হুমায়ুন ফরীদি : অভিনয়ের সঙ্গে তার যেসব কথা রয়ে গেছে
- প্রকাশের সময় : ০৬:৩০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
- / ৫১ বার পঠিত
বিনোদন ডেস্ক : অফুরান মুগ্ধতা কিংবা ভালোবাসা থেকে তাকে সবাই বলেন, অভিনয়ের প্রতিষ্ঠান। সিনেমা-নাটকে তিনি অভিনয়ের এমন এক বাগিচা গড়ে গেছেন, যেখানে বিচরণ করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্মিত হয়, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা নেয়। হ্যাঁ, কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির কথাই বলা হচ্ছে। আজ সোমবার (২৯ মে) তার জন্মদিন। এগারো বছর আগেই তিনি জীবনের উদ্যান ছেড়ে পরপারের বাসিন্দা হয়েছেন। কিন্তু বছর ঘুরে জন্ম কিংবা মৃত্যু দিন এলেই তিনি দর্শকের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়েই তার অভিনয়শৈলি নিয়ে চর্চা করেন নেটিজেনরা।
আরও একটা বিষয় হুমায়ুন ফরীদিকে স্মরণীয় করে রেখেছে। তা হলো- তার চিন্তা-ভাবনা ও বিভিন্ন মন্তব্য। যেগুলো তিনি বেঁচে থাকাকালীন সাক্ষাৎকারে বলে গেছেন। সেসব কথা সময়ের গণ্ডি ভেদ করে এখনও ঘুরে বেড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ার অলিগলিতে। মৃত্যু নিয়ে হুমায়ুন ফরীদির একটি কথা কালজয়ী হয়ে গেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর মতো এতো স্নিগ্ধ, এতো গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ মৃত্যু অনিবার্য, তুমি যখন জন্মেছো তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনীবার্য তাকে ভালোবাসাটা শ্রেয়।’
হুমায়ুন ফরীদির কাছে প্রেমের সংজ্ঞাও ছিল অনন্য। সেটা এরকম, ‘প্রেম হচ্ছে স্বর্গীয়। প্রেমের যে অনুভূতি, এটা পবিত্র এবং স্বর্গীয়। প্রেমের চেয়ে ভালো বিষয় মানব ইতিহাসে নেই। আমি শুধু মানুষে মানুষে প্রেমের কথা বলছি না। একটা মানুষ বৃক্ষের সঙ্গে প্রেম করতে পারে, একটা মানুষ তার বাসার জানালার পাশে যে গাছটি আছে, সে গাছে যে দোয়েল পাখিটি বসে, ওই পাখির প্রেমেও পড়তে পারে। সাধারণত আমরা প্রেম বলতে বুঝি, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে এরকম না। যেমন আমাদের নবীর সঙ্গে আল্লাহ্র প্রেম, এটাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবে? এটাকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব না। এটাকে শুধু হৃদয় থেকে অনুভব করতে হবে। প্রেম হচ্ছে এরকম।’ ভালোবাসা নিয়ে একটা উপদেশমূলক কথাও বলে গেছেন হুমায়ুন ফরীদি। তা হলো- ‘তুমি যখন কাউকে ভালোবাসবে, এক বুক সমুদ্র নিয়ে ভালোবাসতে হবে। তা নাহলে সে প্রেমের কোনো অর্থ নেই।’
হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ভাষা আন্দোলনের বছর, অর্থাৎ ১৯৫২ সালে, ঢাকার নারিন্দায়। তার প্রকৃত নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম। মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল সময়ে তিনি হাত গুটিয়ে ক্যাম্পাসে বসে থাকেননি। বরং পড়াশোনা ছেড়ে রাইফেল কাঁধে নেমে পড়েন দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে। স্বাধীনতার পর তিনি ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই শুরু হয় স্নাতক পর্বের নতুন জীবন। আর সবুজ প্রকৃতিঘেরা ওই ক্যাম্পাসেই বিকশিত হয় তার অভিনয়ের সুপ্ত প্রতিভা। যা একসময় জ্বালাময়ী অগ্নিশিখায় পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের কাছ থেকে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি। এরপর ডাক পান ঢাকা থিয়েটারে। সেখান থেকেই বিকশিত হয় তার অভিনয়ের দ্যুতি।
মঞ্চ দিয়ে শুরু হওয়া সেই যাত্রা সিনেমা, টিভি নাটকে সমৃদ্ধ অবস্থানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ, তিনি বিস্ময়ের চেয়ে কম ছিলেন না! ১৯৮০ সালে তার অভিষেক হয় টিভি নাটকে। প্রথম নাটকটির নাম ‘নিখোঁজ সংবাদ’। তবে দেশজুড়ে হুমায়ুন ফরীদির জনপ্রিয়তা আসে ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ দিয়ে। এখানে তিনি কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি নাটক হলো- ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘প্রিয়জন নিবাস’ ইত্যাদি।
১৯৮৫ সালে হুমায়ুন ফরীদির অভিষেক হয় সিনেমায়। শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত সেই ছবির নাম ‘দহন’। নব্বই দশকে তিনি সিনেমার খল চরিত্রে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান। ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’, ‘লড়াকু’ ইত্যাদি ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো- ‘একাত্তরের যীশু’, ‘দূরত্ব’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘অধিকার চাই’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘মাতৃত্ব’, ‘আহা!’ ইত্যাদি। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। এর আগে ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান এই নন্দিত তারকা। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
সুমি/হককথা