ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচার’ বললেন ক্রিস্টি, কড়া সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি অন্যদের
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১২২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়নের প্রার্থীরা আলাবামা রাজ্যে মুখোমুখি বিতর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ এড়িয়ে গেছেন। তবে তার মধ্যে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। ডনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি ‘স্বৈরাচার’ বলে অভিহিত করেন। চার প্রার্থীর মধ্যে এই বিতর্কেও আগের মতো অনুপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প। উপস্থিত চার প্রার্থী হলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি’স্যান্তিস, বায়োটেক বিষয়ক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী এবং নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি।
গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধকে তারা চারজনই জোর সমর্থন করেছেন। বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাদের মধ্যে গভীর ব্যবধান দেখা দেয়। ক্রিস্টি এবং নিকি হ্যালিকে সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রামাস্বামী। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক। তার এ ভূমিকার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে আক্রমণ করেন।
তবে ট্রাম্পের সমালোচনা করে ক্রিস্টি বক্তব্য শুরু করতেই দর্শকরা তাকে দুয়োধ্বনি দেন। আলাবামা রাজ্যে বুধবার রাতে ছিল রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিতর্ক। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে তা। এ সময় ট্রাম্প প্রসঙ্গে মডারেটর প্রশ্ন করতে তা এড়িয়ে যান নিকি হ্যালি, রন ডি’স্যান্তিস ও বিবেক রামাস্বামী। শুধু ক্রিস ক্রিস্টি সরাসরি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আরেক দফা ক্ষমতা ব্যবহার করতে চান ট্রাম্প। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে ফ্রন্টরানার ট্রাম্প। তার সমর্থন দুই অংকের। তা কোনো প্রার্থী অতিক্রম করতে সক্ষম হননি। ট্রাম্প রিপাবলিকান বিতর্কে অংশ নেবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। বার বার এই বিতর্ক বন্ধ রাখার জন্য তিনি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিতর্কে উপস্থিত না থাকলেও তাকে আক্রমণ করে ক্রিস ক্রিস্টি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড ট্রাম্প) একজন স্বৈরশাসক। বিবিসি লিখেছে, মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার প্রেসিডেন্সির ক্ষমতাকে ব্যবহার করার বিষয় উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথমদিন ছাড়া তিনি স্বৈরশাসক হবেন না। ট্রাম্পের এমন অবস্থানের কারণে ক্রিস্টি ওই মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন সমালোচনা তুললেও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি’স্যান্তিসকে নিজের সঙ্গে জোড়া লাগাতে ব্যর্থ হন ক্রিস্টি।
এক সময় ডি’স্যান্তিসের মিত্র এবং ফ্লোরিডার বাসিন্দা ছিলেন ট্রাম্প। তার থেকে তিনি নিজেকে আলাদা করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি সুর নরম করে মেনে নেন, রিপাবলিকনা ফ্রন্টরানার মনে করতে পারেন তিনি আরেক মেয়াদ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য খুব বেশি বয়সী। তাই তিনি আগামী প্রজন্মের নেতাদের সমর্থন দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানো নিয়ে কথা বলছি, যার বয়স ৮০ বছর। এতে কোনো প্রভাব পড়বে না এমন না।
ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন মিস নিকি হ্যালি। তিনি চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থতার জন্য ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। ট্রাম্প সাতটি মুসলিম দেশ থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। তার বিতর্কিত এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে নিকি হ্যালি বলেন, তিনি এক্ষেত্রে নতুন পলিসি নেবেন।
কিন্তু ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা না করার জন্য ক্রিস ক্রিস্টি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি বলেন, তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। কারণ, তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উচ্চাশা আছে। তারা তার প্রশাসনে যোগ দেয়ার বড় আশা করেন। এ সময় তিনি ট্রাম্প প্রসঙ্গে বলেন, তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করার চেয়ে বড় কোনো ইস্যু থাকতে পারে না। বলেন, ট্রাম্প একজন তিক্ত, ক্ষুব্ধ ব্যক্তি। তিনি এখন আবার প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন। এর কারণ, তার সঙ্গে যারা অমত হবে তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে চান।
ওদিকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডনাল্ড ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন মডারেটর মেগান কেলি। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। ফলে আবারও আক্রমণ করে বসেন ক্রিস ক্রিস্টি। কিন্তু ট্রাম্পের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানান বায়োটেক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামী। উল্টো তিনি ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পক্ষে অবস্থান নেন। কতিপয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন। তিনি বলেন, কে বলতে পারে ৬ই জানুয়ারির সেই ঘটনা ভিতর থেকে ঘটানো হয়নি?
বিতর্কের পর ট্রাম্পের তহবিল সংগ্রহ বিষয়ক মুখপাত্র এই বিতর্ককে সময়, অর্থ এবং শক্তির সবচেয়ে বড় অপচয় বলে অভিহিত করেন। সূত্র : মানবজমিন
নাছরিন/হককথা