পানি নেই, তিস্তার বুকে ধুধু বালুচর

- প্রকাশের সময় : ১২:৩০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
- / ৮৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে সারাদেশে। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ভূগর্ভস্থ পানি:অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব’। এ উপলক্ষে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থা এ দিবসটি পালন করছেন। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে সারা বিশ্বে পালিত হয় পানি দিবস। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ও নীলফামারী জেলায় ১২০ কিলোমিটার তিস্তা নদী প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, আলু, বাদাম, পেয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টাসহ নানান জাতের ফসল। এসব চরাঞ্চলে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষকে। অনেক এলাকয় মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও ৮ কিলোমিটার, আবার কোথাও ১২ কিলোমিটার চর পারি দিতে হচ্ছে পায়ে হেঁটে। আবার পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না নদীতে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের বাসি আবুল কালাম মিয়া বলেন, চরাঞ্চল ও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হাজার হাজার মানুষ। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নৌকা ঘাটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি ও জেলে। জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন মাঝিরা। পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, মৎস্যজীবিরাও অনেক সংকটে পড়ছেন। নদীপাড়ের মানুষ কষ্টে জীবযাপন করছেন। কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা চর ইচলী গ্রামের এমদাদ হোসেন বলেন, ‘তিস্তা নদীতে পানি নেই। চারিদিকে ধুধু বালুচর। নদী পারাপারের এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের। তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে,সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।’এই পানি দিয়ে সঠিক ভাবে চাষ করা কষ্ট হচ্ছে। আবার তেলের দাম অনেক বেশি। এসব কৃষি জমি চাষ করতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা।
আরোও পড়ুন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দূরীকরণে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র : রাষ্ট্রদূত পিটার হাস
গংগাচড়া বুড়িচর এলাকার সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা হয় তিনি বলেন, নদীতে পানি নেই, ধরা পড়ছে না মাছ। এর ফলে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলেরা পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। তাদের মানেবতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।’ একই গ্রামের নৌকার মাঝি আবদুল্লাহ আল মমিন বলেন, তিস্তার বুকে পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষ পায়ে হেঁটে তিস্তার এ পার ওপার পাড়ি দিচ্ছেন। এ কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে সঠিক ভাবে আয় না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী মো : আসফাউদদৌলা বলছেন, তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ১১০০-১৩০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তা দিয়ে কোনো রকমে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে এই সময় পানি ব্যারেজ পয়েন্টে পাওয়ার কথা ১৮শ থেকে দুই হাজার কিউসেব। আর ব্যারেজ পয়েন্টের পানি দিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষ আবাদ করা হচ্ছে। এই পানি দিয়ে সেচ সুবিধা ও চাষ আবাদ করছে কৃষক। তবে আবার বৃষ্টি হলে পানি বৃদ্ধি পাবে। পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী নদীমাতৃক কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সঠিক ও পরিকল্পিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাগেছে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে প্রথম বিশ্ব পানি দিবসে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়। আর সেই থেকেই পানি দিবস পালনের গুরুত্ব পায়। এর পর বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পানি দিবস পালন করা হচ্ছে। সূত্র : কালের কন্ঠ
সুমি/হককথা