ক্ষুধার্ত শিশুদের শান্ত করতে ‘ঘুমের ওষুধ’ দিচ্ছেন আফগান মায়েরা
- প্রকাশের সময় : ০৮:২৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৪০ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তীব্র ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে আফগানিস্তানের শিশুদের। দেশটির সোহাইলা নিয়াজী নামের এক নারী ব্রিটিশ বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে শেষবারের মতো আমার সন্তানের জন্য দুধ কিনতে পেরেছিলাম। এখন মাঝে মাঝে দুধ ছাড়া শুধু চা খেতে দিই তাদের। কখনও কখনও চায়ে রুটি ভিজিয়ে খেতে দেই তাদের।’
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পূর্ব কাবুলের একটি পাহাড়ে তাঁর বাড়ি। সেখানে পৌঁছার কোনও ভালো রাস্তা নেই। বাড়িটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নোংরা পানির নর্দমা। পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যেতে হয়।
সোহাইলার স্বামী মারা গেছেন গত বছর। বিধবা এই নারীর রয়েছে ছয়টি সন্তান। সবচেয়ে ছোটটির বয়স ১৫ মাস। সোহাইলা যাকে চা বলছেন, সেটি আফগানিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী পানীয়। সবুজ পাতা ও গরম পানি দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। এতে নেই কোনও পুষ্টিকর উপাদান।
বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে এক কোটি মানুষ রয়েছেন। সোহাইলা সেই এক কোটি মানুষের একজন, যাদের কাছে গত এক বছর ধরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) থেকে কোনও জরুরী খাদ্য সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। কারণ আফগানিস্তানে এই সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে জাতিসংঘ। এতে বিশাল খাদ্য সংকটে পড়েছে দেশটি। লাখ লাখ শিশু ক্ষুধার যন্ত্রনায় দিন পার করছে। কখনও কখনও তাদের ভাগ্যে জুটছে শুধু দিনে এক কাপ চা।
সোহাইলা বলেন, তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর আমরা নারীরা বাইরে কাজ করতে যেতে পারি না। এমন অনেক রাত পার হয় যখন আমার সন্তানেরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায় এবং ক্ষুধা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এই নারী আরও বলেন, অনেক সময় ক্ষুধার্ত সন্তানদের শান্ত করতে ঘুমের ওষুধ দেই। আমি প্রাণপণে চাই, তারা ঘুম থেকে উঠে যেন দুধ না চায়। কারণ আমার কাছে কোনাও দুধ নেই। একবার ঘুমের ওষুধ দিলে তারা সকাল থেকে পরের দিন পর্যন্ত ঘুমায়। আমি মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখি, তারা বেঁচে আছে কি না।
বিবিসি জানিয়েছে, সোহাইলা তাঁর সন্তানকে যে ওষুধ দিয়েছেন সেটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে বিবিসি। তারা জানতে পেরেছে অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যান্টি-অ্যালার্জি ড্রাগ ধরনের। চিকিৎসকেরা বিবিসিকে বলেছেন, আমরাও জেনেছি, আফগান মা বাবারা তাদের শিশুদের ঘুমিয়ে রাখতে এসব ওষুধ দিচ্ছেন। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় এটি প্রয়োগ করলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
গত বছর পাঞ্জশির প্রদেশে তালেবান বাহিনী ও তালেবানবিরোধীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় ক্রসফায়ারে মারা গেছেন সোহাইলার স্বামী। এরপর থেকে তিনি ডব্লিউএফপি থেকে পাওয়া ময়দা, তেল, মটরশুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন ডব্লিউএফপি বলছে, তাদের হাতে আর মাত্র ৩০ লাখ মানুষকে দেওয়ার মতো খাদ্য সহায়তা রয়েছে। এটি আফগানিস্তানের ক্ষুধার্ত মানুষের এক চতুর্থাংশেরও কম।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, আফগানিস্তানে অন্তত ৩০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশেরও বেশি ভুগছে তীব্র অপুষ্টিতে। এদিকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস জানিয়েছে, কাবুলের ইন্দিরা গান্ধী শিশু হাসপাতাল, যেটি আফগানিস্তানের একমাত্র শিশুদের হাসপাতাল, সেটিসহ বেশির ভাগ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক সাহায্য সম্পর্কে তালেবান প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তরে তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘দাতা দেশগুলোর অর্থনীতি ভালো না হওয়ায় সাহায্য বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দুটি বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে—করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য আশা করতে পারি না। আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ইতিমধ্যে আমাদের অর্থনীতি
হককথা/নাছরিন