যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখন পরিপক্ব, তবে অস্বস্তিও আছে
- প্রকাশের সময় : ১২:২৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩
- / ১১৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে মতপার্থক্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগও রয়েছে। তবে অন্যান্য যে কোনো সম্পর্কের মতো এখানেও কিছু অস্বস্তিকর বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির একটি উৎস হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত না দেওয়া। এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দৈনিক ইত্তেফাক আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অ্যাট দ্য ক্রসরোড :ইন কনভারসেশন উইথ মো. শাহরিয়ার আলম’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আসন্ন নির্বাচন, বিদেশি চাপ, চীনের জিডিআই, প্রতিরক্ষা ও রোহিঙ্গাসংকটসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী পরিচালক ও প্রকাশক তারিন হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাজী সাবির।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখন পরিপক্ব
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, দুই দেশের মধ্যে পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। তবে কিছু অস্বস্তিকর বিষয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত না দেওয়া আমাদের জন্য বড় অস্বস্তির কারণ। এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো। কানাডাতেও বঙ্গবন্ধুর আরেক জন খুনি আছে, কিন্তু সেখানকার বিষয়টি ভিন্ন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে ফেরত না পাঠানোর বিষয়ে তাদের একটি আইন আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সেরকম কোনো আইন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসা-নীতি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি, ঐ নীতির যথেচ্ছ ব্যবহার হবে না। ভিসা-নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার কোথাও কোনো চাপে নেই
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, প্রকৃতপক্ষে সরকার কোথাও কোনো চাপে নেই। বরং তিনি পালটা প্রশ্ন করেন, কেউ চাপ দিয়ে কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাতে পারবে ? তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। এটি তার গর্ব এবং এটিই তার চালিকাশক্তি। অনুগ্রহ করে এক্ষেত্রে দুর্বল পর্যবেক্ষণ দেখাবেন না।
নতুন নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণ দেখি না :প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের পর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। সামনের বছরগুলোতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না। অবশ্য যদি না আমরা বড় ধরনের কোনো কাণ্ড ঘটাই। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আমরা রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগ করছি। ২০২১ সালের পর পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে। এছাড়া আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, যেটি আমরা অনুসরণ করব। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশ আরেক দেশের সঙ্গে চরম উত্তেজনার মুহূর্তেও বাণিজ্য বন্ধ করেনি। এটি যদি সত্যি হয়, তবে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বাণিজ্যকে কেন জড়িয়ে ফেলা হবে।
বিএনপির হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের আমলে নেওয়া উচিত : এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সমান অঙ্গীকার প্রয়োজন। অবশ্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দায়িত্ব বেশি। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল তাদের অঙ্গীকারের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে—পুলিশ, প্রশাসন এবং যারা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে দেখে নেওয়া হবে এবং এটি বড় ধরনের হুমকি। আমি আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। আমরা সেটিতে ফিরে যাব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করাটা এখন হবে অবৈধ এবং এটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
চীনের জিডিআই নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই : এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যুক্ত হয়েছে এবং আরো অনেক দেশ এর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) নতুন একটি উদ্যোগ। এটি নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই। তবে এটি নিয়ে আলোচনা হওয়া ভালো। কারণ আমরাও জানি না—এটিতে যুক্ত না হওয়ার মতো কোনো উপাদান আছে কিনা। একটি কমিটি রয়েছে, যারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
রোহিঙ্গা ও নিরাপত্তা ইস্যু : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সংকট সমাধানে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশগুলো ও জাতিসংঘকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। কানাডা ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশ পাঠায়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য ভুল বলে জানান শাহরিয়ার আলম।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে সবসময় উগ্রবাদের ঝুঁকি থেকে যায়। বাংলাদেশ এটিকে প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বড় ধরনের কোনো সরঞ্জাম ক্রয় করাবে না। যতদিন না পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, এই ব্যবস্থা বলবত্ থাকবে।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, নিরাপত্তা সহযোগিতা মানে এই নয় যে, আমরা কোনো কৌশলগত জোটে যুক্ত হয়ে গেছি। প্রতিরক্ষা চুক্তি মানে এই নয় যে, আমরা কারও সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করব। বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত এলে, সেটিকে প্রতিরোধের জন্য আমাদের সরঞ্জাম লাগবে। তিনি বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কিছু কৌশলগত পরিকল্পনা আছে এবং এটি শেষ হওয়ার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি প্রসঙ্গ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে সম্প্রতি ছয় কংগ্রেসম্যানের পাঠানো একটি চিঠির বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না এটা সত্য কি না। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, অতীতে বিদেশি বন্ধুদের কাছে মিথ্যাচার করার ইতিহাস বিএনপির রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার চেয়ে ওয়াশিংটন টাইমসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লেখা নিবন্ধের কথা তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিক এবং দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলমসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা