ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা নেই কারও কাছেই
- প্রকাশের সময় : ০৩:৩০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
- / ৪০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : রাজধানীতে একের পর এক ভবন দুর্ঘটনা। কোথাও বিস্ফোরণ, কোথাও ধস, কোথাও ভবন হেলে পড়ছে, কোথাও লাগছে ভয়াবহ আগুন। এসব দুর্ঘটনার পর ওই ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও রাজধানীতে ভবনের সংখ্যা কত এবং এসব ভবনের মধ্যে কতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তার কোনো হিসাব নেই মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে। গত ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। এর আগে ৫ মার্চ রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।
রাজধানীকে দেখভাল করা উত্তর সিটি করপোরেশন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জরিপে রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় গরমিল দেখা যায়। তাই রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হিসাব জানতে ইত্তেফাক অনলাইন থেকে প্রথমে যোগাযোগ করা হয় উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে।
ডিএনসিসি’র তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাছান বলেন, ‘আমাদের(ডিএনসিসি) কাছে রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তালিকা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হিসাব পাবেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে।’ বিভিন্ন জরিপের তথ্যমতে, রাজধানীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ও ভয়াবহ ভবন দুর্ঘটনা ঘটে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। যোগাযোগ করা হয় ডিএসসিসি’র সঙ্গে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তালিকা আমাদের কাছে নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকার হিসাব পাবেন রাজউকের কাছে। তবে ডিএসসিসি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেশি এবং দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা হওয়ায় আমরা এসব ভবন পর্যবেক্ষণ রাখার চেষ্টা করি। কোনো ভবন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ব্যবহার অনুপযোগী হলে আমাদের চোখের দেখা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা ব্যানার লাগিয়ে সবাইকে সর্তক করি।’ রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তথ্য না পেয়ে ও তাদের দাবি করা তথ্য বিষয়ে জানতে চাই রাজউকের কাছে।
এ বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) মো. মোবারক হোসেন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা শুধু ভবন নির্মাণ করার করার আগে যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। ছাড়পত্র দেওয়ার পর ভবন নির্মাণ করার নকশা অনুমোদন দিয়ে থাকি। গ্রাহকরা ভবন নির্মাণ করার আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর পরতো আমাদের কাছে আসে না বা আসার প্রয়োজন পড়ে না। সারা বছর এসব ভবন থেকে সিটি করপোরেশন ট্যাক্স আদায় করে সুতরাং সিটি করপোরেশন তাদের দেখভাল করে। এমন কী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনের তালিকা লাগায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে ভবনের প্রকৃত ভবনের সংখ্যা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের প্রকৃত তালিকা রাজউকের কাছে নেই। ২০১৯ সালের আগে রাজউকের অনুমোদিত ভবনের সংখ্যা ম্যানুয়ালি আছে তাই এই মুহূর্তে ভবনের সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে ২০১৯ সালের মে মাসে রাজউক ডিজিটালাইজড হয়, সে হিসেবে রাজউকের অনুমোদিত ভবনের সংখ্যা হলো (২ মে ২০১৯ থেকে ১২ মার্চ ২০২৩ সাল) ৩৬ হাজার ৬০০টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ হাজার ২০০টি।’
দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দেখভাল করে তাই ইত্তেফাক অনলাইন রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা রাজউকের কাছে না পেয়ে এবার জানতে চায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কাছে নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকার কাজ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুতরাং তাদের কাছে এ হিসাব পাবেন।’ইত্তেফাক অনলাইন রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ সঙ্গে কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এরপর সর্বশেষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরে সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-পুলিশ স্টেশনের ভবনগুলোর ওপর জরিপ চালায়। এতে ৩ হাজার ২৫২ ভবনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৮৭ ভবন পাওয়া যায়, যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ করা সম্ভব। আর ৪২টি ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেগুলোকে অপসারণ করার কথা বলা হয়।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৭ মে ফায়ার সার্ভিসের তৎকালীন মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান জানান, নগরীতে ১১০ ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৮ সালে তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন রাজধানীতে ৩২১ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন।
রাজধানী ঢাকা। ছবি: ইত্তেফাক
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাজধানীর ভবনগুলোতে জরিপ চালিয়ে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কী না এ ব্যাপারে সনদ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ২০২১ সালে সিলেটে পরপর সাতবার ও চট্টগ্রামে তিনবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গত বছর এবং এ বছরের শুরুতে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে। এসব ছোট–বড় ভূমিকম্প ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকির কথা জানান দেয়। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা