নিউইয়র্ক ১২:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত করবে সরকার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৭৭ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ নির্ধারিত আছে। অর্থবছরজুড়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার ব্যয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির এই রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে; কিন্তু এরই মধ্যে অর্থবছরের পাঁচ মাস পার হয়েছে। এ মুহূর্তের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানান দিচ্ছে, বাজেটের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিদ্যমান বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতি শুরু থেকেই সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। বাকি সময়ও প্রত্যাশিত সাড়া মিলবে—সরকারও এখন এমনটা মনে করছে না।

এর মানে হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ খাত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন সংগ্রহ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলোতে কিছুটা কাটছাঁটের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বাজেটের মূল ফোকাস মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবতার নিরিখে পুনর্নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধন পর্যায়ে এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ শতাংশে নির্ধারণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী হারকেও কিছুটা নামিয়ে ৭ শতাংশের মধ্যে যে কোনো স্তরে পুনর্নির্ধারণের চিন্তাভাবনা চলছে।

বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সার্বিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা মূল্যায়নে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে চলতি অর্থবছর প্রথমবার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে দেশে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণবিষয়ক তথ্যও উপস্থাপন করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কর, বাজেট এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতির প্রভাব সম্পর্কে কাউন্সিলের নজরে আনবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বাণিজ্য ও শুল্ক নীতির প্রভাব কাউন্সিলে উপস্থাপন করবে বাণিজ্য সচিব। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, সার্বিক আমদানি পরিস্থিতিসহ অর্থনীতির হাল তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতি তুলে ধরবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় (জিইডি) সচিব তুলে ধরবেন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হালনাগাদ চিত্র।

সবশেষে বৈঠকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব, মুদ্রা ও বহিঃখাতের অর্থনীতির চলকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করা হবে। এরপর ক্ষেত্রভেদে অর্থনীতির কোনো কোনো সূচকের লক্ষ্য সংশোধন বা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে সেই অনুযায়ী সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও পুনর্নির্ধারিত হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী বছরের বাজেটে ব্যয়ের যে আকার ধরা হয়েছে, অর্থনীতির আকার অনুযায়ী সেটি যথার্থই ছিল। তবে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরকারকেও কৃচ্ছ্রর মধ্যে যেতে হচ্ছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এই সময়ের বাস্তবতায় উচ্চাভিলাষী বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় দেশে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতিকে কিছুটা কমিয়ে আনা গেলেও, তা বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। এমন বাস্তবতায় অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তার আওতায় বাজেটের কিছু লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের হিসাবে শুধু অক্টোবরেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের চার মাসের হিসাবে সেটি ১২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নভেম্বরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং অক্টোবরে কমেছে ১৪ শতাংশ। একইভাবে নভেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অক্টোবরে এটি কিছুটা বাড়লেও তার আগের তিন মাস ধারাবাহিক কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের (ডলার) ঊর্ধ্বগতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশ ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, যা বিনিয়োগে ধীরগতির লক্ষণ। সব মিলিয়ে দেশীয় অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের গতিও বেশ নিম্নমুখী, যা ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতিও কম। মজুরি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়লেও সর্বত্র বেড়েছে ব্যয়। এতে আয়বৈষম্য প্রকট হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় ডাবল ডিজিটের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশ। অন্যদিকে বাড়তি খরচের চাপে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঋণের বোঝাও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। তদুপরি নতুন বৈদেশিক ঋণ পওয়ার চেয়ে সুদাসলে আগের পাওনা পরিশোধেই খরচ হচ্ছে বেশি। আর খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক হার সরকারের দেশীয় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দিয়েছে। আবার ঋণের নীতি সুদহারও দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনীতিতে এ ধরনের চাপের মুখে নিশ্চিতভাবেই মোট দেশজ উৎপাদন কমবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, অর্থনীতির থিওরি পরিষ্কার। মূল্যস্ফীতি বাগে রাখতে চাইলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। একসঙ্গে দুটির লক্ষ্য অর্জন হবে না। কারণ, প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যয় বাড়াতে হবে। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকলে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তো বিদ্যমান অর্থনীতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এ অবস্থায় সরকার যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার পুনর্নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়ে থাকে, তাহলে সেটি হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাই মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হবে; কিন্তু সবার আগে মূল সমস্যায় নজর দিতে হবে। আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামাতে চাই। এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প দেখছি না। ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে মানুষ আগের চেয়ে কম ঋণ নেবে। আবার যাদের কাছে উদ্বৃত্ত টাকা আছে, তারা বেশি মুনাফার আশায় ব্যাংকে টাকা রাখবে। এতে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে আবারও সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সূত্র : কালবেলা

