নিউইয়র্ক ১০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আছে ক্ষোভ-হতাশা, তবু আশায় ভোটে ১৪ দলের শরিকরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১৪১ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে বর্তমানে ১২টি শরিক দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন রয়েছে আটটি দলের। এর মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসন সমঝোতা প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এসব দল। বাকি ৯টি শরিক দলকে কোনও আসনে ছাড় না দেওয়ায় আরও বেশি ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে।

তবে ১৪ দলের শরিক দলগুলো সমঝোতা হওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে ভোট করলেও, প্রার্থী দেওয়া বাকি আসনগুলোয় নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে।

শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ১৪ দল আদর্শিক জোট হওয়ায় জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে। এখন আসন সমঝোতা কাঙ্ক্ষিত ও সম্মানজনক না হওয়ায় হতাশা, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তারপরও ছাড় দেওয়া আসনের বাইরে অন্যান্য আসনে দেওয়া প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় শরিকদের আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হবে বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা।

তারা আরও বলেছেন, বিরোধী দলকেও ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অথচ নিজেদের জোটকে সাতটি আসন দেওয়ার কথা বলেও দিলো মাত্র ছয় আসন। আবার সমঝোতা হওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও রেখে দেওয়া হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে জোট প্রার্থীদের প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ভোটের মাঠে লড়তে হবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি আগামী সংসদে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন করছেন। দলটি ৩২টি থেকে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। বাকি পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বাতিল হয়েছে। ৩২ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির ২৬টি আসন এবং ১৪ দলের ছয়টি আসন রয়েছে। এসব আসনে এবার নিজেদের প্রার্থী সরিয়ে নিয়ে শরিক ও মিত্র দলগুলোকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১১টি আসনে ছাড় দিয়েছিল দলটি। এবার দফায় দফায় বৈঠক করলেও আসনসংখ্যা বাড়াতে পারেনি, উল্টো কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তার ওপর আবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবার, বলছেন ১৪ দলের নেতারা।

১৪ দলে বর্তমানে ১২টি দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে আটটি দলের। সেগুলো হলো— আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি ও ন্যাপ মুজাফফর। এর মধ্যে জোটের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি ও জেপিকে একটি আসনে ছাড় দিয়েছে। সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনকে ছাড় দেওয়া হয়নি কোনও আসনে।

একাদশ জাতীয় সংসদে চারটি দলের আট জন সংসদ সদস্য আছেন। এর মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনের একটি করে আসন রয়েছে। তবে গেলবার একটি আসনে ছাড় পেলেও, এবার বাদ পড়েছে তরীকত ফেডারেশন।

শরিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জাসদকে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশারফ হোসেনকে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ বাদে অন্য দুটি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টিকে বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় দিয়েছে। পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

জোট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন শরিক দলের প্রার্থীরা। এসব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সমঝোতা হওয়া তিনটি আসনের বাইরে জাসদের ৬৩ জন প্রার্থী মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সমঝোতা হওয়া দুটি আসন ছাড়া ২৫ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। জতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসনে ছাড় পেলেও, ১৮টি আসনে দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোট করছেন। তরীকত ফেডারেশন একটি আসনেও ছাড় না পাওয়ায় ৪২টি আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে। সাম্যবাদী দলের কত জন দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন, তা জানা যায়নি।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেহেতু ১৪ দলের সবাই আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্যে আছি, সেহেতু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আসন বণ্টন কম-বেশি হলেও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। যাতে আমরা সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারি। আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হয়, এটা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক ঐক্য এগিয়ে নিতে আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জোটের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকে আমার আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে ছাড় দেওয়া হলো না, এটা অসম্মানজনক। জোটে আমরা অবহেলিত হয়েছি, সেটি অপমানজনক। তারপরও ১৪-দলীয় জোটে থেকে নির্বাচন করছি। জোট নেত্রী নির্বাচনে থাকার অনুরোধ করায় তার ওপর আস্থা রেখে ভোটে আছি। এ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, সেসব আর বলতে চাই না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ তো রয়েছেই। এটা বলা খুব মুশকিল। কোনও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। শেষমেশ আমরা তিনটা আসনে ছাড় চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়েছে দুটি। সাতক্ষীরার আসনটি নিয়ে সমস্যা হলো।

জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদর্শিক জোট হিসেবে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলেও তা মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সংসদকে অর্থবহ করতে আসনসংখ্যা বাড়ালে আমরা কনট্রিবিউট করতে পারতাম। জোট শরিকদের মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি দলকে তো একটিও ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে জোটকে আরও আসন ছাড় দিলে সংসদ আরও প্রাণবন্ত হতো।

গণতন্ত্রী পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় দলটির প্রার্থীদের বাতিল করা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দলটির দুই গ্রুপ মিলে ১২ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ন্যাপ (মুজাফফর) আওয়ামী লীগের কাছে আসন ছাড় চায়নি। দলটি পাঁচটি আসনে দলীয় প্রতীকে ভোট করছে। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক চারটি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই।

সেগুলো হলো— গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ও মজদুর পার্টি। আইন অনুযায়ী অনিবন্ধিত দলের নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তাদের ভোট করতে হলে অন্য দল থেকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে হয়। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

হককথা/নাছরিন

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আছে ক্ষোভ-হতাশা, তবু আশায় ভোটে ১৪ দলের শরিকরা

প্রকাশের সময় : ০৭:৫০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে বর্তমানে ১২টি শরিক দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন রয়েছে আটটি দলের। এর মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসন সমঝোতা প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এসব দল। বাকি ৯টি শরিক দলকে কোনও আসনে ছাড় না দেওয়ায় আরও বেশি ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে।

তবে ১৪ দলের শরিক দলগুলো সমঝোতা হওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে ভোট করলেও, প্রার্থী দেওয়া বাকি আসনগুলোয় নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে।

শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ১৪ দল আদর্শিক জোট হওয়ায় জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে। এখন আসন সমঝোতা কাঙ্ক্ষিত ও সম্মানজনক না হওয়ায় হতাশা, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তারপরও ছাড় দেওয়া আসনের বাইরে অন্যান্য আসনে দেওয়া প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় শরিকদের আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হবে বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা।

তারা আরও বলেছেন, বিরোধী দলকেও ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অথচ নিজেদের জোটকে সাতটি আসন দেওয়ার কথা বলেও দিলো মাত্র ছয় আসন। আবার সমঝোতা হওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও রেখে দেওয়া হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে জোট প্রার্থীদের প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ভোটের মাঠে লড়তে হবে। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি আগামী সংসদে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন করছেন। দলটি ৩২টি থেকে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। বাকি পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বাতিল হয়েছে। ৩২ আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির ২৬টি আসন এবং ১৪ দলের ছয়টি আসন রয়েছে। এসব আসনে এবার নিজেদের প্রার্থী সরিয়ে নিয়ে শরিক ও মিত্র দলগুলোকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ১১টি আসনে ছাড় দিয়েছিল দলটি। এবার দফায় দফায় বৈঠক করলেও আসনসংখ্যা বাড়াতে পারেনি, উল্টো কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তার ওপর আবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবার, বলছেন ১৪ দলের নেতারা।

১৪ দলে বর্তমানে ১২টি দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে আটটি দলের। সেগুলো হলো— আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি ও ন্যাপ মুজাফফর। এর মধ্যে জোটের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি ও জেপিকে একটি আসনে ছাড় দিয়েছে। সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনকে ছাড় দেওয়া হয়নি কোনও আসনে।

একাদশ জাতীয় সংসদে চারটি দলের আট জন সংসদ সদস্য আছেন। এর মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনের একটি করে আসন রয়েছে। তবে গেলবার একটি আসনে ছাড় পেলেও, এবার বাদ পড়েছে তরীকত ফেডারেশন।

শরিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ জাসদকে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু, বগুড়া-৪ আসনে এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশারফ হোসেনকে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ বাদে অন্য দুটি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টিকে বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় দিয়েছে। পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

জোট সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন শরিক দলের প্রার্থীরা। এসব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সমঝোতা হওয়া তিনটি আসনের বাইরে জাসদের ৬৩ জন প্রার্থী মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সমঝোতা হওয়া দুটি আসন ছাড়া ২৫ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। জতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসনে ছাড় পেলেও, ১৮টি আসনে দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোট করছেন। তরীকত ফেডারেশন একটি আসনেও ছাড় না পাওয়ায় ৪২টি আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে। সাম্যবাদী দলের কত জন দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন, তা জানা যায়নি।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেহেতু ১৪ দলের সবাই আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্যে আছি, সেহেতু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আসন বণ্টন কম-বেশি হলেও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। যাতে আমরা সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারি। আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হয়, এটা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক ঐক্য এগিয়ে নিতে আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জোটের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকে আমার আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে ছাড় দেওয়া হলো না, এটা অসম্মানজনক। জোটে আমরা অবহেলিত হয়েছি, সেটি অপমানজনক। তারপরও ১৪-দলীয় জোটে থেকে নির্বাচন করছি। জোট নেত্রী নির্বাচনে থাকার অনুরোধ করায় তার ওপর আস্থা রেখে ভোটে আছি। এ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, সেসব আর বলতে চাই না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ তো রয়েছেই। এটা বলা খুব মুশকিল। কোনও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয়নি। শেষমেশ আমরা তিনটা আসনে ছাড় চেয়েছিলাম, দেওয়া হয়েছে দুটি। সাতক্ষীরার আসনটি নিয়ে সমস্যা হলো।

জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদর্শিক জোট হিসেবে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলেও তা মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সংসদকে অর্থবহ করতে আসনসংখ্যা বাড়ালে আমরা কনট্রিবিউট করতে পারতাম। জোট শরিকদের মধ্যে মাত্র তিনটি দলকে আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি দলকে তো একটিও ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে জোটকে আরও আসন ছাড় দিলে সংসদ আরও প্রাণবন্ত হতো।

গণতন্ত্রী পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় দলটির প্রার্থীদের বাতিল করা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দলটির দুই গ্রুপ মিলে ১২ জন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ন্যাপ (মুজাফফর) আওয়ামী লীগের কাছে আসন ছাড় চায়নি। দলটি পাঁচটি আসনে দলীয় প্রতীকে ভোট করছে। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক চারটি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই।

সেগুলো হলো— গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ও মজদুর পার্টি। আইন অনুযায়ী অনিবন্ধিত দলের নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তাদের ভোট করতে হলে অন্য দল থেকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে হয়। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

হককথা/নাছরিন