নিউইয়র্ক ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

যেভাবে লেখা হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫২:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৪৫ বার পঠিত

বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লেখা হয়েছিল বিদ্রোহী কবিতা। শতবর্ষ পরেও কবিতাটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক, গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যমণ্ডিত। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে ভাবনা-প্লাবন সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে প্রবলভাবে ইন্ধন জোগায় কাজী নজরুল ইসলামের এ কবিতা। কবিতাটি লেখার গল্পটিও রোমাঞ্চকর।

১৯১৭ সালের শেষদিকে সেনাবাহিনীতে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে যোগ দেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২০ সালে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হলে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন। বাস করতে শুরু করেন ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে। বেছে নেন সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ত্রিমুখী জীবন। প্রথিতযশা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক কমরেড মুজফফর আহমেদ ছিলেন সমিতির সহকারী সম্পাদক। তারা তখন নতুন ধরণের একটি পত্রিকা বের করার চেষ্টা করছেন। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই মুজাফ্ফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলামের যুগ্ম সম্পাদনায় ‘নবযুগ’ নামের সান্ধ্য পত্রিকা বের হয়। কাজের সুবিধার্থে তারা একসঙ্গেই বসবাস করতেন।

বিদ্রোহী কবিতা কত তারিখে রচিত হয় তার সঠিক দিন জানা যায় না। নজরুল তার অধিকাংশ রচনার সঙ্গে সময়কাল যুক্ত করতেন না। মুজফফর আহমেদের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় কবিতাটি ১৯২১ সালের বড়দিনের অবকাশকালীন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের কোনো এক রাতে নজরুল লিখেছিলেন।

‘কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা’ বইয়ে মুজফফর আহমেদ লিখেছেন, ‘আসলে বিদ্রোহী কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বড়দিনের ছুটিতে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘তখন নজরুল ও আমি নিচের তলার পূর্ব দিকের অর্থাৎ বাড়ির নিচেকার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরটি নিয়ে থাকি। কবিতাটি নজরুল লিখেছিলেন রাতে। রাতের কোন সময় তা জানি না। রাত ১০টার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এসে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বলল, সে একটা কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটিই সে আমাকে পড়ে শোনাল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। আমার মনে হয়, নজরুল শেষ রাতে কবিতাটি লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমাকে কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না।’

মুজফফর আহমেদ কাউকে তার সম্মুখে প্রশংসা করতেন না। অসাধারণ কবিতাটি শোনার পরেও তিনি নজরুলের কাছে কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। তবে অন্যদের কাছে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তার মনে হয়েছে নজরুল হয়তো এ কারণে মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন। স্মৃতিকথায় মুজফফর আহমেদ এ কথা উল্লেখ করেছেন।

আলোচনা-সমালোচনা
ব্যক্তিগত জীবনের প্রণয় বিয়োগ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর অভিজ্ঞতা, জাতীয়তাবাদী ভাবের উদয় এসবের মিশ্রণে অনুভূতির উর্বরক্ষেত্রে জন্ম হয় বিদ্রোহী কবিতা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী-সাহিত্যিক-সম্পাদক-সমঝদারদের কাছেও বিদ্রোহী কবিতা দারুণভাবে সমাদৃত হয়। কবিতাটি প্রকাশের দশ দিন পর ১৭ জানুয়ারি ১৯২২ সালে নজরুল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাকে কবিতাটি পড়ে শোনান। বিজলী সম্পাদক অবিনাশচন্দ্র নজরুলের মুখে শুনে লিখেছেন, বিদ্রোহী ছাপা হওয়ার পরে নজরুল এটি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে শোনানোর পর তিনি সানন্দে নজরুলকে বুকে চেপে ধরে আশীর্বাদ করেছিলেন।

বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘বিদ্রোহী’ পড়লুম ছাপার অক্ষরে মাসিক পত্রে- মনে হলো, এমন কখনো পড়িনি। অসহযোগের অগ্নিপরীক্ষার পরে সমস্ত মনপ্রাণ যা কামনা করেছিল, এ যেন তা-ই, দেশব্যাপী উদ্দীপনার এ-ই যেন বাণী। (নজরুল ইসলাম, কালের পুতুল, বুদ্ধদেব বসু)। রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে আসার ক্ষেত্রে এই কবিতার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যে বিশ শতকে রবীন্দ্র প্রভাব এত সর্বগ্রাসী হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল এর বাইরে যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না বিদ্রোহী কবিতার নিশান উড়িয়ে হই হই করে নজরুল এসে হাজির হলেন।’ (রবীন্দ্রনাথ ও উত্তর সাধক : সাহিত্যচর্চা, বুদ্ধদেব বসু)

