আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক

- প্রকাশের সময় : ০৯:৪৩:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৯ বার পঠিত
বিনোদন ডেস্ক : দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো সময়। আগামী শুক্রবারই দেশের শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহুল আলোচিত বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। মহান এই নেতাকে হত্যা করার ৪৬ বছর পর সিনেমাটি নির্মাণ করেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ এবং দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারজয়ী উপমহাদেশের বরেণ্য নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্র বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারির কারণে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অবশেষে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে মুক্তির সব ধাপ অতিক্রম করে আসছে শুক্রবারই দর্শকের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে সিনেমাটি। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন দর্শক, সুধীমহল, চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এমনকি প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মধ্যেও বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এই বায়োপিকে বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীরাও মুখিয়ে রয়েছেন সিনেমাটির মুক্তির জন্য। উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি অনেকটা সংশয়ও কাজ করছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে। কি হবে, কেমন হবে, দর্শকরাই বা কীভাবে গ্রহণ করবে এরকম নানা কৌতূহল কাজ করছে তাদের মনে।
অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে বাংলায় রূপায়িত এই ঐতিহাসিক সিনেমায় প্রায় দেড় শত চরিত্রের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি শিল্পী অভিনয় করেছেন।
বাংলাদেশের ৬০ ভাগ ও ভারতের ৪০ ভাগ ব্যয়ে নির্মিত এই বায়োপিকের শুটিং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে শুরু হয়ে ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে শেষ হয়। গত বছর ২০২২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার এবং ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেইলার প্রকাশ করা হয়। এছাড়া গত মাসে কানাডার বিশ্বখ্যাত টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা অর্জন করে ঐতিহাসিক এই চলচ্চিত্রটি। ৪৮তম টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সপ্তম দিনে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক প্রদর্শনের আগে সিনেমার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাঙালিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে অদম্য সংগ্রাম, জাতির জন্য যে ত্যাগ, এই সিনেমার মাধ্যমে সেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কীভাবে একটি জাতির রূপকার হলেন, এই সিনেমার মাধ্যমে তা নতুন প্রজন্ম জানবে, বিশ্ববাসী জানবে।’
এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতে ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে বায়োপিকের পরিচালক, শ্যাম বেনেগাল বলেন, ‘আমি নিশ্চিত শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা সারা বিশ্বের মানুষের অন্তরে প্রতধ্বনিত হবে।’ একটি জাতি গঠনের এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প বলতে পারা তার জন্য বিরল সম্মানের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই প্রিমিয়ার শোতেও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ। বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য অদম্য ভালোবাসা এবং দেশ ও জনগণের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরার জন্য এই বায়োপিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ও ভারতের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর সর্বশেষ ৫ অক্টোবর ট্রেইলার প্রকাশ পায় ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটির। আর ট্রেইলার প্রকাশের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বায়োপিকটি। অনেকেই এর ভূয়সী প্রশংসা করলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির একাংশ আবার ট্রেইলারের কয়েকটি দৃশ্যের সমালোচনা করেছেন।
ট্রেইলারে তিনটি ভুল বিষয় উপস্থাপন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লীগের সভাপতি ও লায়ন সিনেমাসের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ট্রেইলারে আমার চোখে তিনটা ভুল ধরা পড়েছে। (এক) বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নামার সময় লাল কার্পেট বিছানো; যা সে সময়ে ছিল না, (দুই) উনি নেমে মাটিতে সেজদা করছেন; যেটা সেদিন তিনি করেননি, (তিন) ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলির সময় বঙ্গবন্ধু কখনোই ছিলেন না, কারণ সে সময় তিনি জেলখানায় বন্দি ছিলেন।’ এক ট্রেইলারে তিনটি ভুল থাকায় তিনি সংশয় প্রকাশ করে জানান, ‘পুরো ছবিতে না জানি এমন আরও কত ভুল আছে! এই ছবি রিলিজের পর যে সমালোচনা হবে তা কখনোই কাম্য না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমিও শুনেছি এমন ভুলের কথা। বাস্তবতা হলো বঙ্গবন্ধু জীবনে একবারই মাটিতে কপাল ছুঁয়েছেন। তাকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় তখন। এছাড়া জীবনে আর কখনই মাথা নোয়াননি। তোফায়েল আহমেদ এখনও জীবিত তিনি এর প্রত্যক্ষদর্শী। এমন ভুলগুলো এড়ানো দরকার ছিল।’
তবে এসব ছোটখাটো ভুলকে ছাপিয়ে ইতিবাচক আলোচনাই বেশি হচ্ছে চলচ্চিত্র মহলে। এর অভিনয়শিল্পীরাও ফেসবুকের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সিনেমাটির প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই। বহুল প্রতীক্ষিত মুজিব : একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ সময়ের আলোচিত অভিনেতা আরেফিন শুভ। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি একজন চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্র শিল্পী। এত বড় একজন মানুষের বায়োপিকে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত, এটা আমার অনেক বড় একটা অর্জন। শুধু বাঙালির কাছে নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও বঙ্গবন্ধু একজন সৎ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সুপরিচিত বিশ্বপ্রিয় নাম। এই মহান মানুষটিকে কিছু সময়ের জন্য ধারণ করার সুযোগ পেয়েছি। এটা যে কত বড় সম্মানের, বলে বোঝাতে পারব না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে বর্ণাঢ্য জীবন, তা অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সুযোগ পাওয়াটা যে কোনো শিল্পীর জন্য এক বিরল সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন, অভিনয়ের খুব অল্প বয়সে যাকে উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন ছবিটির প্রস্তাব পেয়েছি, তখন থেকেই আমার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত ধরনের ভিডিও ও তথ্যচিত্র রয়েছে, সবই দেখেছি। তার দেওয়া ভাষণ যে কতবার দেখেছি কোনো হিসাব নেই। আমি এই সিনেমার জন্য পারিশ্রমিক নিয়েছি মাত্র ১ টাকা।’ এই বায়োপিকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া ও জান্নাতুল সুমাইয়া এবং বঙ্গমাতার চরিত্রে রয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন চরিত্রে দিলারা জামান, শেখ রেহানার চরিত্রে সাবিলা নূর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, তাজউদ্দীন চরিত্রে রিয়াজ খন্দকার, মোশতাকের ভূমিকায় ফজলুর রহমান বাবু, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমানের চরিত্রে খায়রুল আলম সবুজ, এ কে ফজলুল হকের চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু, আবদুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং ছোট রেণুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদীন দীঘি। সূত্র : যায়যায়দিন