বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক বিফল

- প্রকাশের সময় : ১২:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০২৩
- / ১২১ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। ৭৮তম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ঐ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আর ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়ে আলোচনা হলেও বৈঠকটি সফল হয়নি। এনিয়ে ঢাকার দৈনিক মানবজমিন শনিবার (৭ অক্টোবর) বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এদিকে বৈঠকের ৮/৯দিন পর গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ঐ বৈঠকের খবর প্রকাশ হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের পাশাপাশি মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন বা কি কারণে-ই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বৈঠকটির খবর গোপন রাখা হলো? যেখানে জো বাইডেনের সাথে শেখ হাসিনা সেলফি তোলার খবর এতো ফলাও করে প্রকাশ হলো! আর কেনই বা বৈঠকটি যুক্তরাষ্ট্রের কোন অফিব বা প্রধানমন্ত্রীর হোটল স্যুইটে না হয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে হলো? বৈঠকটিতে দেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বা নোবেল পুরষ্কার জয়ী প্রফেসর ইউনূস প্রসঙ্গ আসলো? এমনকি কোন সেই ‘স্পর্শকাতর বিষয়’ যা নিয়ে আলোচনা করতেই বৈঠকটি বিফল হলো? এমনি নানা প্রশ্ন জনমনে।
পাশাপাশি উল্লেখিত বৈঠকটির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার বা ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে কেন বৈঠকটির খবর গোপন রাখা হলো- এমনও প্রশ্ন জনমনে। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এমন বৈঠকে এফবিআই’র প্রতিনিধি কেন? বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও কিছু জানেন না বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। তবে সর্বশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের কথা স্বীকার করেন এবং বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হওয়ার দিনের খবর এড়িয়ে গিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ‘প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন’ বলে খবর প্রচার করে। বাসস পরিবেশিত ‘দেশের ভাবমূর্তি আরো জোরদার করতে কাজ করুন : প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক খবরে বলা হয়: ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে দেশের ভাবমূর্তি আরো জোরদারে আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ভাবমূর্তি আরো উন্নত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব, সততা ও দেশপ্রেমের সাথে দায়িত্ব পালন করুন।’ আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু কর্ণারসহ দূতাবাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। শেখ হাসিনা দূতাবাসে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্ণারে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে তিনি সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে এই চ্যান্সারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০০০ সালে নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সালাউদ্দিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।’
এদিকে ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের বৈঠক কেন মাঝপথে থেমে যায়?’ শিরোনামে প্রকাশিত মানবজমিন-এর খবরে বলা হয়: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচিত বৈঠকটি কেন সফল হয়নি? এ নিয়ে নানা আলোচনা ঢাকা ও ওয়াশিংটনে। বলা হচ্ছে, মার্কিনীদের কিছু বিষয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা একমত হননি। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে তার মতামত সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জ্যাক সুলিভান একা নন, এফবিআই কর্মকর্তাসহ আরও তিন জন ছিলেন বৈঠকে। বৈঠকটি প্রথমে গোপন রাখা হয়। সাত দিন বাদে হোয়াইট হাউসের তরফে তা খোলাসা করে দেয়া হয়। এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয়কারী জন কিরবি এ ধরনের একটা বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন অন্যতম।
যদিও তিনি বিস্তারিত বলেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শুক্রবার (৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে বলে মিডিয়ায় শোরগোল তোলেন। মানবজমিন অবশ্য বৈঠকের ছবিটি প্রথম প্রকাশ করে। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলো অজানাই থেকে যায়। মানবজমিন নানা সূত্রে বৈঠকের কিছু খবর জানতে পেরেছে। বৈঠকের শুরুটা ছিল খুবই আন্তরিক। মাঝখানে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনায় ছন্দপতন ঘটে। যাইহোক, চারটি বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।
এক. বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধীরা বলছে, তারা নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া অংশ নেবে না। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। জ্যাক সুলিভান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চান। তখন বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে তার সায় নেই। নির্বাচন হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।
দুই. কারারুদ্ধ বিরোধীনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি তোলা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের অভিমত কি? এ ব্যাপারে জানানো হয়, তাকে নিয়ম ভেঙে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতমানের হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত কোনো সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে এ ধরনের সেবা দেয়া হয় না। তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে বলা হয়, যেহেতু বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে সেজন্য তিনি এটা ভেবে দেখবেন।
তিন. নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসের প্রসঙ্গ নিয়ে বেশকিছু সময় আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে এত মামলা-মোকদ্দমা কেন। তাকে কেন নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশ্ব নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে এখনো তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জ্যাক সুলিভান এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তখন জানানো হয়, আইনের বাইরে তাকে কিছুই করা হচ্ছে না। নির্যাতন বা হয়রানির প্রশ্ন উঠছে কেন। জ্যাক সুলিভান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। বলেন, প্রফেসর ইউনূস যাতে খালি খালি দমন-পীড়নের শিকার না হন সেটা নিশ্চিত দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
চার নম্বর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নানা কারণে আলোচনা অন্যদিকে মোড় নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, আলোচনার সময় হঠাৎ করেই দরকষাকষি শব্দটি বেশ গুরুত্ব পায়। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেই বলেন, তাদের পক্ষে এ নিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখানেই আলোচনা থেমে যায়। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি, জলবায়ু ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উভয়পক্ষের অবস্থান তুলে ধরা হয়।’