নিউইয়র্ক ০৬:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

১০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস পেয়ে খুশি ৩৫০ পরিবার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৮৮ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক :  মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে ১০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস পেয়ে খুশি ৩৫০টি পরিবার। বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের এমন উদ্যোগে ৩৫০ পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে।

মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার রাবিয়া খাতুন (৬৫)। ছেলে-সন্তান নেই। স্বামীকে হারিয়েছেন এক যুগ আগে। একটি ছোট ঘরে একাই বসবাস করেন তিনি। বাজার থেকে গরুর মাংস কেনা হয়নি কখনো। তাই জানেন না বাজারে কত টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি হয়। ‘গরিবের কসাইখানা’ থেকে ১০ টাকায় গরুর মাংস কিনেছেন তিনি। গরুর মাংসের এতো কম দাম জেনে অনেকটাই অবাক হয়েছেন রাবিয়া।

তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে কখনো গরুর মাংস কিনি নাই। এখানে এসে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। রোজার ঈদে এ প্রথম দুই টুকরো গরুর মাংস দিয়ে ভাত খামু। একা মানুষ এক কেজি গরুর মাংস চার দিন খেতে পারমু।’

ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরিবের কসাইখানা’ নামে ব্যতিক্রমী এই ঈদ বাজারে ১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা হয়।

শনিবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্ন আয়ের সাড়ে তিন শ পরিবারকে ১ কেজি গরুর মাংস দেওয়া হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরেও এই কসাইখানা বসেছিল। এছাড়া রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করে সংগঠনটি।

টংগিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের আকলিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘গতকাল থেকে বাজারে গরু জবাই করা হচ্ছে। দুই ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। তারা গরু জবাই দেখে এসে বলে, মা আমাদের গরুর গোস্ত কিন বা না? এমন প্রশ্নে খুব কষ্ট হইছিল। কিন্তু তাদের বলছিলাম ঈদের দিন গরুর গোস্ত কিনমু। ঠিকই আল্লাহ আমার সন্তানদের জন্য গরুর গোস্তের ব্যবস্থা করে দিলেন। এখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। এই দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই। এখন বাসায় গিয়ে রানমু।’

কামারখাড়া এলাকার সেন্টু বেপারি (৪৮)। তিনি রিকশা চালান। তার দুই মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর সংসার। গতকাল সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৩৪০ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা দিয়ে সেমাই-চিনি কিনেছিলেন। আজ সকালেও রিকশা নিয়ে বের হন, দুপুরে ভালোমন্দ খাবারের ব্যবস্থা করতে। গরিবের কসাইখানায় এসে তিনিও ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনেছেন।

সেন্টু বেপারি বলেন, ‘বাজারে ৭৫০ টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি করতেছে। ওই কসাইখানার সামনে দিয়ে আসলাম কিন্তু কেনার সাহস পাই নাই। এখানে এসে দেখি গরুর মাংস ১০ টাকায় বিক্রি করতেছে। কিন্তু আমার কাছে তাদের থেকে কেনার জন্য টোকেন ছিল না। পরে তাদেরকে বলার পর টোকেন দিল এবং আমি ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ঈদের দিন সাড়ে তিন শ পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এ ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামীতে সকলের সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারব।

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, বাজারে মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এত দামে তা কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের মতো তারাও যেন এ দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এ রকম আয়োজন করতে আমরা আরও উৎসাহ পাই। -সূত্র : ঢাকা পোস্ট

নাছরিন/হক কথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

১০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস পেয়ে খুশি ৩৫০ পরিবার

প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক :  মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে ১০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস পেয়ে খুশি ৩৫০টি পরিবার। বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের এমন উদ্যোগে ৩৫০ পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে।

মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার রাবিয়া খাতুন (৬৫)। ছেলে-সন্তান নেই। স্বামীকে হারিয়েছেন এক যুগ আগে। একটি ছোট ঘরে একাই বসবাস করেন তিনি। বাজার থেকে গরুর মাংস কেনা হয়নি কখনো। তাই জানেন না বাজারে কত টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি হয়। ‘গরিবের কসাইখানা’ থেকে ১০ টাকায় গরুর মাংস কিনেছেন তিনি। গরুর মাংসের এতো কম দাম জেনে অনেকটাই অবাক হয়েছেন রাবিয়া।

তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে কখনো গরুর মাংস কিনি নাই। এখানে এসে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। রোজার ঈদে এ প্রথম দুই টুকরো গরুর মাংস দিয়ে ভাত খামু। একা মানুষ এক কেজি গরুর মাংস চার দিন খেতে পারমু।’

ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরিবের কসাইখানা’ নামে ব্যতিক্রমী এই ঈদ বাজারে ১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি করা হয়।

শনিবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্ন আয়ের সাড়ে তিন শ পরিবারকে ১ কেজি গরুর মাংস দেওয়া হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরেও এই কসাইখানা বসেছিল। এছাড়া রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করে সংগঠনটি।

টংগিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের আকলিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘গতকাল থেকে বাজারে গরু জবাই করা হচ্ছে। দুই ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। তারা গরু জবাই দেখে এসে বলে, মা আমাদের গরুর গোস্ত কিন বা না? এমন প্রশ্নে খুব কষ্ট হইছিল। কিন্তু তাদের বলছিলাম ঈদের দিন গরুর গোস্ত কিনমু। ঠিকই আল্লাহ আমার সন্তানদের জন্য গরুর গোস্তের ব্যবস্থা করে দিলেন। এখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। এই দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই। এখন বাসায় গিয়ে রানমু।’

কামারখাড়া এলাকার সেন্টু বেপারি (৪৮)। তিনি রিকশা চালান। তার দুই মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর সংসার। গতকাল সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৩৪০ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা দিয়ে সেমাই-চিনি কিনেছিলেন। আজ সকালেও রিকশা নিয়ে বের হন, দুপুরে ভালোমন্দ খাবারের ব্যবস্থা করতে। গরিবের কসাইখানায় এসে তিনিও ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনেছেন।

সেন্টু বেপারি বলেন, ‘বাজারে ৭৫০ টাকা করে গরুর মাংস বিক্রি করতেছে। ওই কসাইখানার সামনে দিয়ে আসলাম কিন্তু কেনার সাহস পাই নাই। এখানে এসে দেখি গরুর মাংস ১০ টাকায় বিক্রি করতেছে। কিন্তু আমার কাছে তাদের থেকে কেনার জন্য টোকেন ছিল না। পরে তাদেরকে বলার পর টোকেন দিল এবং আমি ১০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম।’

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ঈদের দিন সাড়ে তিন শ পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এ ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামীতে সকলের সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারব।

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, বাজারে মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এত দামে তা কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের মতো তারাও যেন এ দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এ রকম আয়োজন করতে আমরা আরও উৎসাহ পাই। -সূত্র : ঢাকা পোস্ট

নাছরিন/হক কথা