নিউইয়র্ক ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সফলতা পাবে মধ্যস্থতা?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১৬৭ বার পঠিত

সংগৃহীত ছবি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই মধ্যস্থতার আলোচনায় ছিল চীন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো থেকে শুরু করে কিছু পশ্চিমা নেতারা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চীনের মধ্যস্থতার আশা করেছিলেন। কিন্তু চীন সেদিকে নজর দেয়নি। বরং চীন রুশ হামলার নিন্দা পর্যন্ত এখনো জানায়নি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ করেছে চীন। যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেনে আকস্মিক সফর তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এর চার-পাঁচ দিনের মাথায় চীনের ১২ দফার শান্তি প্রস্তাবও নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই যুদ্ধে হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর আজও কেউ হয়তো জানে না যে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে? চীনের প্রস্তাবের সফলতা কতটুকু? শান্তি প্রস্তাব দেওয়ার আগে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই মস্কো সফরে যান এবং বিশ্বে কোনো একক দেশের চোখ রাঙানি না মানতে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। এরপর চীন ১২ দফার একটি শান্তি প্রস্তাবের তথ্য প্রকাশ করে।

কিন্তু একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর আজও কেউ হয়তো জানে না যে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এর কড়া সমালোচনা করে। নেতৃবৃন্দ জানান, যে দেশ এখন পর্যন্ত রুশ আগ্রাসনের নিন্দাটুকু করেনি, সেখানে দেশটি নিরপেক্ষ থাকবে কীভাবে। চীনের প্রস্তাবে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা, দুই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো ও হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এর কড়া সমালোচনা করে।

গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নীতিমালা প্রকাশ করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সিএনএন নেটওয়ার্কে জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করলে আগামীকালই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। অর্থাৎ ১২ দফা পরিকল্পনার বদলে চীন শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করলেই পারতো।

ন্যাটো মহাসচিবও একই ধরনের কথা বলেছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক দিক থেকে সহায়তাকারী দেশ ও জোটের পক্ষ থেকে এমন সমালোচনা আসায় চীনের মধ্যস্থতার সফলতার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলেছেন। চীনের সমালোচনা করলেও আবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, চীন ও ভারত মানা না করলে রাশিয়া এতোদিন ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালাত। ফলে যুদ্ধটা যে বন্ধ করা দরকার সেটা সবাই চান। আবার অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সফরে গিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।

আর সেই মুহূর্তে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এর রাশিয়া সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী মাসেই মস্কো সফরে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাহলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন জেলেনস্কিকে শক্তি যুগিয়েছেন, একইভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট হয়তো রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সাহস যোগাবেন!

 

নেতৃত্ব দেখানোর জন্য যথেষ্ট সুযোগ চীনের ছিল বলে জানান ড. কোরোলেভ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের যা লক্ষ্য তা হচ্ছে প্রথমত, বিশ্বের শান্তিরক্ষক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করা। তারা আসলে কাকে দলে টানতে চাইছে সেটার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে তাদের একটি দলিলে যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা তথাকথিত গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। চীনের আরেকটি লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠানো।

ব্রিটেনের নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের একজন বিশেষজ্ঞ ড. আলেকজান্ডার কোরোলেভ বলছেন, ‘এর মধ্যে বিরুদ্ধাচরণের স্পর্ধা দেখানোর একটি ব্যাপারে রয়েছে। এই বার্তা দিচ্ছে : আমাদের মধ্যে সম্পর্ক যদি খারাপ হয়, তাহলে আমরা অন্য কারো কাছে যেতে পারি। রাশিয়া একা নয়, যার মানে হল যখন যুদ্ধ হবে তখন আমরাও একা থাকব না… তাই ধমকা ধমকি করে পার পাবেন না।’

নেতৃত্ব দেখানোর জন্য যথেষ্ট সুযোগ চীনের ছিল বলে জানান ড. কোরোলেভ। তারা জানান, লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রথম দিকেই তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদি সত্যি তাদের লক্ষ্য থাকত বিশ্বনেতা হিসেবে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা, তাহলে গত একটি বছর দেশটি দর্শকের ভূমিকায় থাকত না। চীনের তৃতীয় একটি লক্ষ্য রয়েছে এবং ওয়াংয়ের ভ্রমণ সূচি থেকে এটা বোঝা যায়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও হাঙ্গেরি যে দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার প্রতি কম কট্টরপন্থী বলে চীন বিশ্বাস করে, এসব দেশ সফর করে ওয়াং হয়তো দেখতে চাইছেন যে ইউরোপের কিছু অংশকে চীনের বলয়ের দিকে প্রলুব্ধ করা যায় কি না।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বেইজিং শেষ পর্যন্ত মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তাহলে তা চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। অন্যরা এ ধরনের পদক্ষেপকে সংঘাত বৃদ্ধি হিসেবে দেখবে এবং নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে আরও ব্যাঘাত ঘটবে, যা চীনের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর কারণ হবে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো চীনের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম। গত এক বছরে দুই পক্ষের হাজার হাজার সেনা মারা গেছেন। ইউক্রেনের বেশ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের বহু ছোট-বড় শহর ধ্বংস হয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এক বছর পরেও সংঘাত থামার চিহ্ন নেই। শান্তি আলোচনা শুরু করার পক্ষে চাপ বাড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন

জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলের রাজনীতিক ওয়াগেনকানেক্ট ও নারীবাদী অ্যালিস সোয়ারজার প্রচার শুরু করেছেন, অবিলম্বে আলোচনা করতে হবে এবং অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেন কোনো ছোট লড়াইয়ে জিততে পারে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র যে দেশের হাতে আছে, তাদের হারাতে পারবে না। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ৫ লাখ মানুষ তাদের আবেদনপত্রে সই করেছেন। জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত একটি ওয়েবসাইটকে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উদ্বেগ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই আছে।

ন্যাটোর জেনারেল সেক্রেটারি স্টলটেনবার্গ জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষে শান্তির জন্য একতরফা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা আর থাকতে পারবে না। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সফলতা পাবে মধ্যস্থতা?

প্রকাশের সময় : ১২:৪৭:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই মধ্যস্থতার আলোচনায় ছিল চীন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো থেকে শুরু করে কিছু পশ্চিমা নেতারা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে চীনের মধ্যস্থতার আশা করেছিলেন। কিন্তু চীন সেদিকে নজর দেয়নি। বরং চীন রুশ হামলার নিন্দা পর্যন্ত এখনো জানায়নি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ করেছে চীন। যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেনে আকস্মিক সফর তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এর চার-পাঁচ দিনের মাথায় চীনের ১২ দফার শান্তি প্রস্তাবও নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই যুদ্ধে হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর আজও কেউ হয়তো জানে না যে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে? চীনের প্রস্তাবের সফলতা কতটুকু? শান্তি প্রস্তাব দেওয়ার আগে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই মস্কো সফরে যান এবং বিশ্বে কোনো একক দেশের চোখ রাঙানি না মানতে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। এরপর চীন ১২ দফার একটি শান্তি প্রস্তাবের তথ্য প্রকাশ করে।

কিন্তু একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর আজও কেউ হয়তো জানে না যে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এর কড়া সমালোচনা করে। নেতৃবৃন্দ জানান, যে দেশ এখন পর্যন্ত রুশ আগ্রাসনের নিন্দাটুকু করেনি, সেখানে দেশটি নিরপেক্ষ থাকবে কীভাবে। চীনের প্রস্তাবে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা, দুই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানো ও হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এর কড়া সমালোচনা করে।

গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নীতিমালা প্রকাশ করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সিএনএন নেটওয়ার্কে জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করলে আগামীকালই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। অর্থাৎ ১২ দফা পরিকল্পনার বদলে চীন শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করলেই পারতো।

ন্যাটো মহাসচিবও একই ধরনের কথা বলেছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক দিক থেকে সহায়তাকারী দেশ ও জোটের পক্ষ থেকে এমন সমালোচনা আসায় চীনের মধ্যস্থতার সফলতার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলেছেন। চীনের সমালোচনা করলেও আবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, চীন ও ভারত মানা না করলে রাশিয়া এতোদিন ইউক্রেনে পরমাণু হামলা চালাত। ফলে যুদ্ধটা যে বন্ধ করা দরকার সেটা সবাই চান। আবার অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সফরে গিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।

আর সেই মুহূর্তে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এর রাশিয়া সফর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী মাসেই মস্কো সফরে যাচ্ছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাহলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন জেলেনস্কিকে শক্তি যুগিয়েছেন, একইভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট হয়তো রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সাহস যোগাবেন!

 

নেতৃত্ব দেখানোর জন্য যথেষ্ট সুযোগ চীনের ছিল বলে জানান ড. কোরোলেভ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের যা লক্ষ্য তা হচ্ছে প্রথমত, বিশ্বের শান্তিরক্ষক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করা। তারা আসলে কাকে দলে টানতে চাইছে সেটার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে তাদের একটি দলিলে যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা তথাকথিত গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। চীনের আরেকটি লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠানো।

ব্রিটেনের নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের একজন বিশেষজ্ঞ ড. আলেকজান্ডার কোরোলেভ বলছেন, ‘এর মধ্যে বিরুদ্ধাচরণের স্পর্ধা দেখানোর একটি ব্যাপারে রয়েছে। এই বার্তা দিচ্ছে : আমাদের মধ্যে সম্পর্ক যদি খারাপ হয়, তাহলে আমরা অন্য কারো কাছে যেতে পারি। রাশিয়া একা নয়, যার মানে হল যখন যুদ্ধ হবে তখন আমরাও একা থাকব না… তাই ধমকা ধমকি করে পার পাবেন না।’

নেতৃত্ব দেখানোর জন্য যথেষ্ট সুযোগ চীনের ছিল বলে জানান ড. কোরোলেভ। তারা জানান, লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রথম দিকেই তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদি সত্যি তাদের লক্ষ্য থাকত বিশ্বনেতা হিসেবে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা, তাহলে গত একটি বছর দেশটি দর্শকের ভূমিকায় থাকত না। চীনের তৃতীয় একটি লক্ষ্য রয়েছে এবং ওয়াংয়ের ভ্রমণ সূচি থেকে এটা বোঝা যায়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও হাঙ্গেরি যে দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার প্রতি কম কট্টরপন্থী বলে চীন বিশ্বাস করে, এসব দেশ সফর করে ওয়াং হয়তো দেখতে চাইছেন যে ইউরোপের কিছু অংশকে চীনের বলয়ের দিকে প্রলুব্ধ করা যায় কি না।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বেইজিং শেষ পর্যন্ত মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তাহলে তা চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। অন্যরা এ ধরনের পদক্ষেপকে সংঘাত বৃদ্ধি হিসেবে দেখবে এবং নিষেধাজ্ঞা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে আরও ব্যাঘাত ঘটবে, যা চীনের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর কারণ হবে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো চীনের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম। গত এক বছরে দুই পক্ষের হাজার হাজার সেনা মারা গেছেন। ইউক্রেনের বেশ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের বহু ছোট-বড় শহর ধ্বংস হয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এক বছর পরেও সংঘাত থামার চিহ্ন নেই। শান্তি আলোচনা শুরু করার পক্ষে চাপ বাড়ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন

জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলের রাজনীতিক ওয়াগেনকানেক্ট ও নারীবাদী অ্যালিস সোয়ারজার প্রচার শুরু করেছেন, অবিলম্বে আলোচনা করতে হবে এবং অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের সাহায্যে ইউক্রেন কোনো ছোট লড়াইয়ে জিততে পারে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র যে দেশের হাতে আছে, তাদের হারাতে পারবে না। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নেওয়া একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানির ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অবিলম্বে কূটনৈতিক স্তরে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ৫ লাখ মানুষ তাদের আবেদনপত্রে সই করেছেন। জার্মানিতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত একটি ওয়েবসাইটকে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উদ্বেগ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই আছে।

ন্যাটোর জেনারেল সেক্রেটারি স্টলটেনবার্গ জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষে শান্তির জন্য একতরফা পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা আর থাকতে পারবে না। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা