উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন : সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়
- প্রকাশের সময় : ০১:১৯:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
- / ৫৪ বার পঠিত
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে ২৮ অক্টোবর আশঙ্কা ছিল জনমনে। তবে দেশের সুশীল সমাজের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজর আছে, এ বিবেচনায় অনেকেই আশা করেছিলেন এ দফায় ব্যতিক্রমী কিছু হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এর উলটো চিত্র। রাজধানীতে শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘাত ও সহিংসতা ঘটতে দেখা যায়। পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষ নয়াপল্টন, পল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে এসব এলাকা যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ দুজন নিহত হন। আর আহত হন তিন শতাধিক। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ কয়েকটি পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। এছাড়া পুলিশ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে থাকা অ্যাম্বুলেন্সসহ সাতটি যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, বিআরটিসির বাসসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্ড হয়ে যায় বিএনপির মহাসমাবেশও। দলের পক্ষ থেকে রোববার হরতালের ডাকও দেওয়া হয়।
শনিবারের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি পালটাপালটি অভিযোগ করছে। এদিকে, নানা কাজে বের হওয়া সাধারণ নগরবাসী যানবাহনের অভাবে পড়েন ভোগান্তিতে। সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কও ছড়িয়েছে সবার মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আন্দোলনকে এমন সহিংস রূপ নিতে দেখেনি জনগণ, তাই ভবিষ্যতে ক্ষমতাকেন্দ্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণতি কোথায় গড়াবে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা বাড়ছে। নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশিদের নানা তৎপরতা সত্তে¡ও রাজনৈতিক উত্তেজনা কমতে দেখা যাচ্ছে না। দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান সংকটকে ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, পালটাপালটি আলটিমেটামের পরিণতি হয় ভয়াবহ। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করা না যায়, তার মাশুল দিতে হবে পুরো জাতিকে। পরিতাপের বিষয়, দেশে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির দামবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেললেও রাজনীতির মাঠ এখন ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
গণতান্ত্রিক দেশে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলকেই জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নগরজীবনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণ হয়, সেটা তাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। দেশের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের স্বার্থরক্ষা। পাশাপাশি দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভোগান্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তার অবসান হওয়া দরকার। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী, দুপক্ষই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপের টেবিলে বসবে-এটাই প্রত্যাশা। (দৈনিক যুগান্তর)