আজীবনের জন্য বহিষ্কার হচ্ছেন জাহাঙ্গীর!
- প্রকাশের সময় : ১১:০৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
- / ৪৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : শৃঙ্খলা মেনে চলার অঙ্গীকার করে দলে ফেরার চার মাস যেতে না যেতেই বিদ্রোহ করা গাজীপুরের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আর সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। গতকাল রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য লিখিত আকারে এই সুপারিশ পাঠানো হবে। বৈঠক সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। গত ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ঋণখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। উচ্চ আদালতও তার আবেদন নাকচ করেছেন। জাহাঙ্গীর এখন তার গৃহিণী মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। তার মায়ের দাবি, জাহাঙ্গীরের প্রতি ‘অবিচার’ হয়েছে। আর সেজন্য জনগণ তাকে ভোট দেবে। জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা বলেন, কেউ দলে থেকে দলীয় শৃঙ্খলা মানবেন না, তা হতে পারে না। তাই আমরা স্থায়ী বহিষ্কার চাচ্ছি। বৈঠকে বিষয়টি প্রথমে তোলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নীতিনির্ধারণী যে কোনো সিদ্ধান্ত দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে নেওয়া হয়। এখন সেই বৈঠক না হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সুপারিশ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা। এর আগে গত ২ মে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয় টিমের বৈঠক হয়। গত ১ মে গাজীপুরে মে দিবসের এক সভায় আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক টিমের সদস্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম যদি নৌকার পক্ষে কাজ না করে, তৃণমূলের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী শেখ হাসিনা তাকে আজীবন বহিষ্কার করতে পারেন। তিনি নৌকাকে সমর্থন না করলে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে বলে আমি মনে করি।’ গতকাল বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গতকালের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আমরা মত দিয়েছি কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন তাকে আর ক্ষমা করার কোনো সুযোগ না থাকে।
আরোও পড়ুন । বান্দরবানের নতুন আতঙ্ক নাথান বম
এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লা খান। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সাল) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির (প্রয়াত) নেতা এম এ মান্নান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ২ লাখ ২ হাজার ৩৯৯ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। সেই নির্বাচনের পর থেকে জাহাঙ্গীরের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তারপর বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। সেই ‘ক্ষমা’র শর্ত ভঙ্গ করে চার মাস যেতে না যেতেই দলের প্রার্থী আজমতউল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খানের নির্বাচনি কাজ করতে ২৮ সদস্যের টিম গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই টিমের প্রধান করা হয়েছে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে। টিমের সমন্বয়ক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
বেলী /হককথা