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বলেছিলেন, এ কে নতুন কবি? নির্জীব দেশে এ কার বীর্যবাণী? শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, সমগ্র দেশ নাড়া দিয়ে জেগে উঠল। এমনটি কোনোদিন শুনিনি, ভাবতেও পারিনি। যেন সমস্ত অনুপাতের বাইরে, যেন সমস্ত অঙ্ক পাতেরও অতিরিক্ত।…গদগদ বিহ্বলের দেশে এ কে এলো প্রচণ্ড বজ্রনাদ হয়ে? আলস্যে আচ্ছন্ন দেশ আরামের বিছানা ছেড়ে হঠাৎ উদ্দত মেরুদণ্ডে উঠে দাঁড়াল।

কাজী আবদুল ওদুদ বলেন, এর মর্মকথা হচ্ছে এক অপূর্ব উন্মাদনা এক অভূতপূর্ব আত্মবোধ; সেই আত্মবোধের প্রচণ্ডতায় কবি উচ্চকিত, প্রায় দিশেহারা। এমন দিশেহারা শুধু সে সময়ের সাহিত্যিক-বোদ্ধা পাঠকই হননি, বিদ্রোহী কবিতা রস জুগিয়ে যাচ্ছে আজও, একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও কম হয়নি। সে সময়ে ‘শনিবারের চিঠি’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় নজরুলকে ব্যঙ্গ করে বেশ কয়েকজনের বিদ্রোহী কবিতার প্যারোডি লেখা ছাপা হয়েছিল। সজনীকান্ত দাস বিদ্রোহী কবিতাকে প্যারোডি করে লিখেছিলেন, ‘আমি ব্যাঙ/লম্বা আমার ঠ্যাং/আমি ব্যাঙ/আমি সাপ, আমি ব্যাঙেরে গিলিয়া খাই/আমি বুক দিয়ে হাঁটি ইঁদুর ছুঁচোর গর্তে ঢুকিয়া যাই।’

কবি গোলাম মোস্তফাও কাব্যে সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তার ‘নিয়ন্ত্রিত’ শিরোনামের কবিতায় কালজয়ী বিদ্রোহী কবিতাকে আঘাত হানার চেষ্টা করেছেন, “ওগো ‘বিদ্রোহী’ বীর!/সংযত কর, সংহত কর উন্নত তব শির/তুই যদি ভাই বলিস চেঁচিয়ে-উন্নত মম শির,/আমি বিদ্রোহী বীর,/সে যে শুধুই প্রলাপ, শুধুই খেয়াল, নাই নাই/তার কোন গুণ,/শুনি স্তম্ভিত হবে ‘নমরুদ’ আর ‘ফেরাউন’!”

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

যেভাবে লেখা হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা

প্রকাশের সময় : ১১:৫২:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লেখা হয়েছিল বিদ্রোহী কবিতা। শতবর্ষ পরেও কবিতাটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক, গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যমণ্ডিত। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে ভাবনা-প্লাবন সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে প্রবলভাবে ইন্ধন জোগায় কাজী নজরুল ইসলামের এ কবিতা। কবিতাটি লেখার গল্পটিও রোমাঞ্চকর।

১৯১৭ সালের শেষদিকে সেনাবাহিনীতে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে যোগ দেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২০ সালে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হলে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন। বাস করতে শুরু করেন ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে। বেছে নেন সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ত্রিমুখী জীবন। প্রথিতযশা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক কমরেড মুজফফর আহমেদ ছিলেন সমিতির সহকারী সম্পাদক। তারা তখন নতুন ধরণের একটি পত্রিকা বের করার চেষ্টা করছেন। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই মুজাফ্ফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলামের যুগ্ম সম্পাদনায় ‘নবযুগ’ নামের সান্ধ্য পত্রিকা বের হয়। কাজের সুবিধার্থে তারা একসঙ্গেই বসবাস করতেন।

বিদ্রোহী কবিতা কত তারিখে রচিত হয় তার সঠিক দিন জানা যায় না। নজরুল তার অধিকাংশ রচনার সঙ্গে সময়কাল যুক্ত করতেন না। মুজফফর আহমেদের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় কবিতাটি ১৯২১ সালের বড়দিনের অবকাশকালীন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের কোনো এক রাতে নজরুল লিখেছিলেন।

‘কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা’ বইয়ে মুজফফর আহমেদ লিখেছেন, ‘আসলে বিদ্রোহী কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বড়দিনের ছুটিতে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘তখন নজরুল ও আমি নিচের তলার পূর্ব দিকের অর্থাৎ বাড়ির নিচেকার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরটি নিয়ে থাকি। কবিতাটি নজরুল লিখেছিলেন রাতে। রাতের কোন সময় তা জানি না। রাত ১০টার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এসে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বলল, সে একটা কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটিই সে আমাকে পড়ে শোনাল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। আমার মনে হয়, নজরুল শেষ রাতে কবিতাটি লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমাকে কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না।’

