সেন্টমার্টিন নিয়ে গুজব চলছে : ড্যান ডব্লিউ মজিনা

- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৪২ বার পঠিত
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই। এ নিয়ে গুজব চলছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মিলিটারি ঘাঁটি করারও কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি এই গুজব অনেক আগে থেকেই শুনছি। আমার তো মনে হয় পরবর্তী ১০০ বছরও মানুষ এই গুজব নিয়ে কথা বলবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক টেলিভিশন টাইম টিভির নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘টাইম এক্সক্লুসিভ’ অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মজিনা বলেন, আমি সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলাম। তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েছিলাম তা দেখতে। কিন্তু বাংলাদেশে আমেরিকার মেরিন বেইজ করা নিয়ে যে কথা উঠেছে এটা কোনো নতুন তথ্য না। এটা অনেক পুরনো তথ্য। এটা যদি তখন সত্যি না হয়ে থাকলে এখনো সত্য না।
মজিনা বলেন, বঙ্গোপসাগর যারা চেনেন তারা জানেন মিলিটারি বেইজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এটা খুব একটা মূল্যবান না, কারণ এটার গভীরতা খুব কম। আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছেও ঢুকতে পারবে না। তারপরও এ নিয়ে যে কথা উঠেছে; এটা কেবলই গুজব।তাহলে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন বঙ্গোপসাগরের কোনো মূল্য নেই আমেরিকার কাছে? অনুষ্ঠানের উপস্থাপক টাইম টিভির সিইও আবু তাহেরের এমন প্রশ্নে মজিনা বলেন, না। নেই। আমাদের সামরিক ঘাঁটি অন্যান্য জায়গায় আছে। ব্রিটিশ টেরিটরিতে আছে। আমি এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন নিয়ে কখনোই কোনো কথা শুনিনি। কিন্তু শত মিলিয়ন বাংলাদেশীদের এ বিষয়ে কথা বলতে শুনেছি। আমি যা সত্য বলে জানি তাই বলতে চাই। সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো মিলিটারি ঘাঁটি করার কোনো আগ্রহই আমেরিকার নেই।
বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্কে কি উন্নতি হচ্ছে? অনুষ্ঠানে যুক্ত আরেকজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নে মজিনা বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের নম্বর ওয়ান ফরেন ইনভেস্টর। আমেরিকা বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক রফতানি বাজার। উচ্চ শিক্ষার জন্য এটা দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য। ফরেন রেমিট্যান্সেও আমরা এক ও দুই নম্বরের মধ্যে। আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদারও। এই তালিকা চলতেই থাকবে। এতেই দেখা যায় এই সম্পর্ক কতটা শক্তিশালী। এজন্যই আমরা মনে করি আমেরিকার এবং বাংলাদেশের জনগণের যৌথভাবে কাজ করা সম্ভব হবে। শক্তিশালী সম্পর্ক আর কী? এটাইতো শক্তিশালী সম্পর্ক। তবে প্রতিটি সম্পর্কে এমনকি বৈবাহিক সম্পর্কেও এমন সময় আসে যখন একজন আরেকজনের চোখে চোখ রেখে তাকানো সম্ভব হয় না। এটা স্বাভাবিক। এমন অবস্থায় আপনাকে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে এবং তা সমাধান করে নিয়ে আগাতে হবে।
আপনি বাংলাদেশে অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন এবং একজন মানুষ হিসেবে তার বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মজিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তিনি আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমি জানি না আপনারা কতজন এতগুলো জেলা ভ্রমণ করেছেন। এটা করাও অনেক কঠিন। এটা আমি তার সহায়তা ছাড়া করতে পারতাম না। তিনি গোপালগঞ্জে আমার ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে তার পরিবারে একজন সদস্যকেও সাথে দিয়েছেন, যিনি আমাকে সব ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখিয়েছেন। আমি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য দেশের নেতৃত্ব বিষয়ে মূল্যায়ন আমার জন্য না। আমি সেখানকার সরকার ও সিভিল সোসাইটির সাথে সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করেছি। কারণ সম্পর্ক স্থাপন ছিল আমার লক্ষ্য। আমি মনে করি আমি অনেকটা সফল। প্রাকৃতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, বহুভাবে সেই সফলতা দেখেছি। এটা একটি চলমান পার্টনারশিপ। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করতাম এবং আমরা সেই সব উন্নয়ন সফল করেছি এবং আমি এ বিষয়ে গর্বিত।
কথা হলো প্রধানমন্ত্রী কি কখনো সেই সম্পর্ক বন্ধ করতে চেয়েছেন? না, তিনি কখনো তা করেননি। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
মজিনা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আমার খুব চমৎকার সম্পর্ক ছিল। এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথেও ভালো সম্পর্ক ছিল। কৃষিমন্ত্রী আমার ব্যাপারে একটু অন্যরকম ছিলেন। কিন্তু আমরা তা পাশ কাটিয়ে কাজ করতে পেরেছি। কারণ আমি নিজে একজন কৃষক। তিনিও তাই ছিলেন। যদিও তার পছন্দের মানুষের তালিকায় আমার অবস্থান ছিল একবারে তলানীতে।