নাছরিন/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত করবে সরকার

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

হককথা ডেস্ক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ নির্ধারিত আছে। অর্থবছরজুড়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার ব্যয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার অর্থনীতির এই রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে; কিন্তু এরই মধ্যে অর্থবছরের পাঁচ মাস পার হয়েছে। এ মুহূর্তের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানান দিচ্ছে, বাজেটের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে বিদ্যমান বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতি শুরু থেকেই সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। বাকি সময়ও প্রত্যাশিত সাড়া মিলবে—সরকারও এখন এমনটা মনে করছে না।

এর মানে হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ খাত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন সংগ্রহ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলোতে কিছুটা কাটছাঁটের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বাজেটের মূল ফোকাস মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবতার নিরিখে পুনর্নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধন পর্যায়ে এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ শতাংশে নির্ধারণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী হারকেও কিছুটা নামিয়ে ৭ শতাংশের মধ্যে যে কোনো স্তরে পুনর্নির্ধারণের চিন্তাভাবনা চলছে।

বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সার্বিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা মূল্যায়নে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে চলতি অর্থবছর প্রথমবার এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে দেশে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণবিষয়ক তথ্যও উপস্থাপন করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কর, বাজেট এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নীতির প্রভাব সম্পর্কে কাউন্সিলের নজরে আনবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বাণিজ্য ও শুল্ক নীতির প্রভাব কাউন্সিলে উপস্থাপন করবে বাণিজ্য সচিব। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, সার্বিক আমদানি পরিস্থিতিসহ অর্থনীতির হাল তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতি তুলে ধরবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় (জিইডি) সচিব তুলে ধরবেন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হালনাগাদ চিত্র।

সবশেষে বৈঠকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব, মুদ্রা ও বহিঃখাতের অর্থনীতির চলকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পর্যালোচনা করা হবে। এরপর ক্ষেত্রভেদে অর্থনীতির কোনো কোনো সূচকের লক্ষ্য সংশোধন বা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে সেই অনুযায়ী সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও পুনর্নির্ধারিত হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী বছরের বাজেটে ব্যয়ের যে আকার ধরা হয়েছে, অর্থনীতির আকার অনুযায়ী সেটি যথার্থই ছিল। তবে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরকারকেও কৃচ্ছ্রর মধ্যে যেতে হচ্ছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এই সময়ের বাস্তবতায় উচ্চাভিলাষী বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় দেশে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতিকে কিছুটা কমিয়ে আনা গেলেও, তা বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। এমন বাস্তবতায় অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তার আওতায় বাজেটের কিছু লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের হিসাবে শুধু অক্টোবরেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের চার মাসের হিসাবে সেটি ১২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নভেম্বরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং অক্টোবরে কমেছে ১৪ শতাংশ। একইভাবে নভেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অক্টোবরে এটি কিছুটা বাড়লেও তার আগের তিন মাস ধারাবাহিক কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের (ডলার) ঊর্ধ্বগতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশ ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, যা বিনিয়োগে ধীরগতির লক্ষণ। সব মিলিয়ে দেশীয় অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের গতিও বেশ নিম্নমুখী, যা ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতিও কম। মজুরি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়লেও সর্বত্র বেড়েছে ব্যয়। এতে আয়বৈষম্য প্রকট হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় ডাবল ডিজিটের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশ। অন্যদিকে বাড়তি খরচের চাপে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঋণের বোঝাও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। তদুপরি নতুন বৈদেশিক ঋণ পওয়ার চেয়ে সুদাসলে আগের পাওনা পরিশোধেই খরচ হচ্ছে বেশি। আর খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক হার সরকারের দেশীয় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দিয়েছে। আবার ঋণের নীতি সুদহারও দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনীতিতে এ ধরনের চাপের মুখে নিশ্চিতভাবেই মোট দেশজ উৎপাদন কমবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, অর্থনীতির থিওরি পরিষ্কার। মূল্যস্ফীতি বাগে রাখতে চাইলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। একসঙ্গে দুটির লক্ষ্য অর্জন হবে না। কারণ, প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যয় বাড়াতে হবে। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকলে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তো বিদ্যমান অর্থনীতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এ অবস্থায় সরকার যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার পুনর্নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়ে থাকে, তাহলে সেটি হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাই মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হবে; কিন্তু সবার আগে মূল সমস্যায় নজর দিতে হবে। আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামাতে চাই। এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প দেখছি না। ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে মানুষ আগের চেয়ে কম ঋণ নেবে। আবার যাদের কাছে উদ্বৃত্ত টাকা আছে, তারা বেশি মুনাফার আশায় ব্যাংকে টাকা রাখবে। এতে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে আবারও সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সূত্র : কালবেলা

নাছরিন/হককথা