বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণে শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক
- প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
- / ৫১ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে, তাদের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক শ্রমিক অধিকার কর্মীর নামও উদাহরণ হিসেবে টানা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য বড় সতর্কবার্তা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের করণীয় নির্ধারণে শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসবে পররাষ্ট্র, শ্রম, বাণিজ্য, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার এ ধরনের ঘোষণা আসে। এর পর শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না। তবে আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়গুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসবে। তার পর অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিনক্ষণ ঠিক করে চলতি সপ্তাহেই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হতে পারে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী সমকালকে বলেন, দেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আসে। শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলও সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইইউ ও আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশের রোডম্যাপ অনুযায়ী ৮০ শতাংশের বেশি অর্জন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে তারা বৈঠক করবেন। শ্রমিক অধিকারের আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো আইন মন্ত্রণালয় দেখে থাকে। প্রয়োজনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শ্রমিক অধিকার রক্ষায় ইতোমধ্যে শ্রম আইন সংশোধনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে আরও কোনো ঘাটতি রয়েছে কিনা বিষয়টি নিয়ে শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হবে। এর পর যদি কোনো ঘাটতি উঠে আসে, সেটি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সুতরাং এ বাজার বাণিজ্যে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি হলে সার্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তাই কোনোভাবেই যাতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর না হয় সেটি এখন তাদের অগ্রাধিকার।
অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এত উচ্চ পর্যায় থেকে যেভাবে সুনির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক নেত্রীর নাম উল্লেখ করে কথা বলা হয়েছে, তা কিছুটা বিস্ময় এবং বড় উদ্বেগের। এ রকম সুনির্দিষ্ট করে সাধারণত বলা হয় না। সরকার এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের আরও আগেই এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনকে আরও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যেত। যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি দেখে মনে হয় বিষয়টি এখন আর কেবল মজুরি ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তিনিও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেন। সূত্র : সমকাল
হককথা/নাছরিন