নিউইয়র্ক ০২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন, মোদির রাজনৈতিক বিজয়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:০৪:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪ বার পঠিত

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় উদ্বোধন হলো আলোচিত সেই রাম মন্দির। হিন্দু দেবতা রামের নামে তৈরি এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গোটা ভারতেই উৎসব উৎসব ভাব দেখা গেছে। মোদি নিজেই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন।

এই মন্দির নির্মাণকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির জন্য বড় একটি বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরে বিজেপির রাজনীতির অন্যতম ভিত্তিই ছিল এই মন্দির প্রতিষ্ঠা। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়ার সময় থেকেই বিজেপি এই মন্দির নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল যে তারা এখানে মন্দির নির্মাণ করেই ছাড়বে। এবার নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে সেই মন্দিরের উদ্বোধন হলো। আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় বসতে মোদিকে সহায়তা করবে এই মন্দির।

বিরোধী দল কংগ্রেস এরই মধ্যে এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে’ রূপ দেয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে। দলটির শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, অযোধ্যার এই অনুষ্ঠানকে ‘নরেন্দ্র মোদি এবং আরএসএস-বিজেপি ফাংশনে’ পরিণত করা হয়েছে, যার মধ্যে ‘নির্বাচনী প্রচার’ও যুক্ত। কংগ্রেস এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।

মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে বিপুল ভক্তের সমাগম হয়। স্থানীয় সময় ১২ টার দিকে নরেন্দ্র মোদি রুপোর মুকুট হাতে রাম মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপর দেবতা রামের আসল মূর্তিকে গর্ভগৃহে আনা ও প্রাণ প্রতিষ্ঠার রীতি মেনে পুজোয় বসেন তিনি। তার পাশে ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। পুজোয় অংশ নেন যোগি আদিত্যনাথও। ঠিক সেই মুহূর্তেই আকাশ থেকে মন্দিরের ওপর পুষ্পবৃষ্টি করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। পুজো শেষে রামের মূর্তি প্রদক্ষিণ করেন মোদি। এরপর মাটিতে শুয়ে পড়ে প্রণাম করেন তিনি।

নিজের ভাষণে মোদি বলেন, কয়েক শতাব্দী পর আমাদের প্রভু রাম ফিরে এলেন। আমার অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আবেগে কন্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা পবিত্রতম সময়। প্রভু রাম আমাদের আশীর্বাদ করছেন। আজকের সূর্য এক অদ্ভুত আভা নিয়ে এসেছে। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ কোনও তারিখ নয়, এটা নয়া কালচক্রের সূচনা। হাজার বছর পরও মানুষ এই দিনের কথা বলবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ত্যাগ-তপস্যায় নিশ্চই কিছু খাদ ছিল। তাই আমরা এতদিন এই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারিনি। আজ সেই খাদ পূর্ণ করতে পেরেছি আমরা। এই দেরির জন্য প্রভু রাম নিশ্চই আমাদের ক্ষমা করবেন।

মোদি যুক্ত করেন, ভারতের সংবিধানে প্রভু রাম বিরাজমান। সেই সংবিধান প্রবর্তনের পরও, কয়েক দশক ধরে প্রভু রামের অস্তিত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলেছে। ভারতের বিচার ব্যবস্থা, আইনের লজ্জা রক্ষা করেছে। এক সময় কিছু লোক বলত, রাম মন্দির তৈরি হলে দেশে আগুন লেগে যাবে। এরা ভারতের সামাজিক ভাবের পবিত্রতাকে জানত পারেননি। রামলালার এই মন্দির নির্মাণ, ভারতীয় সমাজের শান্তি, ধৈর্য, সদ্ভাবের প্রতীক। এই নির্মাণ কোনও আগুন নয়, শক্তির জন্ম দিচ্ছে। আমি আজ ওই লোকদের বলব, নিজেদের ভাবনা ফের বিবেচনা করে দেখুন। উপলব্ধি করুন, রাম বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম আগুন নয়, রাম শক্তি। রাম শুধু বর্তমান নয়, রাম চিরন্তন।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ বলেন, আজ এমন পরিবেশ যে মনে হচ্ছে ত্রেতা যুগে ফিরে গিয়েছি। মন ভাববিহ্বল হয়ে রয়েছে। এর আগে কোনও দেশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষদের তাদের আরাধ্য দেবতার জন্মস্থানে মন্দির তৈরির জন্য এতদিন ধরে লড়াই করতে হয়নি। তিনি আরও জানান, এটা প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ছাড়া সম্ভব ছিল না। দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হয়ে উঠছে অযোধ্যা। সকলেই অযোধ্যায় আসতে চাইছেন। এটা ভারতের গৌরবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতের গোটা আম্বানী পরিবার। প্রথমে সেখানে পৌঁছেছেন আকাশ ও শ্লোকা আম্বানী। তারপরই আসেন রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্বানী, নীতা আম্বানী ও অনন্ত আম্বানী। কিংবদন্তী ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরও ছিলেন সেখানে। ভারতের সুপারস্টার রজনীকান্তও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন অনেক বলিউড তারকাও।

রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও দেখা গেছে ভারতীয়দের উৎসব। নিউ জার্সির সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে শ্রীরামের পুজো-বন্দনা করতে দেখা গেছে ভারতীয়দের। এর আগে রাম মন্দিরের উদ্বোধনে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় মন্দির চত্বর। মোতায়েন করা হয় বিরাট পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। ছিল অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমও। সূত্র : মানবজমিন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন, মোদির রাজনৈতিক বিজয়

প্রকাশের সময় : ০২:০৪:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় উদ্বোধন হলো আলোচিত সেই রাম মন্দির। হিন্দু দেবতা রামের নামে তৈরি এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গোটা ভারতেই উৎসব উৎসব ভাব দেখা গেছে। মোদি নিজেই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন।

এই মন্দির নির্মাণকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির জন্য বড় একটি বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরে বিজেপির রাজনীতির অন্যতম ভিত্তিই ছিল এই মন্দির প্রতিষ্ঠা। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়ার সময় থেকেই বিজেপি এই মন্দির নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল যে তারা এখানে মন্দির নির্মাণ করেই ছাড়বে। এবার নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে সেই মন্দিরের উদ্বোধন হলো। আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় বসতে মোদিকে সহায়তা করবে এই মন্দির।

বিরোধী দল কংগ্রেস এরই মধ্যে এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে’ রূপ দেয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে। দলটির শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, অযোধ্যার এই অনুষ্ঠানকে ‘নরেন্দ্র মোদি এবং আরএসএস-বিজেপি ফাংশনে’ পরিণত করা হয়েছে, যার মধ্যে ‘নির্বাচনী প্রচার’ও যুক্ত। কংগ্রেস এই মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।

মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে বিপুল ভক্তের সমাগম হয়। স্থানীয় সময় ১২ টার দিকে নরেন্দ্র মোদি রুপোর মুকুট হাতে রাম মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপর দেবতা রামের আসল মূর্তিকে গর্ভগৃহে আনা ও প্রাণ প্রতিষ্ঠার রীতি মেনে পুজোয় বসেন তিনি। তার পাশে ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। পুজোয় অংশ নেন যোগি আদিত্যনাথও। ঠিক সেই মুহূর্তেই আকাশ থেকে মন্দিরের ওপর পুষ্পবৃষ্টি করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। পুজো শেষে রামের মূর্তি প্রদক্ষিণ করেন মোদি। এরপর মাটিতে শুয়ে পড়ে প্রণাম করেন তিনি।

নিজের ভাষণে মোদি বলেন, কয়েক শতাব্দী পর আমাদের প্রভু রাম ফিরে এলেন। আমার অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আবেগে কন্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা পবিত্রতম সময়। প্রভু রাম আমাদের আশীর্বাদ করছেন। আজকের সূর্য এক অদ্ভুত আভা নিয়ে এসেছে। ২২ জানুয়ারি ২০২৪ কোনও তারিখ নয়, এটা নয়া কালচক্রের সূচনা। হাজার বছর পরও মানুষ এই দিনের কথা বলবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ত্যাগ-তপস্যায় নিশ্চই কিছু খাদ ছিল। তাই আমরা এতদিন এই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারিনি। আজ সেই খাদ পূর্ণ করতে পেরেছি আমরা। এই দেরির জন্য প্রভু রাম নিশ্চই আমাদের ক্ষমা করবেন।

মোদি যুক্ত করেন, ভারতের সংবিধানে প্রভু রাম বিরাজমান। সেই সংবিধান প্রবর্তনের পরও, কয়েক দশক ধরে প্রভু রামের অস্তিত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলেছে। ভারতের বিচার ব্যবস্থা, আইনের লজ্জা রক্ষা করেছে। এক সময় কিছু লোক বলত, রাম মন্দির তৈরি হলে দেশে আগুন লেগে যাবে। এরা ভারতের সামাজিক ভাবের পবিত্রতাকে জানত পারেননি। রামলালার এই মন্দির নির্মাণ, ভারতীয় সমাজের শান্তি, ধৈর্য, সদ্ভাবের প্রতীক। এই নির্মাণ কোনও আগুন নয়, শক্তির জন্ম দিচ্ছে। আমি আজ ওই লোকদের বলব, নিজেদের ভাবনা ফের বিবেচনা করে দেখুন। উপলব্ধি করুন, রাম বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম আগুন নয়, রাম শক্তি। রাম শুধু বর্তমান নয়, রাম চিরন্তন।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ বলেন, আজ এমন পরিবেশ যে মনে হচ্ছে ত্রেতা যুগে ফিরে গিয়েছি। মন ভাববিহ্বল হয়ে রয়েছে। এর আগে কোনও দেশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষদের তাদের আরাধ্য দেবতার জন্মস্থানে মন্দির তৈরির জন্য এতদিন ধরে লড়াই করতে হয়নি। তিনি আরও জানান, এটা প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ছাড়া সম্ভব ছিল না। দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হয়ে উঠছে অযোধ্যা। সকলেই অযোধ্যায় আসতে চাইছেন। এটা ভারতের গৌরবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতের গোটা আম্বানী পরিবার। প্রথমে সেখানে পৌঁছেছেন আকাশ ও শ্লোকা আম্বানী। তারপরই আসেন রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্বানী, নীতা আম্বানী ও অনন্ত আম্বানী। কিংবদন্তী ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরও ছিলেন সেখানে। ভারতের সুপারস্টার রজনীকান্তও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন অনেক বলিউড তারকাও।

রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও দেখা গেছে ভারতীয়দের উৎসব। নিউ জার্সির সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে শ্রীরামের পুজো-বন্দনা করতে দেখা গেছে ভারতীয়দের। এর আগে রাম মন্দিরের উদ্বোধনে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় মন্দির চত্বর। মোতায়েন করা হয় বিরাট পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। ছিল অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমও। সূত্র : মানবজমিন।