নিউইয়র্ক ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দিশেহারা খামারিরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:২০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩
  • / ৩১ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে ‘লাম্পি স্কিন’ নামক রোগটিতে আক্রান্ত গরু সংখ্যা। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। আবার গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দেশের দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোয় এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গরুর প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ‘লাম্পি স্কিন’ ছড়িয়ে পড়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গরুর খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। কোরবানির ঈদের আগে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনদের। ফলে গ্রামের কিছু হাতুরে ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

প্রাপ্ততথ্য মতে, সারা উপজেলায় এক হাজারেরও বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও ৬৭৮টি গরু আক্রান্ত এবং ৮টি গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে। অনেক খামারি ও গৃহস্থ ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতে টাকা পয়সা হাতে না থাকায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের।

উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ঘাগড়া পাড়া গ্রামের গরুর খামারি এনায়েতুল্লা ফকির জানান, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে গেছে। সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ করেও গরুটি সুস্থ হয়নি। গত সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় এনায়েতুল্লার ভাই বায়তুল্লার সাথে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না। খবর দিলে বাড়িতে যায় না ডাক্তার। এ অবস্থায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি গরু মারা গিয়েছে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে।

একই গ্রামের গৃহস্থ আব্দুল বারেকের ছেলে সোহেল মিয়া বলেন, তার তিনটি গরুসহ এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাইরাসটি হানা দিচ্ছে। শুধু জাটিয়াতেই নয় পুরো উপজেলাতেই দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন। গরু খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।খামারিরা জানান, কোনো বাড়ি বাদ নেই। সবার গরুর অসুখ হয়েছে। উপসর্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রথমে গরুর জ্বর হয়, এর পর গা গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। ঘা হয়ে পেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। কাঁপুনিও থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন জানান, ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

তিনি আরো বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দিশেহারা খামারিরা

প্রকাশের সময় : ১০:২০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে ‘লাম্পি স্কিন’ নামক রোগটিতে আক্রান্ত গরু সংখ্যা। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। আবার গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দেশের দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোয় এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গরুর প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ‘লাম্পি স্কিন’ ছড়িয়ে পড়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গরুর খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। কোরবানির ঈদের আগে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনদের। ফলে গ্রামের কিছু হাতুরে ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

প্রাপ্ততথ্য মতে, সারা উপজেলায় এক হাজারেরও বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও ৬৭৮টি গরু আক্রান্ত এবং ৮টি গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে। অনেক খামারি ও গৃহস্থ ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতে টাকা পয়সা হাতে না থাকায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের।

উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ঘাগড়া পাড়া গ্রামের গরুর খামারি এনায়েতুল্লা ফকির জানান, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে গেছে। সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ করেও গরুটি সুস্থ হয়নি। গত সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় এনায়েতুল্লার ভাই বায়তুল্লার সাথে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না। খবর দিলে বাড়িতে যায় না ডাক্তার। এ অবস্থায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি গরু মারা গিয়েছে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে।

একই গ্রামের গৃহস্থ আব্দুল বারেকের ছেলে সোহেল মিয়া বলেন, তার তিনটি গরুসহ এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাইরাসটি হানা দিচ্ছে। শুধু জাটিয়াতেই নয় পুরো উপজেলাতেই দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন। গরু খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।খামারিরা জানান, কোনো বাড়ি বাদ নেই। সবার গরুর অসুখ হয়েছে। উপসর্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রথমে গরুর জ্বর হয়, এর পর গা গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। ঘা হয়ে পেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। কাঁপুনিও থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন জানান, ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

তিনি আরো বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব