নতুন বছরে কোন দিকে মোড় নেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

- প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৩২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২৪ সালে তৃতীয় বছরে পড়তে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর বসন্ত অভিযান আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ এলাকা এখনো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কয়েক মাসে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে একটা প্রশ্ন সামনে এসেছে। তা হলো, ২০২৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নিতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সমর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ অনির্দিষ্টকাল চলবে না : বারবারা জ্যানচেত্তা কিংস কলেজ অব লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক। বারবারার মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলবে। কিন্তু তা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। বারবারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থেমে যাবে, এমন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। কেননা গত বছরের এই সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যতটা শক্তিশালী ছিলেন, এখন তার শক্তি আরো বেড়েছে। এক বছরে পুতিন সামরিকের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে বেশি শক্তিশালী হয়েছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে এখনো অনিশ্চিত পরিস্থিতি রয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর শীতকালীন অভিযান থেমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে; যদিও রুশ বাহিনীর বড় কোনো সাফল্য আপাতত নেই। এর চেয়ে বরং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে বসে (বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসে) নেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো মুখ্য হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ২০২২ সালে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ ঐক্য দেখা গিয়েছিল। ২০২৩ সালেও এই ঐক্য আমরা দেখেছি। কিন্তু সম্প্রতি তা ফিকে হতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত প্রতিরক্ষা সহায়তা প্যাকেজগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বাধার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়াশিংটনে একে ‘সংকীর্ণ রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনৈতিক সহায়তা ছাড় দেওয়া না-দেওয়া হাঙ্গেরির অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর এমন দ্বিধান্বিত পদক্ষেপ কার্যত পুতিনকে উৎসাহিত করছে। তার সাম্প্রতিক প্রকাশ্য উপস্থিতি ও বেপরোয়া বিবৃতি সেটার প্রমাণ। এখন প্রশ্ন হলো, পুতিন ও তার প্রতিনিধিত্বকারী সবকিছুর বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি ও দৃঢ়তা পশ্চিমারা দেখাতে পারবে কি না?
ইউক্রেন ও মলদোভাকে ইইউর সদস্য করার জন্য আলোচনার পথ খুলছে। এটা শুধু প্রতীকী কোনো উদ্যোগ নয়। এর মধ্য দিয়ে কিয়েভকে সমর্থন জুগিয়ে যেতে চায় ইইউ। আর এমনটা হলে ইউক্রেনে রাশিয়ার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।আর নতুন বছরে ইউক্রেন নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পশ্চিমা শিবিরের সাম্প্রতিক ফাটল যে অর্থহীন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটা বলাই যায়, পশ্চিম ও ইউক্রেনের জন্য ২০২৪ সাল বেশ কঠিন একটি বছর হবে। বছরজুড়ে ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে পারে। তবে তা অনির্দিষ্টকাল ধরে নয়।
যুদ্ধের গতি যাবে অন্যদিকে : লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক মাইকেল ক্লার্কের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। কেননা ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান ইউরোপের ভূখণ্ডে বড় যুদ্ধের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ২০২৩ সালজুড়ে চলা যুদ্ধ আমাদের মনে করিয়েছে, ইউরোপ মহাদেশে শিল্প যুগের যুদ্ধ পরিস্থিতি ফিরে এসেছে।
শিল্পযুগের যুদ্ধ পরিস্থিতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওই সময় অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধ উপকরণ তৈরিকে ঘিরে পুরো অর্থনীতির চাকা ঘুরেছিল। এটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। তেমনভাবেই ২০২১ সালের পর থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন বছরে তা রুশ সরকারের মোট বার্ষিক ব্যয়ের ৩০ শতাংশ হবে।
এখন দেখার বিষয়, শিল্পযুগের যুদ্ধ পরিস্থিতির এ চাহিদা নতুন বছরে রাশিয়া (উত্তর কোরিয়া, ইরানসহ রুশ মিত্ররা) ও কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা কতটা সামাল দিতে পারে। তবে তা যুদ্ধকে আরো জটিল করে তুলবে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধের সক্ষমতা অচল হয়ে পড়েছে, এটা বললে ভুল হবে। বরং উভয় পক্ষই কৌশলগতভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সক্ষম। নতুন বছরে রুশ বাহিনী সম্মুখসমরে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিশেষ করে দনবাস অঞ্চলের পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে রাশিয়া।
অন্যদিকে রুশ বাহিনীর এমন আকাক্সক্ষা নস্যাৎ করতে চাইবে ইউক্রেন। সেই সঙ্গে কৃষ্ণসাগরের পশ্চিমাঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ বসফরাস প্রণালিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করবে কিয়েভ। কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রুশ বাহিনীর সামনে ইউক্রেনের সামরিক চমক দেখানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে বলা যায়, ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুপক্ষের জন্যই ২০২৪ সাল হতে পারে একত্রীকরণের বছর। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ ।