তিনটি দৃষ্টিকোণে বিষয়টি দেখা যেতে পারে। প্রথমত এর মধ্য দিয়ে তারা ইসরায়েলিদের নিরাপত্তাবোধ কেড়ে নিয়েছে। ইসরায়েল এত দিন তার জনগণকে বলেছে যে, সেদেশের ভেতর পূর্ণমাত্রার হামলা চালানোর ক্ষমতা হামাসের নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনা যে আতঙ্ক তৈরি করেছে তা ভুলতে অনেক সময় লাগবে। আগে হামাস সময় সময় রকেট ছুড়ত, ইসরায়েল সেগুলো আটকে দিত। হামাস নিয়ে তারা তেমন মাথা ঘামাত না। কয়েক বছর পর পর তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হতো। মিশরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হতো। ব্যাপারটা রুটিন ঘটনা হয়ে পড়েছিল। উভয় তরফে একে ‘স্ট্যাটাস কিউ’ হিসেবে মেনেও নিয়েছিল। হামাসের দিক থেকে এটা স্ট্যাটাস কিউ নয়, বরং ইসরায়েলের দখলদারত্ব দীর্ঘায়িত করারই নামান্তর।

দ্বিতীয়ত ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলা হামাসকে শক্তিশালী করেছে। ফিলিস্তিন ইস্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আবার জায়গা করে নিয়েছে। ইসরায়েল সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে যেভাবে হত্যা করেছে বা এখনো করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। দেশটিকে আগ্রাসী প্রমাণ করেছে হামাস। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইসরায়েলের। আঞ্চলিক পরিস্থিতি অশান্ত হতে শুরু করেছে। লোহিত সাগর থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়েছে এর উত্তাপ। পরিস্থিতি যেন আয়ত্তের বাইরে না যায় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে কদিন পরপরই ওই অঞ্চল সফরে যাচ্ছেন। নির্বাচনের বছর হওয়ায় বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে পড়েছে অস্বস্তিতে। পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো সাফল্য না পেলে রিপাবলিকান প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বাইডেন যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

তৃতীয়ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও ফাতাহ নেতৃত্বাধীন পিএ (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ) তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ফলে ২০০৭ সালে নেতৃত্ব ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। হামাস গাজা ও ফাতাহ পশ্চিম তীরের দায়িত্ব বোঝে। ওই বছর থেকে গাজার ওপর স্থল, বিমান ও সমুদ্র পথে অবরোধ বসায় ইসরায়েল যা এখনো চলছে। ফাতাহর সঙ্গে সমঝোতা থাকায় পশ্চিম তীরে অবরোধ দেয়নি ইসরায়েল। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে হামাস একটি প্রজন্ম তৈরি করেছে যাদের মন থেকে ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ কখনো প্রশমিত হবে না। গত ১৬ বছরে গাজায় চারটি যুদ্ধ হয়েছে। এসব যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গ্রুপটিই মুখ্য প্রতিরোধকারীর ভূমিকা পালন করেছে, হামাস গতানুগতিক কিছু রকেট ছোড়া ছাড়া বিশেষ কিছু করেনি। কারণ প্রশাসনিক দায়িত্ব হাতে নিয়ে আক্রমণ করা তদের পক্ষে কঠিন ছিল। হামাসের ভূমিকা হয়ে পড়েছিল পুলিশের মতো। বর্তমান লড়াই হামাসের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। ফিলিস্তিনি ও আরবদের অনেকের কাছেও তারা জনপ্রিয় হয়েছে। একই সঙ্গে পিএর জনপ্রিয়তা আরও কমিয়ে দিয়েছে। অবশ্য দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্য পিএর জনপ্রিয়তা আগে থেকেই তলানিতে ছিল। বর্তমান যুদ্ধ পশ্চিমা গণমাধ্যম ‘গাজা যুদ্ধ বা হামাস-ইসরায়েল’ যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করছে যা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। পশ্চিম তীর, জেনিন ও অন্যান্য ছিটমহলের ফিলিস্তিনিরাও ইসরায়েলের হামলার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। হামাস ইস্যুটিকে আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। হামাস যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। যেমন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি। যদিও হামাসের পক্ষে কেউ কিছু বলছে না, তবে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে ডেমোক্র্যাটদের অনেকে বলেছেন।

এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টা থমকে গেছে। এটি হলে তা অন্য আরব দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতো। কিন্তু এখন রিয়াদকে তেল আবিবের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলতে হচ্ছে। যুদ্ধ না হলেও সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য অনেক মূল্য গুনতে হতো রিয়াদকে। কিন্তু এখন এর পরিমাণটি ক্রমেই বড় হচ্ছে। সবশেষ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেই প্রস্তাবে সোজা না বলে দিয়েছেন।

হামাসের প্রতিপক্ষ শুধু ইসরায়েল নয়। ফিলিস্তিনি জনগণের একাংশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ তাদের বৈরী। তারা আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। পশ্চিমা সহায়তা ফাতাহর হাত দিয়ে ফিলিস্তিনিরা পেয়ে থাকে। ফাতাহর নেতা মাহমুদ আব্বাস পিএর প্রেসিডেন্ট। এটি গঠিত হয় ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তি অনুসারে। তখন এর প্রধান ছিলেন ইয়াসির আরাফাত। উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিরা যেন সশস্ত্র লড়াই সংগ্রাম ছেড়ে দেয়। এভাবে ফাতাহ বা পিএ পুরোপুরি ইসরায়েলনির্ভর হয়ে পড়ে। ১৯৮৭ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের উদ্যোগে হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের এই অর্জনগুলো কিন্তু বিনামূল্যে আসেনি। এর জন্য ফিলিস্তিনিদের গুনতে হয়েছে বিশাল মূল্য। হয়তো আরও অনেক দিন সেটা করে যেতে হবে। ১৫ জানুয়ারি এই যুদ্ধের ১০০ দিন পূর্ণ হয়। এ সময়ে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। হামাসের কমান্ডারসহ প্রায় ৭ হাজার নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। গাজার ঘরবাড়ির ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এত বড় মূল্য গুনতে হয়েছে যে এর ফলে হামাসের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে অনেক ফিলিস্তিনি। বিষয়টি তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। হামলা ছাড়া কোনো বিকল্প কি ছিল না, প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই আসবে। গাজা পুনর্গঠনে বহির্বিশ্বের সহায়তা কতটুকু পাওয়া যাবে সেটাও একটা প্রশ্ন। কারণ স্থিতিশীলতা না এলে কোনো দেশই বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবে না। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এত মূল্যের বিনিময়ে হামাস কী পেল

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  গত বছর ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তারা এক হাজার ২শ লোককে হত্যা ও শতাধিক ইসরায়েলি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। বৈশ্বিক সব গোয়েন্দাকে ফাঁকি দিয়ে তারা যে এত বড় হামলা চালাবে সেটা কেউ ভাবতে পারেনি। এর জবাব ইসরাইল যেভাবে দিয়েছে তাতে কোনো মানবতার লেশমাত্র ছিল না। গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পুরো এলাকাজুড়ে যে রক্তের বন্যা সেখানে বয়ে গেছে তা বর্ণনার অতীত। প্রশ্ন হলো, হামাস এ থেকে কী পেল?

তিনটি দৃষ্টিকোণে বিষয়টি দেখা যেতে পারে। প্রথমত এর মধ্য দিয়ে তারা ইসরায়েলিদের নিরাপত্তাবোধ কেড়ে নিয়েছে। ইসরায়েল এত দিন তার জনগণকে বলেছে যে, সেদেশের ভেতর পূর্ণমাত্রার হামলা চালানোর ক্ষমতা হামাসের নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনা যে আতঙ্ক তৈরি করেছে তা ভুলতে অনেক সময় লাগবে। আগে হামাস সময় সময় রকেট ছুড়ত, ইসরায়েল সেগুলো আটকে দিত। হামাস নিয়ে তারা তেমন মাথা ঘামাত না। কয়েক বছর পর পর তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা হতো। মিশরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হতো। ব্যাপারটা রুটিন ঘটনা হয়ে পড়েছিল। উভয় তরফে একে ‘স্ট্যাটাস কিউ’ হিসেবে মেনেও নিয়েছিল। হামাসের দিক থেকে এটা স্ট্যাটাস কিউ নয়, বরং ইসরায়েলের দখলদারত্ব দীর্ঘায়িত করারই নামান্তর।

দ্বিতীয়ত ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলা হামাসকে শক্তিশালী করেছে। ফিলিস্তিন ইস্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আবার জায়গা করে নিয়েছে। ইসরায়েল সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে যেভাবে হত্যা করেছে বা এখনো করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। দেশটিকে আগ্রাসী প্রমাণ করেছে হামাস। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইসরায়েলের। আঞ্চলিক পরিস্থিতি অশান্ত হতে শুরু করেছে। লোহিত সাগর থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়েছে এর উত্তাপ। পরিস্থিতি যেন আয়ত্তের বাইরে না যায় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে কদিন পরপরই ওই অঞ্চল সফরে যাচ্ছেন। নির্বাচনের বছর হওয়ায় বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে পড়েছে অস্বস্তিতে। পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো সাফল্য না পেলে রিপাবলিকান প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বাইডেন যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

