নিউইয়র্ক ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট : ঢাকায় বর্বর গ্রেনেড হামালায় ২৪ জনের প্রাণহানী ঘটনার ১১তম বার্ষিকী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫
  • / ১২৮৭ বার পঠিত

ঢাকা: বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ইতিহাসের একটি কলংকময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চালানো হয়েছিল নারকীয় গ্রেনেড হামলা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নৃশংস সে হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তিনি স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি হারান। ওই ঘটনায় আহত হন ওই দিনের সমাবেশে আসা আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। ন্যক্কারজনক ওই হামলার দীর্ঘ ১১ বছর পার হলেও মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
২০০৪ সালে ওই ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার সময় সরকারে ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। আর ওই গ্রেনেড হামলার পর ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দফা তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘটনার নেপথ্যের নীলনকশা। মামলার অভিযোগপত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়।
ঐতিহাসিক এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, প্রথম দফা চার্জশিটে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম এলেও কিছু ঘটনা অজানা ছিল। সম্পূরক চার্জশিটে বেরিয়ে আসে গ্রেনেডের উৎস, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের নাম।
ভয়াল ২১ আগস্টের ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা। দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের ডাক দেয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশের শেষদিকে ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে দলের সভানেত্রী বক্তব্য দেয়া শুরু করতেই চারদিক থেকে শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলায় একের পর এক ছিন্নভিন্ন হতে থাকে সমাবেশে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেহ। ঘটনার আকস্মিকতায় সমাবেশস্থল থেকে যে যার মতো পালাতে থাকেন। এ সময় তৎকালীন মেয়র হানিফসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা মানবঢাল তৈরি করে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে নিরাপদে গাড়িতে তুলে দেন। তবে গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তিনি সাধারণ শ্রবণশক্তি হারান। ওই ঘটনায় গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মারা যান তৎকালীন মেয়র হানিফ।
যারা নিহত হয়েছেন: ইতিহাসের বর্বরোচিত ওই গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমান, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া। বাকি একজনের পরিচয় দীর্ঘ ১১ বছরেও জানা যায়নি।
এছাড়া গুরুতর আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এএফএম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক।
তদন্তের নামে প্রহসন: ওই ঘটনার পর তৎকালীন জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনও গঠন করেছিল। সেই কমিশনও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপপ্রচারের পথ ধরেই চলেছিল। এক মাস ১০ দিনের মাথায় কমিশন সরকারের কাছে ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, কমিশনের সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে, এই হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত রয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বিদেশী শক্তি বলতে কোনো দেশের নাম বলা হয়নি।
মামলার তদন্ত: গ্রেনেড হামলার পর মতিঝিল থানার এসআই ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় মোট সাত দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। তদন্তের শুরুতে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সহায়তা নেয়া হয়। গ্রেনেড হামলার আট দিন পর ২০০৪ সালের ২৯ আগস্ট ইন্টারপোলের দুই কর্মকর্তা মিস জ্যাকুলিন ও জেফ্রি আইলস ঢাকায় আসেন। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আসেন ইন্টারপোলের কর্মকর্তা এইচ ডব্লিউ সিন, মারাস ভুসিনাস ও উইসন গিবসন। ইন্টারপোল ছাড়াও সে সময় এসেছিলেন এফবিআইর একটি টিম। ওই সময় এফবিআই সদস্যরা কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। পরে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সে আলামত ফিরিয়ে দেয় এফবিআই। জজ মিয়া নাটক ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে সিআইডি। গ্রেফতারের পর ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার কাছ থেকে সিআইডি সাজানো জবানবন্দি নেয়। এই জজ মিয়াকে দিয়েই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ ফাদেন মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও এই সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গল্প সাজানোর ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন বলে পরবর্তীকালে তদন্তে জানা যায়।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয়। ২০০৮ সালে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন। ফের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর গ্রেনেড হামলার পুনঃতদন্ত হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়।
কর্মসূচি: দিনটি স্মরণে ২১ আগষ্ট শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট : ঢাকায় বর্বর গ্রেনেড হামালায় ২৪ জনের প্রাণহানী ঘটনার ১১তম বার্ষিকী

প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫

ঢাকা: বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট ইতিহাসের একটি কলংকময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চালানো হয়েছিল নারকীয় গ্রেনেড হামলা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নৃশংস সে হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তিনি স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি হারান। ওই ঘটনায় আহত হন ওই দিনের সমাবেশে আসা আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। ন্যক্কারজনক ওই হামলার দীর্ঘ ১১ বছর পার হলেও মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
২০০৪ সালে ওই ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার সময় সরকারে ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। আর ওই গ্রেনেড হামলার পর ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দফা তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘটনার নেপথ্যের নীলনকশা। মামলার অভিযোগপত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়।
ঐতিহাসিক এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, প্রথম দফা চার্জশিটে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম এলেও কিছু ঘটনা অজানা ছিল। সম্পূরক চার্জশিটে বেরিয়ে আসে গ্রেনেডের উৎস, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের নাম।
ভয়াল ২১ আগস্টের ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তারা। দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের ডাক দেয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশের শেষদিকে ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে দলের সভানেত্রী বক্তব্য দেয়া শুরু করতেই চারদিক থেকে শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলায় একের পর এক ছিন্নভিন্ন হতে থাকে সমাবেশে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেহ। ঘটনার আকস্মিকতায় সমাবেশস্থল থেকে যে যার মতো পালাতে থাকেন। এ সময় তৎকালীন মেয়র হানিফসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা মানবঢাল তৈরি করে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে নিরাপদে গাড়িতে তুলে দেন। তবে গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তিনি সাধারণ শ্রবণশক্তি হারান। ওই ঘটনায় গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মারা যান তৎকালীন মেয়র হানিফ।
যারা নিহত হয়েছেন: ইতিহাসের বর্বরোচিত ওই গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমান, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া। বাকি একজনের পরিচয় দীর্ঘ ১১ বছরেও জানা যায়নি।
এছাড়া গুরুতর আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এএফএম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক।
তদন্তের নামে প্রহসন: ওই ঘটনার পর তৎকালীন জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনও গঠন করেছিল। সেই কমিশনও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপপ্রচারের পথ ধরেই চলেছিল। এক মাস ১০ দিনের মাথায় কমিশন সরকারের কাছে ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, কমিশনের সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে, এই হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত রয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বিদেশী শক্তি বলতে কোনো দেশের নাম বলা হয়নি।
মামলার তদন্ত: গ্রেনেড হামলার পর মতিঝিল থানার এসআই ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় মোট সাত দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। তদন্তের শুরুতে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সহায়তা নেয়া হয়। গ্রেনেড হামলার আট দিন পর ২০০৪ সালের ২৯ আগস্ট ইন্টারপোলের দুই কর্মকর্তা মিস জ্যাকুলিন ও জেফ্রি আইলস ঢাকায় আসেন। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আসেন ইন্টারপোলের কর্মকর্তা এইচ ডব্লিউ সিন, মারাস ভুসিনাস ও উইসন গিবসন। ইন্টারপোল ছাড়াও সে সময় এসেছিলেন এফবিআইর একটি টিম। ওই সময় এফবিআই সদস্যরা কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। পরে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সে আলামত ফিরিয়ে দেয় এফবিআই। জজ মিয়া নাটক ঘটনার ১০ মাসের মাথায় ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক যুবককে আটক করে সিআইডি। গ্রেফতারের পর ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়ার কাছ থেকে সিআইডি সাজানো জবানবন্দি নেয়। এই জজ মিয়াকে দিয়েই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে তদন্তের নামে ‘আষাঢ়ে গল্প’ ফাদেন মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ ও তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও এই সাজানো ছকে কথিত তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই গল্প সাজানোর ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন বলে পরবর্তীকালে তদন্তে জানা যায়।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয়। ২০০৮ সালে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন। ফের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর গ্রেনেড হামলার পুনঃতদন্ত হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়।
কর্মসূচি: দিনটি স্মরণে ২১ আগষ্ট শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও এ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন। (দৈনিক যুগান্তর)