টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির কদর রয়েছে বিদেশেও
- প্রকাশের সময় : ০২:২৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
- / ৫২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : শাড়িতেই যেন নারীর সৌন্দর্য। বাঙালি নারীর সৌন্দর্যকে শাড়ি যত নিপূণভাবে ফুটিয়ে তোলে,অন্য কোনো পোশাকে সেটা প্রকাশ পায় না। আধুনিকতার ছোঁয়াতেও শাড়ির প্রতি বাঙালি নারীদের রয়েছে প্রচণ্ড দুর্বলতা। কোনো উৎসবে তাই নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। আর শাড়ির প্রসঙ্গ উঠতেই চলে আসে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির নাম।ঈদকে সামনে রেখে শাড়ির চাহিদা বেড়ে যায় অনেক। তাই বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ঈদ মৌসুমে শাড়ি তৈরি করতে হয় অনেক বেশি। গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে ঈদের আগে রমজান শুরু হতেই শাড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায় তাঁতপল্লিতে। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বিখ্যাত পাথরাইল ছাড়াও এ উপজেলার চণ্ডী, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কেস্টপুর, নতুনপাড়া, ঘারিন্দা, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুরসসহ টাঙ্গাইলের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকায় শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকা এখন তাঁত বুননের খট্ খট্ শব্দে মুখর। তাঁতের কারিগররা এখন মহাব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাতেও তারা শাড়ি বুননে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রস্থল নিরালা মোড় থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে পাথরাইল গ্রাম। রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুইপাশ থেকেই ভেসে আসে তাঁত বুননের খট্ খট্ শব্দ। তাঁত কারিগররা দিন-রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন শাড়ি। আর সেই শাড়ি বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে দোকানে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ক্রেতারা শাড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারত, আমেরিকা, লন্ডন, ইতালি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ি। তাদের চাহিদা পুরণ করতেই তাঁত কারিগরদের এত ব্যস্ততা। সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, নব্বই দশকে তাঁতগুলো তাঁতিদের বাড়ির অভ্যন্তরে বসানো হতো। ১৯৯২ সালের হিসেব অনুযায়ী টাঙ্গাইল জেলায় ১ লাখের অধিক তাঁত ছিল এবং তাঁতীর সংখ্যা ছিল দেড় লাখের মতো। ২০১৩ সালের শুমারিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী টাঙ্গাইল জেলায় ঐ সময়ে ৬০ হাজার তাঁত ছিল। বর্তমানে তাঁতের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪০২টি। এর জন্য দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি, করোনা ভাইরাস এবং কারিগরের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরোও পড়ুন । বাংলাদেশ সোসাইটির সপ্তম পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার ফাইনাল ২ এপ্রিল
প্রবীণ তাঁতীঁ সচীন রাজবংশী বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা এক সময় তুঙ্গে ছিল। নানা সমস্যার কারণে এখন সে অবস্থা নেই। হস্তচালিত তাঁতে শাড়ি বানাতে বেশি সময় লাগে। সে অনুযায়ী কারিগরদের মজুরি দেওয়া যায় না। ফলে কারিগররা চিত্তরঞ্জন ও পাওয়ার লোমের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মহাজনদের কাছ থেকে সুতা, তানা এনে কারিগর দিয়ে শাড়ি বানাই। শাড়ি তৈরি করে মহাজনদের দিই। তারাই বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে আমরা ক্ষুদ্র মজুরি পাই। ইচ্ছে করলেই আমরা কারিগরদের মজুরি বাড়াতে পারি না। এর প্রভাব শাড়িতে পড়ছে।’ তাঁতপল্লির বিক্রয় কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী সোরহাব হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির মূল ব্যবসা ঈদ-পূজাকে কেন্দ্র করে। সারা বছর ব্যবসাটাকে ধরে রাখা হয়। ঈদ বা পূজাকে ঘিরে সারা বছরের উৎপাদিত শাড়ি বিক্রি শেষ হয়। কারিগর সুমন বসাক বলেন, ঈদ এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সারা দিন তাঁতে বসে কাটে। অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম হয়। টাঙ্গাইল তাঁতশিল্প মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও যত্তোশ্বর অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী রঘুনাথ বসাক বলেন, ঈদ এলে টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির কদর অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ঈদের বাজারে এ বছর শাড়ি বিক্রি কম। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
বেলী / হককথা