নিউইয়র্ক ০৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৮:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৫৩ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। পরিবারে অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকদের ওপর অভিমান করে চলতি বছরের গত আট মাসে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে; যেখানে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমন্বয়ে এ তথ্য জানায়।

সংগঠনটির তথ্য বলছে, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় তরুণ প্রজন্ম। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ জন। ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তাদের তৈরি সমীক্ষায় দেখা গেছে, চলতি বছর আত্মহত্যা করা ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ১৪৭ জন এবং নারী শিক্ষার্থী ২১৪ জন। একই সময়ে ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছিল ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার শীর্ষে এবারও ঢাকা বিভাগ। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এগিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা। আত্মহত্যাকারীদের বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকালে ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান :কোন পথে সমাধান?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আজ ১০ সেপ্টেম্বর দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২৩’। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’।

সংশ্লিস্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শহীদুল ইসলাম আত্মহত্যা প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন, আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রিত ‘অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে। আগামী অর্থবছর থেকে বাস্তবায়নযোগ্য পঞ্চম এইচপিএনএসপি সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় সরকার এই প্রথম বারের মতো একটি ডেডিকেটেড অপারেশনাল প্ল্যান ‘মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটি (এমএইচডি)’ অনুমোদন করতে যাচ্ছে। যেখানে আগামী পাঁচ বছরের মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত আত্মহত্যা ও এর প্রচেষ্টা প্রতিরোধে অত্যাধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা হাতে নেওয়া হচ্ছে, যার সুফল দেশবাসী অচিরেই উপভোগ করবে।

হাইওয়ে পুলিশের ইন্টেলিজেন্স প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চের অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদা ইয়াসমিন আত্মহত্যার পেছনে বর্তমান প্রজন্মের একাকী থাকাকে দায়ী করে বলেন, এখনকার প্রজন্ম খুব একা থাকতে পছন্দ করে। এই একাকিত্ব থেকে তাদের মধ্যে শূন্যতা দেখা দেয়, শূন্যতা থেকে হতাশা এবং পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের বোঝা মনে করে। ঐ একাকিত্বের সময় আমরা যদি তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে কিন্তু তাকে ওই জায়গা থেকে বের করে আনা যায়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে বলেন, ‘আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মনোযোগী হওয়া। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষকদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দায়িত্বশীল হতে হবে। যেন তারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হতে পারেন।’

আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত তা নিয়ে চিন্তার উদ্রেক করে। আত্মহত্যা থেকে ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে রক্ষা করার উপায় হিসেবে তাসনের বলেন, ‘আমাদের প্যারেন্টিংয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। জেনারেশন গ্যাপের কারণে সন্তান ও বাবা-মা একে অপরকে বুঝতে ব্যর্থ হয় অনেক ক্ষেত্রেই। এতে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সন্তানও মনোবেদনা শেয়ার করার জায়গা পায় না। ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।’ সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশের সময় : ০২:২৮:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। পরিবারে অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকদের ওপর অভিমান করে চলতি বছরের গত আট মাসে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে; যেখানে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমন্বয়ে এ তথ্য জানায়।

সংগঠনটির তথ্য বলছে, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় তরুণ প্রজন্ম। ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ জন। ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তাদের তৈরি সমীক্ষায় দেখা গেছে, চলতি বছর আত্মহত্যা করা ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ১৪৭ জন এবং নারী শিক্ষার্থী ২১৪ জন। একই সময়ে ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছিল ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার শীর্ষে এবারও ঢাকা বিভাগ। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এগিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা। আত্মহত্যাকারীদের বয়স বিবেচনায় দেখা যায়, বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকালে ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান :কোন পথে সমাধান?’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আজ ১০ সেপ্টেম্বর দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২৩’। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’।

সংশ্লিস্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শহীদুল ইসলাম আত্মহত্যা প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন, আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টা প্রতিরোধ বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রিত ‘অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে। আগামী অর্থবছর থেকে বাস্তবায়নযোগ্য পঞ্চম এইচপিএনএসপি সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় সরকার এই প্রথম বারের মতো একটি ডেডিকেটেড অপারেশনাল প্ল্যান ‘মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটি (এমএইচডি)’ অনুমোদন করতে যাচ্ছে। যেখানে আগামী পাঁচ বছরের মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত আত্মহত্যা ও এর প্রচেষ্টা প্রতিরোধে অত্যাধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা হাতে নেওয়া হচ্ছে, যার সুফল দেশবাসী অচিরেই উপভোগ করবে।

হাইওয়ে পুলিশের ইন্টেলিজেন্স প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চের অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদা ইয়াসমিন আত্মহত্যার পেছনে বর্তমান প্রজন্মের একাকী থাকাকে দায়ী করে বলেন, এখনকার প্রজন্ম খুব একা থাকতে পছন্দ করে। এই একাকিত্ব থেকে তাদের মধ্যে শূন্যতা দেখা দেয়, শূন্যতা থেকে হতাশা এবং পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের বোঝা মনে করে। ঐ একাকিত্বের সময় আমরা যদি তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে কিন্তু তাকে ওই জায়গা থেকে বের করে আনা যায়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে বলেন, ‘আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মনোযোগী হওয়া। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষকদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দায়িত্বশীল হতে হবে। যেন তারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হতে পারেন।’

আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত তা নিয়ে চিন্তার উদ্রেক করে। আত্মহত্যা থেকে ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে রক্ষা করার উপায় হিসেবে তাসনের বলেন, ‘আমাদের প্যারেন্টিংয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। জেনারেশন গ্যাপের কারণে সন্তান ও বাবা-মা একে অপরকে বুঝতে ব্যর্থ হয় অনেক ক্ষেত্রেই। এতে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সন্তানও মনোবেদনা শেয়ার করার জায়গা পায় না। ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।’ সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক

বেলী/হককথা