মুজফফর আহমেদ কাউকে তার সম্মুখে প্রশংসা করতেন না। অসাধারণ কবিতাটি শোনার পরেও তিনি নজরুলের কাছে কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। তবে অন্যদের কাছে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তার মনে হয়েছে নজরুল হয়তো এ কারণে মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন। স্মৃতিকথায় মুজফফর আহমেদ এ কথা উল্লেখ করেছেন।

আলোচনা-সমালোচনা
ব্যক্তিগত জীবনের প্রণয় বিয়োগ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর অভিজ্ঞতা, জাতীয়তাবাদী ভাবের উদয় এসবের মিশ্রণে অনুভূতির উর্বরক্ষেত্রে জন্ম হয় বিদ্রোহী কবিতা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী-সাহিত্যিক-সম্পাদক-সমঝদারদের কাছেও বিদ্রোহী কবিতা দারুণভাবে সমাদৃত হয়। কবিতাটি প্রকাশের দশ দিন পর ১৭ জানুয়ারি ১৯২২ সালে নজরুল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাকে কবিতাটি পড়ে শোনান। বিজলী সম্পাদক অবিনাশচন্দ্র নজরুলের মুখে শুনে লিখেছেন, বিদ্রোহী ছাপা হওয়ার পরে নজরুল এটি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে শোনানোর পর তিনি সানন্দে নজরুলকে বুকে চেপে ধরে আশীর্বাদ করেছিলেন।

বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, ‘বিদ্রোহী’ পড়লুম ছাপার অক্ষরে মাসিক পত্রে- মনে হলো, এমন কখনো পড়িনি। অসহযোগের অগ্নিপরীক্ষার পরে সমস্ত মনপ্রাণ যা কামনা করেছিল, এ যেন তা-ই, দেশব্যাপী উদ্দীপনার এ-ই যেন বাণী। (নজরুল ইসলাম, কালের পুতুল, বুদ্ধদেব বসু)। রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে আসার ক্ষেত্রে এই কবিতার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যে বিশ শতকে রবীন্দ্র প্রভাব এত সর্বগ্রাসী হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল এর বাইরে যাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না বিদ্রোহী কবিতার নিশান উড়িয়ে হই হই করে নজরুল এসে হাজির হলেন।’ (রবীন্দ্রনাথ ও উত্তর সাধক : সাহিত্যচর্চা, বুদ্ধদেব বসু)

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বলেছিলেন, এ কে নতুন কবি? নির্জীব দেশে এ কার বীর্যবাণী? শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, সমগ্র দেশ নাড়া দিয়ে জেগে উঠল। এমনটি কোনোদিন শুনিনি, ভাবতেও পারিনি। যেন সমস্ত অনুপাতের বাইরে, যেন সমস্ত অঙ্ক পাতেরও অতিরিক্ত।…গদগদ বিহ্বলের দেশে এ কে এলো প্রচণ্ড বজ্রনাদ হয়ে? আলস্যে আচ্ছন্ন দেশ আরামের বিছানা ছেড়ে হঠাৎ উদ্দত মেরুদণ্ডে উঠে দাঁড়াল।

কাজী আবদুল ওদুদ বলেন, এর মর্মকথা হচ্ছে এক অপূর্ব উন্মাদনা এক অভূতপূর্ব আত্মবোধ; সেই আত্মবোধের প্রচণ্ডতায় কবি উচ্চকিত, প্রায় দিশেহারা। এমন দিশেহারা শুধু সে সময়ের সাহিত্যিক-বোদ্ধা পাঠকই হননি, বিদ্রোহী কবিতা রস জুগিয়ে যাচ্ছে আজও, একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও কম হয়নি। সে সময়ে ‘শনিবারের চিঠি’ সাপ্তাহিক পত্রিকায় নজরুলকে ব্যঙ্গ করে বেশ কয়েকজনের বিদ্রোহী কবিতার প্যারোডি লেখা ছাপা হয়েছিল। সজনীকান্ত দাস বিদ্রোহী কবিতাকে প্যারোডি করে লিখেছিলেন, ‘আমি ব্যাঙ/লম্বা আমার ঠ্যাং/আমি ব্যাঙ/আমি সাপ, আমি ব্যাঙেরে গিলিয়া খাই/আমি বুক দিয়ে হাঁটি ইঁদুর ছুঁচোর গর্তে ঢুকিয়া যাই।’

কবি গোলাম মোস্তফাও কাব্যে সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তার ‘নিয়ন্ত্রিত’ শিরোনামের কবিতায় কালজয়ী বিদ্রোহী কবিতাকে আঘাত হানার চেষ্টা করেছেন, “ওগো ‘বিদ্রোহী’ বীর!/সংযত কর, সংহত কর উন্নত তব শির/তুই যদি ভাই বলিস চেঁচিয়ে-উন্নত মম শির,/আমি বিদ্রোহী বীর,/সে যে শুধুই প্রলাপ, শুধুই খেয়াল, নাই নাই/তার কোন গুণ,/শুনি স্তম্ভিত হবে ‘নমরুদ’ আর ‘ফেরাউন’!”

বেলী/হককথা