তৃতীয়ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও ফাতাহ নেতৃত্বাধীন পিএ (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ) তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ফলে ২০০৭ সালে নেতৃত্ব ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। হামাস গাজা ও ফাতাহ পশ্চিম তীরের দায়িত্ব বোঝে। ওই বছর থেকে গাজার ওপর স্থল, বিমান ও সমুদ্র পথে অবরোধ বসায় ইসরায়েল যা এখনো চলছে। ফাতাহর সঙ্গে সমঝোতা থাকায় পশ্চিম তীরে অবরোধ দেয়নি ইসরায়েল। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে হামাস একটি প্রজন্ম তৈরি করেছে যাদের মন থেকে ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ কখনো প্রশমিত হবে না। গত ১৬ বছরে গাজায় চারটি যুদ্ধ হয়েছে। এসব যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গ্রুপটিই মুখ্য প্রতিরোধকারীর ভূমিকা পালন করেছে, হামাস গতানুগতিক কিছু রকেট ছোড়া ছাড়া বিশেষ কিছু করেনি। কারণ প্রশাসনিক দায়িত্ব হাতে নিয়ে আক্রমণ করা তদের পক্ষে কঠিন ছিল। হামাসের ভূমিকা হয়ে পড়েছিল পুলিশের মতো। বর্তমান লড়াই হামাসের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছে। ফিলিস্তিনি ও আরবদের অনেকের কাছেও তারা জনপ্রিয় হয়েছে। একই সঙ্গে পিএর জনপ্রিয়তা আরও কমিয়ে দিয়েছে। অবশ্য দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্য পিএর জনপ্রিয়তা আগে থেকেই তলানিতে ছিল। বর্তমান যুদ্ধ পশ্চিমা গণমাধ্যম ‘গাজা যুদ্ধ বা হামাস-ইসরায়েল’ যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করছে যা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ। পশ্চিম তীর, জেনিন ও অন্যান্য ছিটমহলের ফিলিস্তিনিরাও ইসরায়েলের হামলার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। হামাস ইস্যুটিকে আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। হামাস যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। যেমন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি। যদিও হামাসের পক্ষে কেউ কিছু বলছে না, তবে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে ডেমোক্র্যাটদের অনেকে বলেছেন।

এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টা থমকে গেছে। এটি হলে তা অন্য আরব দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতো। কিন্তু এখন রিয়াদকে তেল আবিবের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলতে হচ্ছে। যুদ্ধ না হলেও সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য অনেক মূল্য গুনতে হতো রিয়াদকে। কিন্তু এখন এর পরিমাণটি ক্রমেই বড় হচ্ছে। সবশেষ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেই প্রস্তাবে সোজা না বলে দিয়েছেন।

হামাসের প্রতিপক্ষ শুধু ইসরায়েল নয়। ফিলিস্তিনি জনগণের একাংশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ তাদের বৈরী। তারা আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। পশ্চিমা সহায়তা ফাতাহর হাত দিয়ে ফিলিস্তিনিরা পেয়ে থাকে। ফাতাহর নেতা মাহমুদ আব্বাস পিএর প্রেসিডেন্ট। এটি গঠিত হয় ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তি অনুসারে। তখন এর প্রধান ছিলেন ইয়াসির আরাফাত। উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিরা যেন সশস্ত্র লড়াই সংগ্রাম ছেড়ে দেয়। এভাবে ফাতাহ বা পিএ পুরোপুরি ইসরায়েলনির্ভর হয়ে পড়ে। ১৯৮৭ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের উদ্যোগে হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের এই অর্জনগুলো কিন্তু বিনামূল্যে আসেনি। এর জন্য ফিলিস্তিনিদের গুনতে হয়েছে বিশাল মূল্য। হয়তো আরও অনেক দিন সেটা করে যেতে হবে। ১৫ জানুয়ারি এই যুদ্ধের ১০০ দিন পূর্ণ হয়। এ সময়ে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। হামাসের কমান্ডারসহ প্রায় ৭ হাজার নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। গাজার ঘরবাড়ির ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এত বড় মূল্য গুনতে হয়েছে যে এর ফলে হামাসের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে অনেক ফিলিস্তিনি। বিষয়টি তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। হামলা ছাড়া কোনো বিকল্প কি ছিল না, প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই আসবে। গাজা পুনর্গঠনে বহির্বিশ্বের সহায়তা কতটুকু পাওয়া যাবে সেটাও একটা প্রশ্ন। কারণ স্থিতিশীলতা না এলে কোনো দেশই বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবে না। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

হককথা/নাছরিন