অবশেষে বিদায় নিলেন ড. আতিউর ॥ সরিয়ে দেয়া হল ব্যাংকিং সচিবকেও ॥ দুই ডেপুটি গভর্নরকে অব্যাহতি
- প্রকাশের সময় : ০৯:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০১৬
- / ৯৫৬ বার পঠিত
ঢাকা: অবশেষে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। রিজার্ভের অর্থ চুরির তথ্য গোপন করায় তীব্র চাপ আর সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) তাকে এ পদ ছাড়তে হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর সাংবাদিকদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে অনেক কথা বললেও এত বড় জালিয়াতির তথ্য কেন এতদিন গোপন রেখেছিলেন সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি, অনেকটা ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।
অবশ্য রিজার্ভ চুরির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে গভর্নর ভুল করেছেন। এজন্য প্রয়োজনে তিনি দেশের মানুষের কাছেও ক্ষমা চাইবেন। মঙ্গলবার সকালে টেলিফোনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে বিদায়ী গভর্নর অনেকটা এভাবে নিজের দায় স্বীকার করে নেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া এ ঘটনায় দায়িত্বহীনতার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অপসারণ করা হয়েছে। সরিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব ড. এম আসলাম আলমকেও। যদিও চাঞ্চল্যকর এ অর্থ চুরির ঘটনায় জনমনে যাদের ঘিরে সন্দেহের মাত্রা বেশি তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে সোমবার (১৪ মার্চ) দিনভর যে গুঞ্জন ছিল মঙ্গলবার তা বাস্তবে ধরা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ওই দিন (সোমবার) বিকালে ভারত থেকে বিমানে উঠার আগেই ড. আতিউর রহমানের কাছে সরকারের কঠোর মনোভাবের চূড়ান্ত বার্তাটি পৌঁছে যায়। আর তখনই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। যে কারণে ঢাকায় নেমে তিনি আর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দিতে চেয়েছিলেন। তার কাছে সন্তোষজনক জবাব ছিল না বলেই অর্থমন্ত্রীর মুখোমুখি হয়ে নতুন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাননি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ না করলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে তার ব্যর্থতার বিভিন্ন খতিয়ান ঠিকই তুলে ধরতেন অর্থমন্ত্রী। তবে সকালে মন্ত্রীর দফতরে খবর আসে পদত্যাগের উদ্দেশ্যে গভর্নর দুুপুরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এজন্য বেলা ১১টায় অর্থমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনটি পরিবর্তন করে বেলা আড়াইটায় নেয়া হয়। যদি ওই সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করতেন তাহলে অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনটি যথারীতি হওয়ার কথা ছিল। আর যখন দুুপুরেই পদত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায় তখন বিকালের সংবাদ সম্মেলনটি বাতিল করা হয়।
গভর্নর আতিউর রহমানের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক ধরনের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। আছে স্থবিরতাও। অনেকের মধ্যে অপসারিত হওয়া ছাড়াও গ্রেফতার আতংক পর্যন্ত ভর করেছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য মনস্থির করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বলতেও ভয় পাচ্ছেন। পর্দার আড়ালে থাকা এমন সব তথ্যের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। অধিকতর যোগ্য হয়েও এতদিন যারা কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন তারা এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তবে আপাতত নাম প্রকাশ করে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না তারা। এ সারির কয়েকজন আরও জানান, নতুন গভর্নর যোগ দেয়ার পর তারা পরিস্থিতি ও পরিবেশ বুঝে পর্যায়ক্রমে মুখ খুলবেন। কেউ কেউ জানান, কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার ফাঁদে পড়ে ড. আতিউর রহমানের মতো একজন সজ্জন মানুষকে এভাবে বিদায় নিতে হল। তবে তিনি নিজে যতই বলুন না কেন, ‘বীরের মতো বিদায় নিয়েছেন’ বাস্তবতা তা বলে না। বাস্তবে তাকে তো একটি কলংকজনক অধ্যায়ের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে সরে যেতে হল। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের আর্থিক কেলেংকারির দায়ও তিনি এড়াতে পারবেন না। তবে পর্দার আড়ালে থেকে যারা এতদিন তার এ ব্যর্থতার পটভূমি তৈরি করেছেন তারা এখনও দিব্যি বহাল-তবিয়তে আছেন। মোদ্দা কথা, ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার।’ এ বিবেচনায় গভর্নর আতিউর রহমানের শেষটা নিশ্চয় ভালো হয়নি।
কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানান, রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির এ ঘটনার পর গভর্নর আতিউর রহমানের ভারত সফরসূচি স্থগিত করতে হতো। কিন্তু দেশজুড়ে যখন বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে তখন তিনি অনেকটা স্বাভাবিকভাবে ভারত সফরে গেছেন। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ অনেকেই এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কর্মশালায় যোগ দিতে তিনি ৪ দিনের সফরে ভারত যান ১০ মার্চ। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, সাংবাদিকদের কাছে ড. আতিউর রহমান রিজার্ভের আকার বাড়ানোর যে কৃতিত্ব দাবি করেছেন তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা মনে করেন, এজন্য অন্যতম কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারেন আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যারা বিদেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে বিপুল অংকের রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। বাকি কৃতিত্ব দেশীয় উদ্যোক্তাদের- যারা পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন।
এদিকে অর্থ চুরির ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার শুরুতে উনি যদি বিষয়টি দ্রুত সরকারের নজরে নিয়ে আসতেন তাহলে অনেক আগেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা সহজ হতো। কিন্তু গভর্নর এভাবে এতবড় অপরাধের ঘটনা গোপন রেখে শুধু অনেক প্রশ্ন আর রহস্যেরই জন্ম দেননি তদন্তকেও বাধাগ্রস্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, এখন তদন্তের স্বার্থে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কেননা, এ রকম ঘটনা পৃথিবীর কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সরকারকে না জানিয়ে গোপন রাখতে পারেন না।
ফোনালাপে দায় স্বীকার: মঙ্গলবার সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন ড. আতিউর রহমান। এ সময় মন্ত্রী তাকে জানান, তিনি পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা ভালো হবে। তবে মন্ত্রীকে ড. আতিউর রহমান বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে তিনি ভুল করেছেন। এজন্য প্রয়োজনে দেশের মানুষের কাছেও তিনি ক্ষমা চাইবেন। তবে অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দেখছেন।
আলোচিত ব্যর্থতা: নানা সাফল্যের দাবি করলেও আলোচিত অনেক ব্যর্থতার দায়ও ড. আতিউর রহমানকে নিতে হবে। যেমন তার আমলেই সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় হলমার্ক। এছাড়া সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক থেকেও ৬ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১২শ’ কোটি টাকা নিয়ে গেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপ। এছাড়া গ্রাহকের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ডেসটিনি। অন্যদিকে শেয়ারবাজার লুটের পেছনে তার সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। আর ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা এক রকম আত্মসাৎ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন অনেকে। এ কারণে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বোঝায় একেবারে কাবু হয়ে গেছে। এর দায়ও তাকে নিতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ তিনটি। এগুলো হল- মুদ্রানীতি প্রণয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং খাতের শৃংখলা ফেরানো। কিন্তু এসব কাজ বাদ দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ, বিভিন্ন পুরস্কার নেয়া এবং গরিববান্ধব বাংলাদেশ ব্যাংক গড়ার শ্লোগানে তিনি সোচ্চার ছিলেন বেশি। এতে করে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনা তো দূরের কথা, বরং ব্যাংকিং সেক্টরকে ভয়াবহ দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল চরমে। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকও কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পরিবর্তে মাফিয়াদের হাতে চলে গেছে পুরো ব্যাংকিং খাত। তাই প্রায় ৭ বছর দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিলেও ড. আতিউর রহমানকে বহু কেলেংকারির দায় এবং এসব ব্যর্থতা কোনোদিন পিছু ছাড়বে না।
অর্জন: গভর্নর থাকাকালে ড. আতিউর রহমানের বেশ কিছু অর্জনও আছে। এ সময় তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ইউরো মানির পক্ষ থেকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গভর্নরের পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বর্গাচাষীদের ঋণের ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি মিউজিয়াম তৈরিসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে তার।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের ব্রিফিং: মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ড. আতিউর রহমান। সেখান থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের কক্ষে যান। ওই দফতরে কিছুক্ষণ অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগ করেন।
ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনাকাঙ্খিনার পরিপ্রে আতিউর রহমান সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে গভর্নর পদ থেকে ইস্তফা দেন। প্রনমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।’ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মামুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগকে সাহসী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আতিউর রহমানের পদত্যাগকে ‘নৈতিক মনোবল’ ও ‘সৎ সাহসের’ বিরল দৃষ্টান্ত বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। ইহসানুল করিম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ড. আতিউর রহমানের অবদান উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশেষ করে তার (আতিউর রহমান) সময়ে রিজার্ভ বৃদ্ধি ও ব্যাংকিং সেবা খাত আরও গতিশীল হয়েছে।’ রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার অপরাধের ধারায় ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মেয়াদ: মেয়াদ শেষ হওয়ার সাড়ে ৪ মাস আগেই পদত্যাগ করলেন ড. আতিউর রহমান। ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল দশম গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ পান তিনি। ২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন। ৪ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪ সালে তার মেয়াদ আবারও ৩ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ২ আগস্ট তার দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা। এদিন তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হবে। বাংলাদেশে নিয়মানুসারে গভর্নরের সর্বোচ্চ বয়স ৬৫ বছর। এর ঊর্ধ্বের কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে থাকতে পারেন না।
ব্যাংকিং সচিবকেও বিদায়: এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সচিব যেহেতু এ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, তাই তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তাকে ওএসডি (বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কোনো উত্তর দেননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি। সূত্র বলছে, আজ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
দুই ডেপুটি গভর্নরের অপসারণ: দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো অফিস আদেশ না হলেও মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এদের মধ্যে আবুল কাশেম অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগ এবং নাজনীন সুলতানা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পরিপত্র জারি করে এ পদে নতুনভাবে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অব্যাহতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা বলেন, এ ব্যাপারে এখনও আমাকে চূড়ান্তভাবে কিছু জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছি। নাজনীন সুলতানা এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী নতুন মেয়াদে ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পান। ১৪ জুলাই তার এ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। আর আবুল কাশেমের চাকরির বাড়তি মেয়াদও আগস্টে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
৪ ঘণ্টার গভর্নর: আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেমকে অন্তর্বর্তীকালীন গভর্নরের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিকাল ৪টায় অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান আবুল কাশেমকেও অপসারণ করা হচ্ছে।
যিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন: সূত্র জানায়, ঘটনার পর অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বদরুল হক খান পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। পদত্যাগপত্রে তিনি দেখিয়েছেন, তার বড় ধরনের একটি চাকরির অফার রয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠানে এ চাকরি তা তিনি উল্লেখ করেননি। শেষ পর্যন্ত তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন তার এই পদত্যাগ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পেছনের কথা: জানা গেছে, ২৯ ফেব্রুয়ারী ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এতে আরও জানানো হয়েছিল, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের অ্যাকাউন্টে নেয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে। তবে শ্রীলংকার ব্যাংকের স্থানান্তরের চেষ্টা করা ২ কোটি ডলার আটকানো সম্ভব হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনা তদন্ত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সই অর্থ লোপাটের তদন্তে ফায়ারআইকে সম্পৃক্ততার কথা জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ হ্যাকাররা কিভাবে চুরি করল, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ ঘটনার ১ মাস পর পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীকে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। (দৈনিক যুগান্তর)