বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চাই
- প্রকাশের সময় : ১০:৫০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৬
- / ৭৮৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর একজন খুনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ব্যাপারে আইনি জটিলতা দূর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারী) তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানান। পরে একই দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
‘১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দম্ভ দেখেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দম্ভ ভেঙে দিয়েছেন। আর এটা শুধু শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা অনেক নেতা দেখেছি, যারা ভোল পাল্টে নানান ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলেন। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের পরেও অনেক কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার কোনো তুলনা হয় না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ্জ্জুামাল কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের চতুর্থতম নেতা, যিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তিনি পৃথিবীর যোগ্য নেতাদের মধ্যে ১৩তম নেতা। শেখ হাসিনা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পান না বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি যোগ্য নেতার যোগ্য কন্যা। তার হাতে আজ বাংলাদেশ। আমরা অনেক ষড়যন্ত্র দেখেছি। কোনো ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে পেছনে টানতে পারেনি।
পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমাদের দোষারোপ করা হয়েছিল যে আমরা নাকি পদ্মা সেতু নিয়ে চুরি করেছি। অথচ সমস্ত হিসাব নিকাশ করে দেখা গেলো সব ভুল। আজ সেই পদ্মা সেতু হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে বাংলাদেশের চেহারাও পাল্টে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজ আমাদের কোথাও হাত পাততে হয় না। আমরাই বরং এখন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর পরনির্ভরশীল নই। যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছিল আমরা কী চাই। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি আমরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। সন্ত্রাস দমনে আমরা শুধু তোমাদের সহযোগিতা চাই। আমরা সন্ত্রাস মোকাবেলা করছি। আইএস হোক আর জঙ্গী হোক আমরা সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আইএস আমাদের দেশে নেই। দু-একজন যা-ও আছেন তারা আইএস-এর কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে। আমরা তাদেরও সনাক্ত করেছি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকলে আমরা সেই তথ্য আদান-প্রদানে সহযোগিতা চেয়েছি।
জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আদালতে এ ব্যাপারে শুনানি চলছে। এটা এখন আদালতের বিষয়। এ ব্যাপারে আর কথা না বলাই ভাল। তবে জামায়াতের পেছনে কারা আছে তা সবাই ভাল করে জানে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এসময় তিনি ফায়ার সার্ভিস বিভাগের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন আর কেউ অভিযোগ করতে পারবে না যে আগুন নিভে গেলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছায়। পুলিশের মতই ভাল কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাসদ কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, আবুল কাশেম, সামসুদ্দিন আজাদ ও লুৎফুল কবীর, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ সভাপতি আব্দুল মুসাব্বির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা ও ফারুক আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস প্রমুখ।
এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনএ জানায়: অনুষ্ঠানে স্বারষ্ট্র মন্ত্রী কামাল আরো বলেন, দেশে কিছু একটা ঘটনা ঘটলেই বাংলাদেশের বিদেশী দূতাবাসগুলো থেকে কূটনীতিকরা বিভিন্ন কালারের (সাদা, নীল ও লাল) এলার্ট জারি করেন। যা হাস্যকর। অথচ তাদের দেশেই মানুষ গুলিতে মারা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে, বোমা ফুটছে। মজার বিষয় হচ্ছে কূটনীতিকদের এসব নানা রঙের এলার্ট আমলে নেয়নি বাংলাদেশের বিদেশী নাগরিকরা। যার প্রমাণ আমি নিজেও প্রত্যন্ত অঞ্চল হাতিয়ার নিঝুম দীপে অনেক বিদেশী পর্যটককে রাত কাটাতে দেখেছি। তাদের আমরা সতর্ক করার পরও তারা বলছে সমস্যা নেই, ভালো থাকবো। মন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে বিদেশী দূতাবাসগুলোর রেড এলার্ট জারিকে অগ্রহণযোগ্য এবং অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেন।
মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কামাল বলেন, একটা মিশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। সঙ্গত কারণে আপনাদের কাছে নাম বলছি না। তবে, এইটুকু বলতে পারি যে, হোয়াইট হাইজের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। আমি তাকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বঙ্গবন্ধুর একজন পলাতক খুনিকে দেশে ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছি। তিনি আমার আবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তা পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মাঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দক্ষতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। তিনি রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে পেট্রোল বোমার সংস্কৃতি চালু করেছেন। তার ওই হত্যাযজ্ঞ সংস্কৃতিকে দেশ ও জাতি প্রত্যাখান করেছে। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটূক্তি করেছেন। যা কাম্য নয়। আমি পরিস্কার করে বলতে চাই যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, দেশ বিরোধী কোন শক্তি তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। বাদল যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের দেশের চেয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী যা বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে গেছেন। সমালোচনা না করে আপনাদের সংবিধান ও আমাদের সংবিধান পড়ে দেখুন।
বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে জাসদ নেতা বাদল আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমরা অনেকের বিভিন্ন হুঁঙ্কার শুনেছি। ওমুকের ফাঁসি হলে এই হবে! তমুকের ফাঁসি হলে দেশে এই ঘটে যাবে। কিন্তু না, বস্তুত তা ঘটেনি। বিএনপির অনেক নেতা বলেছিলেন- সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হলে পুরো চট্টগ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে? প্রবাসীদের উদ্দেশ্য বলেন কই, আপনারা কী তা দেখেছন? তিনি বলেন, আমি বেশী বাজে করে বলতে চাই না। সাকা চৌধুরী ফাঁসিতে দেশ ধ্বংস তো দুরের কথা…‘একটা কাক-পক্ষীও পায়খানা করেনি’।
মাঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, অনেক দেশের নেতা ও সরকার প্রধান ফোন করেছেন শেখ হাসিনাকে। বান কি মুনের ফোনকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেয়নি। আমি এখনো বলছি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত এত সাহসী লীডার অতীতেও ছিলো না, আগামীতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যিনি কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে না বলেই আজকে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে গ্রহণযোগ্য একটি মডেল দেশের রূপ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডের সভাপতি আবদুল মুকিত চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা মমতাজ শাহনাজ সহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ’সহ দলের অন্যান্য সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল অনুষ্ঠানস্থলে পৌছলে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ‘শুভেচ্ছা স্বাগতম, কামাল ভাইয়ের আগমন’ সহ বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।