মরহুম রেজোয়ান সিদ্দিকী ও জাহিদুল হক সম্পর্কে আলী রিয়াজ যা বললেন

- প্রকাশের সময় : ১২:২১:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪
- / ২৩০ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: গত সপ্তাহে দেশের দু’জন স্বনামধন্য ব্যক্তি যথাক্রমে বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও দৈনিক দিনকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী এবং বিশিষ্ট কবি-গীতিকার জাহিদুল হকের ইন্তেকালে দেশ ও প্রবাসে অনেকেই গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, স্মৃতিচারণ করেছেন। তাদের স্মরণ করে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ তাঁর ফেসবুক পেইজে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেছেন।
অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ লিখেছেন- ‘গত দুদিনে দুটি মৃত্যু সংবাদ পেয়ে জন ডানের কবিতাই মনে পড়ছে বারবার, ‘যেকোনো মানুষের মৃত্যু আমাকে ক্ষয় করে দেয়, কেননা আমি অংশ এই মানবতার;/ আর তাই জিজ্ঞাসা কোরো না কার জন্য বাজছে ওই ঘণ্টাধ্বনি, সে বাজছে তোমার জন্য’।
জাহিদুল হকের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ-কথাবার্তা-আড্ডার সময়টা ছিলো গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ দিকটায়। সাহিত্য বিষয়ক লেখালেখি, কবি-লেখকদের আড্ডা, বাংলা একাডেমিতে সময় যাপনের সেই সময়টায়ই তাঁর সান্নিধ্য পাই, পরের দশকের মাঝামাঝি তা ক্ষীন হয়ে যায়। কিন্তু জাহিদুল হকের কবিতার সঙ্গে এক ধরণের সম্পর্ক থাকে পাঠক হিসেবে। স্মরণ করি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বই ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ আমাকে চমকে দিয়েছিলো নামের কারনেই। তাঁর কবিতার ভেতরে কি এক ধরণের অপ্রাপ্তির বেদনা ছিলো? সেই আলোচনা অন্য সময়ের জন্যে না হয় থাকুক, কিংবা এই আলোচনা যে তাঁকে আমরা সত্তরের দশকের কবি বলবো নাকি ষাটের দশকের। যে সময়ে আমি তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি তাঁকে দেখেছি একজন সুস্থির মানুষ হিসেবে। তিনি যে তাঁর লেখা গানের জন্যেও পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন সেটা বিস্ময়ের বিষয় নয় এই কারণে যে জাহিদুল হকের কবিতার ভেতরে এক ধরণের পেলবতা উপস্থিত ছিলো। আমার এই ধারণা অনেকটাই আংশিক, কারণ তাঁর কবিতার এই পাঠ অনেকটাই পুরনো। কিন্তু তিনি যে বন্ধুবৎসল ছিলেন, ছিলেন নিম্নকন্ঠ সেটা তাঁর কবিতা এবং জীবন যাপনের মধ্যেই প্রকাশিত।
আজকে (১৬ জানুয়ারী) রেজোয়ান সিদ্দিকীর জীবনাবসানের সংবাদ দেখে মনে হলো তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের সময়টা ছিলো প্রায় একই সময়ে। সম্ভবত খানিকটা আগে। স্মৃতি প্রতারণা না করলে সাক্ষাৎ ঘটেছিলো বিচিত্রার কার্যালয়ে। ১৯৭৯ বা ১৯৮০ সালে বেরিয়েছিলো তাঁর বই ‘কথামালার রাজনীতি’। বইটির দালিলিক মুল্য অপরিসীম বলেই আমার মনে হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে এই বইয়ের সাহায্য নিয়েছি। রেজোয়ান সিদ্দিকী সাংবাদিকতায় নিবেদিত ছিলেন। সেই সূত্রে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে প্রায়শই দেখা সাক্ষাত ঘটেছে। পরে এই যোগাযোগ থাকেনি, তিনি বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁর বিভিন্ন ধরণের লেখার গ্রন্থ বেরিয়েছে। কিন্তু রেজোয়ান সিদ্দিকী বললেই আমার তাঁর হাস্যময় মুখই স্মরণে আসে।
বয়সের বিবেচনায় দুই জনই আমার জ্যেষ্ঠ হলেও তাঁদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার সময়ে তা মনে হয়নি। আজকে তাঁদের মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁদের কথা মনে হয়; মনে পড়ে যেই সময়ে তাঁদের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল সেই সময়ের কথা। বন্ধুদের স্মৃতি মনে পড়ে। সময় বদলে গেছে। আগামীতে আরও বদলে যাবে। অবধারিত ভবিতব্য আমাদের সাথেই থাকে, প্রতি মুহুর্তে। তারপরেও কিছু কিছু মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- ঘন্টা বাজছে, দূরে কিংবা কাছে’।