যে কৌশলে সরকারকে চাপে ফেলতে চায় বিএনপি
- প্রকাশের সময় : ০৬:৩৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৫৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : সংগঠিত হয়ে ফের রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। নতুন আঙ্গিকে ‘ছক’ কষছেন নীতিনির্ধারকরা। কর্মসূচি ঠিক করতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও করছেন। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধামতো সময়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চান তারা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণসংযোগ, হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বিরোধীরা। আদায় হয়নি কোনো দাবি-দাওয়া। উল্টো নানাভাবে কোণঠাসা এখন বিএনপি। দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কারাবন্দি। এখনো আত্মগোপনে অনেকে। তবে দাবি আদায়ে এখনো আত্মবিশ্বাসী তারা।
শান্তিপূর্ণ সভা, সমাবেশের মধ্য দিয়ে মাঠে নামতে চান। পাশাপাশি কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের জামিন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকার দিকেও নজর রাখছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নেতারা জানান, জনগণ ভোট বর্জন করেছেন। তাই প্রাথমিকভাবে তাদের আন্দোলন সফল। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধামতো সময়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চান। তারা বিশ্বাস করেন, ‘একতরফা’ ও ‘কারচুপির’ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করলেও বেশি দিন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বহির্বিশ্বের চাপসহ বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে জনগণের সাড়া পড়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা রাজপথে আছি, থাকব। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে যেসব আন্দোলন করা যায় বিএনপি তা করবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারির পর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চসহ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
এদিকে ভোটের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে দেখভাল করেন এমন একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, যারা ভাবছেন নির্বাচন নিয়ে তাদের বিবৃতি ‘নরম’ হয়েছে এটা ঠিক নয়। তাদের বিবৃতির ভাষা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনকে তারা বৈধতা দেয়নি। বিবৃতিতে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যে ভাষা ব্যাবহার করেছেন বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে এর চেয়ে বেশি কখনো তারা বলেন না। এটাই তাদের কূটনীতিক কঠোর ভাষা। তারা গণতন্ত্র যেভাবে চর্চা করে, কূটনীতিতেও অনেক বেশি পারদর্শী। নির্বাচন, সহিংসতা, গণতন্ত্রসহ যেসব বিষয়ে আগে তারা জোর দিয়ে কথা বলেছেন, বাংলাদেশে তার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করেছে, একতরফা ও কারচুপির নির্বাচন করেছে। দেশ এখন একদলীয় রাষ্ট্র। যেখানে গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আশা করেন, বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রেখে এসব নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব আরও সোচ্চার হবে। পাশাপাশি বিরোধী সব দলকে এক করে আবারও সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে মাঠের আন্দোলনে নামারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই নেতা আরও জানান, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, জিম্বাবুয়েসহ কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা প্রত্যাশা করেছিল, ওইসব দেশেও একই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেসব দেশেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যে কারণে দেশটি ভিসানীতি প্রয়োগ ও নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়। এবং তা কিন্তু ভোটের পর পরই দেওয়া হয়নি। কোনো দেশে ভোটের দেড় মাস পর, আবারও এমন দেশ রয়েছে এক বছর পর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ তারা যা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ দেন না। অর্থাৎ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তারা পদক্ষেপ নেন।
যদিও বিএনপি কোনো বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে নেই। বিএনপি মনে করে জনগণের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলন শতভাগ সফল। তবে অনেকে বলছেন, সরকারের তো পতন হয়নি। তাদের জন্য বলা প্রয়োজন, বিএনপি কোনো জঙ্গি বা ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন নয়। বিএনপি গণতান্ত্রিক ও উদারপন্থি একটি রাজনৈতিক দল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তারা বিশ্বাস করেন। ইতিহাস বলে, ফ্যাসিবাদ ও একদলীয় রাষ্ট্র কোনো দিন টিকেনি। এই সরকারও টিকবে না, পতন হবেই। সুতরাং হতাশার কিছু নেই।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করে পদগুলো (এমপি) ঘোষণা করেছে। নির্বাচিত হয়েছে দিনের বেলায় গোপন কক্ষে সিল মারার ভোটে। সুতরাং অর্থনৈতিক, সামজিক যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনৈতিক যে শূন্যতা বিরাজ করছে, মানুষ বিচারহীনতায় ভুগছে এগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়। এই সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপার। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ডামি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠন করেছে, তাদের কোনো বৈধতা নেই। দেশব্যাপী সভা, সমাবেশে, বিক্ষোভ, অবস্থান, ঘেরাও এসব কর্মসূচি আসতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে হরতাল-অবরোধের মতো বৃহৎ কর্মসূচিতে যাব। সূত্র : যুগান্তর
হককথা/নাছরিন