সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে ইরান-সৌদি আরব
- প্রকাশের সময় : ১২:১৮:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩
- / ৩০ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এবার মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে চীন। এতদিন দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছে তারা। মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে তারা ঋণ দিয়ে, বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে আধিপত্য বিস্তার করছে। তা নিয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ নিয়ে বিস্তার লেখালেখি হয়েছে। সর্বশেষ এতদিন বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকা ইরান ও সৌদি আরব তাদের মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে একমত হয়েছে। শুক্রবার উভয় পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বেইজিংয়ে। দেশ দুটির মধ্যে সাত বছর ধরে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে আছে। ফাটল মানে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নই। সেই সম্পর্ককে জোড়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে চীন। তাতে দৃশ্যত সফলতাও পেয়েছে তারা।
দুই মাসের মধ্যে কূটনৈতিক মিশন নিয়ে আলোচনায় বসবেন ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ইরানে এই চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনের একটি পদক্ষেপ হিসেবে এর প্রশংসা করেছেন ইরানের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমৃদ্ধ হবে। এই চুক্তিকে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জন্য একটি পরাজয় ইঙ্গিত করে সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে রক্ষণশীল মিডিয়াগুলো। ২০১৬ সালে যখন তেহরানে অবস্থিত রিয়াদের কূটনৈতিক মিশনে হামলা হয়। তাতে তেহরানের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ। এ সময়টাও সেলিব্রেট করেছিল এসব আউটলেট। ২০১৬ সালে শিয়াপন্থি প্রথম সারির একজন ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব। এর ফলে তেহরানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। সেখান থেকে রিয়াদের কূটনৈতিক মিশনে হামলা হয়েছিল। ওই সময় সৌদি আরবের নেতাদের নিন্দা জানিয়েছিলেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আলি হোসেইনি খামেনি।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সৌদি আরব ও ইরান ইস্যু আলোচনায় এসেছে। তখন থেকে ইরানি কোনো কর্মকর্তা বা রাষ্ট্রীয় কোনো মিডিয়া প্রকাশ্যে আলোচনা নিয়ে অশ্রদ্ধা বা হতাশা প্রকাশ করেনি। শেষ পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রচেষ্টায় তাতে ফল হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সৌদি আরব সফর করেন শি জিনপিং। গত মাসে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
ওদিকে শুক্রবারের অগ্রগতিকে ইরান এবং ওমান আশাবাদী বলে অভিনন্দান জানিয়েছে। তারা এর আগে এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সহায়কের কাজ করেছে। আর এই উদ্যোগকে সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তিকে নতুন ইতিবাচক একটি অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়। অনেক পদক্ষেপের মধ্যে এটি একটি। এমন কথা বলেছেন তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডিয়াকো হোসেইনি। তিনি মনে করেন ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে অধিক সতর্ক হতে পারে সৌদি আরব। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে চায় না। সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দুই পক্ষই একে অন্যকে বিশ্বাস করছে এমনটা জরুরি নয়। ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকে উত্তেজনা প্রশমন করা উভয় পক্ষের বিস্তৃত স্বার্থের জন্য সহায়ক হতে পারে। ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে আট বছর ধরে। এই যুদ্ধে বিপরীত পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইরান ও সৌদি আরব। ফলে এই চুক্তি থেকে যা বেরিয়ে আসবে তার জন্য এ বিষয়টি হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা অর্জন করা হবে কঠিন।
ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার গ্রাজুয়েট স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী প্রফেসর থমাস জুনিউ মনে করেন শুক্রবারের এই চুক্তি হয়তো উত্তেজনা হ্রাস করবে বহুলাংশে। ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে গুঁতোগুঁতি, অবিশ্বাস নিয়ে উত্তেজনা চলছে দশকের পর দশক ধরে। তিনি আরো মনে করেন দীর্ঘনি ধরে ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠেছে সৌদি আরব। সৌদি আরব মনে করতে পারে তেহরানের সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে তারা ইরানপন্থি হুতিদের সঙ্গে চুক্তি করতে সক্ষম হবে তেহরান।
সুমি/হককথা