শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সমাহিত কবি রফিক আজাদ
- প্রকাশের সময় : ০৭:১৩:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬
- / ৯৭২ বার পঠিত
ঢাকা: মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধাকে সঙ্গী করে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চির শয়ান নিলেন প্রেম ও সংগ্রামের কবি মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদ। ১৪ মার্চ সোমবার বিকেলে সমাহিত করা হয় তাঁকে। এর আগে সকালে ও দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও বাংলা একাডেমি আঙিনায় কবিকে জানানো হয় দুই দফা শ্রদ্ধার্ঘ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয় তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন এলাকায়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবি, কবিতানুরাগী, স্বজন, সতীর্থ, চিত্রশিল্পী, মন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, প্রকাশকসহ সর্বসাধারণ তাঁকে জানালেন বিদায়ী সম্ভাষণ। শেষ যাত্রায় বিশিষ্টজনদের জবানে উচ্চারিত হলো মুক্তিযোদ্ধা কবির দেশপ্রেম ও কবিতাকীর্তির কথা। তাঁকে নিয়ে শোক বইয়ে লেখা হলো শোকগাথা। সোমবার সকাল ১০টায় বারডেমের হিমাগার থেকে কবির মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। মরদেহ গ্রহণ করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা জেলা পরিষদের ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর মোহাম্মদ আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল কবিকে প্রদান করে গার্ড অব অনার। বিউগলে ভেসে বেড়ায় করুণ সুর। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকায় আবৃত করা হয় স্বদেশের প্রতি অন্তঃপ্রাণ কবিকে। সব শেষে শোক জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কবির মরদেহের পাশে উপস্থিত ছিলেন জীবনসঙ্গী দিলারা হাফিজ, চার ছেলে অভিন্ন আজাদ, অব্যয় আজাদ, ইয়াসির রাহুল ও ইয়ামিন রাজীব, ভাতিজি নীরু শামসুন্নাহারসহ স্বজনরা।
শহীদ মিনারে এই নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরুর কিছুক্ষণেই ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের গগন শিরীষগাছের নিচে কবির কফিনটি। আর গগন শিরীষগাছের ডান পাশে রাখা হয় শোক বই।
ব্যক্তিগতভাবে শহীদ মিনারে কবি রফিক আজাদকে শ্রদ্ধা জানান সৈয়দ শামসুল হক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম ও নিসার হোসেন, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, কবি নাসির আহমেদ, কামাল চৌধুরী, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো, আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, মাহবুব সাদিক, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মঈনুল আহসান সাবেরসহ অনেকে।
সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ছাত্র মৈত্রী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী,গ্রাম থিয়েটার, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, প্রান্তজনের সখা, যাত্রাশিল্পী উন্নয়ন পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, শিল্পিত, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, স্রোত আবৃত্তি সংসদ, বহ্নিশিখা, শ্রাবণ প্রকাশনী, পথনাটক পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় জাদুঘর, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম, গীতিকবি পরিষদ, নৃত্যশিল্পী সংস্থা, উদীচী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন চলাকালে কবির সহধর্মিণী দিলারা হাফিজ বলেন, ‘আমি ঋষিতুল্য মানুষের সঙ্গে বাস করেছি। আমি একজন অতি ক্ষুদ্রতম মানুষ হয়ে প্রতিনিয়ত তাঁর কাছ থেকে মানুষ হওয়ার শিক্ষা নিয়েছি। ধারণ করেছি দেশপ্রেম ও মানবিকবোধ।’
দুপুর ১টার পর বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য কবি, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং একাডেমির সাবেক উপপরিচালক সদ্য প্রয়াত কবি রফিক আজাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ সোমবার দুপুর ১২টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একাডেমির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে মারা যান রফিক আজাদ। এদিকে ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমি ও জাতীয় কবিতা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে কবি রফিক আজাদ স্মরণে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। (দৈনিক কালের কন্ঠ)