বাংলাদেশীরা বিশ্বাস ও হৃদ্যতায় সবার চেয়ে আলাদা : এরিক এডামস
- প্রকাশের সময় : ০৩:১২:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০২৩
- / ৯৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ব্যাপক উৎসহ-উদ্দীপনায় হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হলো চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (সিএমবিবিএ) এর বার্ষিক পথমেলা। নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনের ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউর সুবিশাল রাজপথে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার দিনব্যাপী আয়োজিত মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র এরিক এডামস। মেলার উদ্বোধক ছিলেন মেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিস এর প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবু জাফর মাহমুদ, মেলায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিস্ট্রিক অ্যাটর্নি এরিক গনজালেস, বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সিটি কাউন্সিল ওমেন শাহানা হানিফ, এটর্নি পেরি ডি সিলভা ও ডেমোক্র্যাট পার্টির কুইন্সের ডিষ্ট্রিক্ট এট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী। মেলায় ছিলো কয়েক শত হরেক রকমের স্টল, শুভেচ্ছা বক্তব্য আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খবর ইউএনএ’র।
সিএমবিবিএ’র সভাপতি আব্দুর রব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, মেলা কমিটির কনভেনার মামুনুর রশীদ, মেম্বার সেক্রেটারী মইনুল ইসলাম বাপ্পী সহ আরো অনেকে মেলার উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। বিশেষ আকর্ষণ ছিলো র্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরষ্কার সিলেট মটরস এর গাড়ী।
মেলার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন মেলা কমিটির আহবায়ক মামুন উর রশীদ ও বিশিষ্ট উপস্থাপক আশরাফুল হাসান বুলবুল। মেলার সার্বিক সমন্বয় করেন মো. মহিউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, আজিম উদ্দিন প্রমুখ।
চমৎকার আবহাওয়ায় ব্রুকলীন প্রবাসী বাংলাদেশী ছাড়াও সিটির বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সপরিবারে মেলায় যোগ দেন এবং দিনভর উপভোগ করেন। এছাড়াও ভিন দেশীদেরকেও মেলার কর্মকান্ড উপভোগ করতে দেখা যায়। পাশাপাশি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান কেন্দ্র করে মেলায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি স্টল এবং সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএ’র আসন্ন নির্বাচন ঘিরে মেলায় সংগঠনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেলের স্টল থেকে ফ্রি চা-কপি, ঝাল-মুড়ি, সোডা, পানি প্রভৃতি খাওয়ানো হয়। সেই সাথে চলে প্রচারণা। ব্রুকলীনের লিটল বাংলাদেশ-এর সুবিশাল রাস্তার (ম্যাকডেনাল্ড এভিনিউর একাংশ) উপর এই মেলার আয়োজন করা হয়। কমিউনিটিতে অবদান রাখার জন্য মেলায় কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে প্ল্যাক/অ্যাওয়ার্ড/সাইটেশন প্রদান করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়ছে, মেলায় সিটি মেয়র এরিক এডামস বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমাদের পুলিশ বিভাগে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে এই নগরীর র্ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অসাধারণ এক পরিবেশ রচনার পেছনে রয়েছে তাদের ভূমিকা। তিনি বলেন, আমি খুবই আশাবাদী, এখানে জুম্মাহর দিনে মসজিদে মসজিদে আজানের ধ্বনি শোনা যাবে। স্কুলে মুসলিম কমিউনিটির শিশুদের জন্য হালাল খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা হবে, এর সঙ্গে থাকবে বৃত্তিসহ নানা সুবিধা। তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির বহুমুখি অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশীদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাস, পারিবারিক বন্ধন ও বাণিজ্যিক স্বচ্ছতা। এসব ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েই তারা নিউইয়র্ক নয় শুধু গোটা আমেরিকায় তাদের স্বকীয় জাতিসত্তার সাক্ষর রাখছে।
মেলার উদ্বোধক বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই মেলা কেবল ব্যবসা কিংবা সঙ্গীত বাদ্যের নয়। এই মেলা ভালোবাসার। আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে পারি, এটিই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। এ মেলা আমাদের শেখায় আমাদের দেশপ্রেম দুটি ধারায় চলমান, একটি বাংলাদেশ আরেকটি আমেরিকা।
ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, দেশপ্রেম ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জন্মভূমির প্রতি আমাদের আনুগত্য সবার আগে। আমরা যদি জন্মভূমির প্রতি অনুগত না থাকি, অনুভূতিশীল না থাকি তাহলে আমরা সেই বিহারিদের চরিত্র ধারণ করবো, যারা একাত্তরে বাংলাদেশের আলো-বাতাস পেয়েছে, সব সুযোগ সুবিধা নিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছে। আজ আমরা আমেরিকায় আছি। আমেরিকার বহুমুখি সেবা ও কল্যাণ আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের মধ্যে যারা আমেরিকার সমালোচনা করে, তারা ওই বিহারির মতো, পরজীবী।
ড. আবু জাফর মাহমুদ বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সঙ্গে তার জন্মগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছি। ১৯৫৪ সনের আগে আমরা যারা সন্দ্বীপে জন্মেছি আমরা প্রত্যেকে নোয়াখালী জেলার অধিবাসী। ১৯৫৬ সালের পর সন্দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলে আমরা চট্টগ্রামের মানুষ হই। বাংলাদেশ জন্ম দেয়ার মধ্য দিয়ে আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি পেয়েছি। যে মানুষটি আমাদের ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ জন্ম দেয়ার অপরিহার্যতা বুঝিয়েছেন, শিখিয়েছেন, তিনি আমার নেতা, সিরাজুল আলম খান নোয়াখালীর মানুষ। স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করে বাঙালীকে জাগ্রত করেছেন, জানান দিয়েছেন আমরা আর পাকিস্তনী নই, তিনি হচ্ছেন আ স ম আব্দুর রব। তিনিও নোয়াখালীর মানুষ। সূতরাং নোয়াখালীর সঙ্গে সন্দ্বীপের আবু জাফর মাহমুদের আত্মীয়তা ও যোগসূত্র রক্তের ও চেতনার। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে আমার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা আসে। চট্টগ্রাম আমার জেলা। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সন্দ্বীপ এই ত্রিভূজের যে আকৃতি সেটি নিয়েই আমার দেশপ্রেমের শুরু। এভাবেই আমাদের প্রেম সামনে নিয়ে যাচ্ছি। যে রাজনীতি আমাদের বিভক্তি শেখায়, বিদ্বেষ শেখায় সে রাজনীতি আমাদের হতে পারে না।