নিউইয়র্ক ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘দেশে থাকতে হলে বলতে হবে জয় শ্রীরাম’, সেই মুসকানকে হুমকি আরএসএসের

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৩২ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে মুসলিম নারী ও মেয়েদের হিজাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সম্প্রতি তা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যটির নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারমাইয়াহ।

কংগ্রেস সরকার মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর মুখ খুলেছেন হিজাব আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ মুসকানও। তিনি জানিয়েছেন, হিজাব পরে ফের কলেজে ফিরবেন।

এই ঘটনায় মুসকানের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) এক নেতা। তিনি বলেছেন, এখানে থাকতে হলে প্রকাশ্যে জয় শ্রীরাম বলতেই হবে। গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিয়াসাত ডেইলি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিতর্কিত হিজাব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তবে আরএসএস নেতা কাল্লাডকা প্রভাকর ভাট গত রোববার মান্ড্যা জেলার শ্রীরঙ্গপাটনা তালুকে হনুমান জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসাবে ‘সংকীর্থনা যাত্রা’ চলাকালীন এই জাতীয় কোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

এসময় তিনি মুসলিম ছাত্রী বিবি মুসকানের বিষয়েও মন্তব্য করেন। হিজাব নিয়ে ক্রমবর্ধমান তীব্র বিতর্কের মাঝে তিনি ভারতীয় মুসলিম তরুণীদের ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ হয়ে উঠেছিলেন। আন্দোলনের সময় তিনি হিজাব পরে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছিলেন এবং ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়েছিলেন।

হিজাব পরে কলেজে যাওয়া যাবে না বলে গত বছর রাজ্যের বিজেপি সরকার নির্দেশ জারি করে। কর্নাটকের মান্ড্যার একটি কলেজের ছাত্রী বিবি মুসকান ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেসময় পথে নামেন। সরকারি নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে হিজাব পরেই কলেজে যান তিনি।

পরে হিন্দুত্ববাদীদের বাধার মুখে পড়েন ওই ছাত্রী। হিন্দুত্ববাদীদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের জবাবে কলেজের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বা আল্লাহ মহান বলে পাল্টা স্লোগানে সরব হন।

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার পর মুখ খুলেছেন হিজাব আন্দোলনের প্রধান সারির মুখ মুসকানও। তিনি জানিয়েছেন, হিজাব পরে ফের কলেজে ফিরবেন তিনি। এ বিষয়ে আরএসএস নেতা কাল্লাডকা প্রভাকর ভাট গত রোববার বলেন, ‘মেয়েটি (মুসকান) বলেছে, সে এখন কলেজে ফিরতে পারে। তার সাহস থাকলে তাকে কলেজে যেতে দিন’।

প্রভাকরের দাবি, মুসকানকে বিভিন্ন ইসলামিক সংস্থা ‘আর্থিকভাবে সহায়তা’ করেছে। হাজার হাজার হনুমান ভক্তের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘যদি তুমি (মুসকান) আল্লাহু আকবার বলতে চাও, তাহলে সেটি তোমার ঘরে বা মসজিদে বলো। আর তুমি যদি এখানে থাকতে চাও তবে তোমার ‘জয় শ্রীরাম’ উচ্চারণ করা উচিত।’

আরএসএসের এই নেতা দাবি করেন, হিজাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়ে কংগ্রেস সরকার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। যাইহোক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কর্ণাটকে বিজেপির শীর্ষ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যটিতে সেসময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং মুসলিম অভিভাবকরা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন।

চলতি বছরের জুনে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেস। এরপর হিজাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারমাইয়াহ।

হককথা/নাছরিন

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘দেশে থাকতে হলে বলতে হবে জয় শ্রীরাম’, সেই মুসকানকে হুমকি আরএসএসের

প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে মুসলিম নারী ও মেয়েদের হিজাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সম্প্রতি তা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যটির নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারমাইয়াহ।

কংগ্রেস সরকার মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর মুখ খুলেছেন হিজাব আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ মুসকানও। তিনি জানিয়েছেন, হিজাব পরে ফের কলেজে ফিরবেন।

এই ঘটনায় মুসকানের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) এক নেতা। তিনি বলেছেন, এখানে থাকতে হলে প্রকাশ্যে জয় শ্রীরাম বলতেই হবে। গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিয়াসাত ডেইলি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিতর্কিত হিজাব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তবে আরএসএস নেতা কাল্লাডকা প্রভাকর ভাট গত রোববার মান্ড্যা জেলার শ্রীরঙ্গপাটনা তালুকে হনুমান জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসাবে ‘সংকীর্থনা যাত্রা’ চলাকালীন এই জাতীয় কোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

এসময় তিনি মুসলিম ছাত্রী বিবি মুসকানের বিষয়েও মন্তব্য করেন। হিজাব নিয়ে ক্রমবর্ধমান তীব্র বিতর্কের মাঝে তিনি ভারতীয় মুসলিম তরুণীদের ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ হয়ে উঠেছিলেন। আন্দোলনের সময় তিনি হিজাব পরে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছিলেন এবং ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়েছিলেন।

হিজাব পরে কলেজে যাওয়া যাবে না বলে গত বছর রাজ্যের বিজেপি সরকার নির্দেশ জারি করে। কর্নাটকের মান্ড্যার একটি কলেজের ছাত্রী বিবি মুসকান ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেসময় পথে নামেন। সরকারি নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে হিজাব পরেই কলেজে যান তিনি।

পরে হিন্দুত্ববাদীদের বাধার মুখে পড়েন ওই ছাত্রী। হিন্দুত্ববাদীদের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের জবাবে কলেজের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বা আল্লাহ মহান বলে পাল্টা স্লোগানে সরব হন।

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার পর মুখ খুলেছেন হিজাব আন্দোলনের প্রধান সারির মুখ মুসকানও। তিনি জানিয়েছেন, হিজাব পরে ফের কলেজে ফিরবেন তিনি। এ বিষয়ে আরএসএস নেতা কাল্লাডকা প্রভাকর ভাট গত রোববার বলেন, ‘মেয়েটি (মুসকান) বলেছে, সে এখন কলেজে ফিরতে পারে। তার সাহস থাকলে তাকে কলেজে যেতে দিন’।

প্রভাকরের দাবি, মুসকানকে বিভিন্ন ইসলামিক সংস্থা ‘আর্থিকভাবে সহায়তা’ করেছে। হাজার হাজার হনুমান ভক্তের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘যদি তুমি (মুসকান) আল্লাহু আকবার বলতে চাও, তাহলে সেটি তোমার ঘরে বা মসজিদে বলো। আর তুমি যদি এখানে থাকতে চাও তবে তোমার ‘জয় শ্রীরাম’ উচ্চারণ করা উচিত।’

আরএসএসের এই নেতা দাবি করেন, হিজাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়ে কংগ্রেস সরকার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। যাইহোক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কর্ণাটকে বিজেপির শীর্ষ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যটিতে সেসময় ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং মুসলিম অভিভাবকরা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন।

চলতি বছরের জুনে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেস। এরপর হিজাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারমাইয়াহ।

হককথা/নাছরিন