সংসদে প্রধান বিরোধী দল থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই
- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৬০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল কে বা কারা হচ্ছে- এনিয়েই এখন সর্বত্র আলোচনা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বর্তমান একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ে স্বতন্ত্ররা প্রায় পাঁচগুণ বেশি আসন পাওয়ার কারণেই এবার এই আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে কিংবা সামনে এসেছে। তবে, সংসদে প্রধান বিরোধীদল কিংবা বিরোধীদল থাকার বা রাখার বিষয়ে সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে জাপা। দলটি ১১টি আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৬২টি আসনে। এই পরিস্থিতিতে জাপা বা স্বতন্ত্রদের জোট, যারাই প্রধান বিরোধীদল হোক না কেন, সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী কোনো পক্ষ আসলে থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে সামনে। কারণ, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। এর আগে কোনো সংসদে এতসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন না। জয়ী হওয়া স্বতন্ত্রদের প্রায় সবাই আওয়ামী লগের পদধারী নেতা। এর বাইরে সংসদে আওয়ামী লীগের বাইরে প্রতিনিধিত্ব থাকছে কেবল চারটি দলের। আবার এই চারটি দলও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বা নির্বাচনি মিত্র।
জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দলগুলো বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত। বিরোধীদল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, তাও সংবিধান কিংবা সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে, বিরোধীদলের নেতা কে হবেন তা উল্লেখ আছে কার্যপ্রণালী বিধিতে।
সংসদে বিরোধীদল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংসদের স্পিকারের। সংসদের কর্যপ্রণালী বিধির ২(১)(ট)- তে বলা বলা হয়েছে, “‘বিরোধীদলীয় নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা”। বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইনেও একই সংজ্ঞা দেওয়া আছে। একজন পূর্ণমন্ত্রীর জন্য প্রযোজ্য বেতন, ভাতা ও অন্যান্য বিশেষাধিকার পেয়ে থাকেন বিরোধীদলীয় নেতা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার গঠন করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে, এটা সংবিধানে বলা আছে। যে দল রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে প্রতীয়মান হবে, সেই দলের নেতাকে উনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তবে, প্রথা বা রেওয়াজ হচ্ছে- সরকারি দলের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই দলই বিরোধী দল হবে এবং সেই দলের নেতা বিরোধী দলের নেতা হবেন। সেখানে তাদের কতটি আসন থাকতে হবে, এরকম কোনো বিষয় নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছিল ২৯৩টি আসন। আর বিরোধী ছোট ছোট কয়েকটি দল মিলে পেয়েছিল বাকি সাতটি আসন। সেসময় এসব দল যৌথভাবে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতার মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন জানান। তবে তৎকালীন সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে একটি রাজনৈতিক দলের অবশ্যই কমপক্ষে ২৫টি আসন থাকতে হবে। নাহলে তাদেরকে পার্লামেন্টারি গ্রুপ হিসেবে বলা যেতে পারে, কিন্তু বিরোধী দল নয়।’ তৎকালীন স্পিকার মোহাম্মদ উল্যাহ বঙ্গবন্ধুর সেই অভিমত গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে সেটি সংবিধানে কিংবা সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে সন্নিবেশিত করা হয়নি।
এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় সংসদে এর আগে কখনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে বিরোধীদলীয় নেতা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিধিতেও এবিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা একজোট হয়ে সংসদের প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে, তাদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। আবার স্বতন্ত্ররা চাইলে যে কোনো দলেও যোগ দিতে পারবেন। আর যদি স্বতন্ত্ররা এধরনের জোট বা গ্রুপ না করেন, তাহলে জাপাই আবার সংসদের প্রধান বিরোধীদল হবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
হককথা/নাছরিন