নিজের ছেলের শুক্রাণুতে মা হলেন অভিনেত্রী, ‘সারোগেসি’ নিয়ে উসকে দিলেন বিতর্ক

- প্রকাশের সময় : ০২:০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩
- / ৭৪ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের মৃত সন্তানের শেষ ইচ্ছা পূরণে তাঁর শুক্রাণুতে সারোগেসির মাধ্যমে (এক নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতি) ‘মা’ হয়েছেন স্প্যানিশ অভিনেত্রী আনা ওবরেগন (৬৮)। ছেলের শুক্রাণু আর নিজের ডিম্বাণু দিয়ে গঠিত ভ্রুণ অন্য এক নারীর গর্ভে সেই সন্তান বেড়ে উঠেছে। এই ঘটনার পর সারোগেসি নিয়ে স্পেনে চলছে তুমুল বিতর্ক। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আমেরিকার সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আনা ওবরেগনের এক সাক্ষাৎকারে পুরো বিষয়টি উঠে আসে। সেই সাক্ষাৎকারে আনা ওবরেগন বলেন, ২০২০ সালে ২৭ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর ছেলে অ্যালেস। ছেলের জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল সন্তানের বাবা হওয়া।
কীভাবে অ্যালেসের শুক্রাণু ব্যবহার করে সারোগেসি পদ্ধতিতে মা হয়েছেন আনা ওবরেগন—সেই পুরো বিষয়টি সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণনা করেছেন। স্প্যানিশ অভিনেত্রী আনা ওবরেগনের বিষয়টি সামনে আসার পর ‘লেট্রাস’ নামের অন্য একটি ম্যাগাজিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাসকারী কিউবান বংশোদ্ভূত এক নারীর ছবি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ করে। ওই নারীই ছিলেন অ্যালেস–ওবরেগনের সন্তানের সারোগেট মাদার। অর্থাৎ সন্তান নিতে ওই নারীর গর্ভ ভাড়া নিয়েছিলেন ওবরেগন।

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের এমন ঘটনা সামনে আসার পর এই পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্পেনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সারোগেসির আইনি ও নৈতিক দিক নিয়ে বিতর্ক চলছে। স্পেনে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়া আইনিভাবে স্বীকৃত নয়। হোলা ম্যাগাজিনকে আনা ওবরেগন বলেন, ‘এই মেয়েটি আমার মেয়ে নয়, আমার নাতনি। সে অ্যালেসের মেয়ে এবং সে যখন বড় হবে তখন আমি তাকে বলব যে তার বাবা একজন নায়ক ছিলেন।’ গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে আনা স্যান্দ্রা লেকুইও ওবরেগনের জন্ম হয়। সে হিসেবে জন্মসূত্রে সে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী নাগরিক হবে। স্পেনে যাওয়ার আগে মিয়ামিতে স্পেনের কনস্যুলেটের মাধ্যমে তাঁকে নথিভুক্ত করা হবে বলে হোলা ম্যাগাজিনকে জানান আনা ওবরেগন।
সারোগেসি নিয়ে বিতর্ককে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে আনা ওবরেগন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান খুবই স্বাভাবিক। সেখানে স্পেনের মতো এমন বিতর্ক নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই এই পদ্ধতি বৈধ।’ স্প্যানিশ আইনে সারোগেসি অবৈধ। এখন সারোগেসি পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুকে দেশে আনা যাবে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে অভিনেত্রী বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ওই সন্তানের স্বীকৃত মা। আর স্পেনে সারোগেসি অবৈধ হলেও অন্য দেশে সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশু দত্তক নেওয়া বৈধ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যে পরিস্থিতি সেখানে বৈধতা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। দেশে ফেরার পরে কোনো আইনি সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা নেই। স্পেনের আইন, সারোগেসিকে ‘নারীর ওপর নিপীড়ন’ হিসেবে দেখে। তবে সবকিছুর শেষে নৈতিক প্রশ্নটিই বারবার আলোচনায় আনছেন সমালোচকেরা। এ বিষয়ে দর্শনের শিক্ষক গঞ্জালো ভেলাস্কো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মৃত ছেলের শুক্রাণু ব্যবহারের করে সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে মা হওয়ার বিষয়টি আমার কাছে খুবই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে।’