নিউইয়র্ক ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১১০ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : দেশে মোট মাতৃভাষা ৪১টি। এই তথ্য ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের (আমাই) নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষার। বাংলা ও উর্দু ছাড়া এর বেশির ভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন বলছে আমাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বড় উদ্যোগ না দিলে অনেক মাতৃভাষা বিলুপ্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র প্রথম খণ্ডে উল্লিখিত বিপন্ন মাতৃভাষাগুলো হলো রেংমিটচা, চাক, সৌরা, খিয়াং, খুমি, কোল, কোডা, পাত্র, লুসাই, পাংখোয়া, কন্দ, খাড়িয়া, মালতো ও মুণ্ডারি। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, যেসব ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে সাধারণত সেগুলোকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১৪টি ভাষার মধ্যে অন্তত ছয়টি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা হাজারেরও নিচে।

তবে গবেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে এসব ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা আরো কমেছে। ২০১১ সালে রেংমিটচা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ জন। সম্প্রতি প্রকাশিত ইয়াঙান ম্রো রচিত রেংমিটচা ভাষার প্রথম অভিধান ‘মিটচ্য তখক’ থেকে জানা যায়, বর্তমানে এ ভাষায় কথা বলা মানুষ জীবিত আছে মাত্র ছয়জন। যেকোনো সময় এই ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা আছে।শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন হয়েছে বাংলার জন্য। সেই সঙ্গে মাতৃভাষার জন্যও। আমাদের তখন থেকেই এসব মাতৃভাষা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে উপজাতি আখ্যা দিয়ে খুব ঊন অবস্থায় রেখেছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।’

আরোও পড়ুন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গারো ভাষা না জানলে পেটে ভাত জুটবে না, তা নয়। কিন্তু বাংলা না জানলে আমার অসুবিধা। এ দেশে ইংরেজি মানুষ কেন বলে? ইংরেজি জানলে তার জীবন-জীবিকা, অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্র খুলে যায়। গারো ভাষা না জানলে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এভাবে চললে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা থাকবে না।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ভাষীর জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তাদের ভাষাগুলোর প্রকৃত সংখ্যা, বাস্তব অবস্থা ও ভাষিক পরিস্থিতি জানার জন্য ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ কর্মসূচির কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলেও সমীক্ষাটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ১০ খণ্ডে সমীক্ষাটি প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও বর্তমানে কিছু বিপন্ন ভাষার অভিধানের কাজ করছে বলে কালের কণ্ঠকে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ। তবে ভাষা সংরক্ষণ ও রক্ষায় এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ভাষা বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ শিকদার বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করলে সেটার গুরুত্ব আছে যদি সে ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে কাজ করে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা আসলে ভাষাবিজ্ঞানীদের কাজ। কোন লিপি গ্রহণ করলে কোন ভাষার জন্য সুবিধাজনক হবে—এটা ভাষাবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে পারবেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক : জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে চাকমা, মারমা, গারো, সাদরি ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠ্য বই দেওয়া হয়। বর্তমানে এই পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে। তবে ছয় বছর পার হয়ে গেলেও আর কোনো ভাষায় পাঠ্য বই দেওয়া হয়নি। আর যে পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়ছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।

আরোও পড়ুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানেন না রিজওয়ান

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্য বই হওয়াটা ইতিবাচক উদ্যোগ; কিন্তু গারো ভাষার বই বের হলে এটা পড়াবে কে? গারো শিক্ষক তো নিয়োগ করা হয়নি বিশেষভাবে। শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে দ্রুত।’ শুধু মাতৃভাষায় বই প্রণয়ন নয়, পাঠদান প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুধু পাঠ্যপুস্তক করলেই হবে না। শিক্ষক তৈরি করতে হবে, পুরো পাঠদান প্রক্রিয়াটাই চালু করতে হবে। আমরা যে রকম ইংরেজি শিখব, তেমনি তাদের ইংরেজিও শেখাতে হবে। পাশাপাশি ঐচ্ছিক হিসেবে বাংলাটাও থাকবে।’ বিপন্ন মাতৃভাষা রক্ষায় করণীয় : বিপন্ন মাতৃভাষাগুলো রক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর জোর দিচ্ছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য থাকলে শিক্ষার বিস্তার হয় না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে দরিদ্রের ভেতরেও দরিদ্র। তাদের দারিদ্র্য দূর করার জন্য অর্থনৈতিক প্রকল্প নিতে হবে। এটা ঠিক করতে না পারলে ভাষার প্রশ্নে আমরা খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ শিকদার বলেন, ‘বিপন্ন ভাষা বাঁচানোর কিছু মানদণ্ড আছে। যে ভাষাগুলোর লিখিত রূপ নেই, তাদের জন্য লিপির ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলা লিপি, রোমান বা অন্য যেকোনো লিপি নিতে পারে তারা। জাতিগুলো সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন লিপি গ্রহণ করবে। ইনস্টিটিউট যদি ভাষাগুলোর ডকুমেন্টেশন করাসহ এ কাজগুলো করে তাহলে হয়তো এ ভাষাগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে আপাতত রক্ষা পাবে।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপন্ন ও সংকটাপন্ন ভাষাগুলো রক্ষায় আমরা শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা হাতে নেব। এ জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাইব। ব্যক্তি পর্যায়ে যাঁরা গবেষণা করছেন তাঁদেরও ভাষা ইনস্টিটিউট সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া আমরা ভাষা গবেষণার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (ঝওখ) ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক (২০২২-২০৩২) পালন করব এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেব।’ সূত্রঃ কালের কন্ঠ

হককথা/ সাথী

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন

প্রকাশের সময় : ০২:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : দেশে মোট মাতৃভাষা ৪১টি। এই তথ্য ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের (আমাই) নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষার। বাংলা ও উর্দু ছাড়া এর বেশির ভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন বলছে আমাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বড় উদ্যোগ না দিলে অনেক মাতৃভাষা বিলুপ্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র প্রথম খণ্ডে উল্লিখিত বিপন্ন মাতৃভাষাগুলো হলো রেংমিটচা, চাক, সৌরা, খিয়াং, খুমি, কোল, কোডা, পাত্র, লুসাই, পাংখোয়া, কন্দ, খাড়িয়া, মালতো ও মুণ্ডারি। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, যেসব ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে সাধারণত সেগুলোকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১৪টি ভাষার মধ্যে অন্তত ছয়টি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা হাজারেরও নিচে।

তবে গবেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সময়ে এসে এসব ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা আরো কমেছে। ২০১১ সালে রেংমিটচা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ জন। সম্প্রতি প্রকাশিত ইয়াঙান ম্রো রচিত রেংমিটচা ভাষার প্রথম অভিধান ‘মিটচ্য তখক’ থেকে জানা যায়, বর্তমানে এ ভাষায় কথা বলা মানুষ জীবিত আছে মাত্র ছয়জন। যেকোনো সময় এই ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা আছে।শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন হয়েছে বাংলার জন্য। সেই সঙ্গে মাতৃভাষার জন্যও। আমাদের তখন থেকেই এসব মাতৃভাষা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে উপজাতি আখ্যা দিয়ে খুব ঊন অবস্থায় রেখেছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।’

আরোও পড়ুন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গারো ভাষা না জানলে পেটে ভাত জুটবে না, তা নয়। কিন্তু বাংলা না জানলে আমার অসুবিধা। এ দেশে ইংরেজি মানুষ কেন বলে? ইংরেজি জানলে তার জীবন-জীবিকা, অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্র খুলে যায়। গারো ভাষা না জানলে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এভাবে চললে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা থাকবে না।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ভাষীর জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তাদের ভাষাগুলোর প্রকৃত সংখ্যা, বাস্তব অবস্থা ও ভাষিক পরিস্থিতি জানার জন্য ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ কর্মসূচির কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলেও সমীক্ষাটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ১০ খণ্ডে সমীক্ষাটি প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও বর্তমানে কিছু বিপন্ন ভাষার অভিধানের কাজ করছে বলে কালের কণ্ঠকে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ। তবে ভাষা সংরক্ষণ ও রক্ষায় এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ভাষা বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ শিকদার বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ করলে সেটার গুরুত্ব আছে যদি সে ব্যক্তি যৌক্তিকভাবে কাজ করে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা আসলে ভাষাবিজ্ঞানীদের কাজ। কোন লিপি গ্রহণ করলে কোন ভাষার জন্য সুবিধাজনক হবে—এটা ভাষাবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে পারবেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্যপুস্তক : জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ২০১৭ সালে চাকমা, মারমা, গারো, সাদরি ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠ্য বই দেওয়া হয়। বর্তমানে এই পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে। তবে ছয় বছর পার হয়ে গেলেও আর কোনো ভাষায় পাঠ্য বই দেওয়া হয়নি। আর যে পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়ছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।

আরোও পড়ুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানেন না রিজওয়ান

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠ্য বই হওয়াটা ইতিবাচক উদ্যোগ; কিন্তু গারো ভাষার বই বের হলে এটা পড়াবে কে? গারো শিক্ষক তো নিয়োগ করা হয়নি বিশেষভাবে। শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে দ্রুত।’ শুধু মাতৃভাষায় বই প্রণয়ন নয়, পাঠদান প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুধু পাঠ্যপুস্তক করলেই হবে না। শিক্ষক তৈরি করতে হবে, পুরো পাঠদান প্রক্রিয়াটাই চালু করতে হবে। আমরা যে রকম ইংরেজি শিখব, তেমনি তাদের ইংরেজিও শেখাতে হবে। পাশাপাশি ঐচ্ছিক হিসেবে বাংলাটাও থাকবে।’ বিপন্ন মাতৃভাষা রক্ষায় করণীয় : বিপন্ন মাতৃভাষাগুলো রক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর জোর দিচ্ছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য থাকলে শিক্ষার বিস্তার হয় না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে দরিদ্রের ভেতরেও দরিদ্র। তাদের দারিদ্র্য দূর করার জন্য অর্থনৈতিক প্রকল্প নিতে হবে। এটা ঠিক করতে না পারলে ভাষার প্রশ্নে আমরা খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ শিকদার বলেন, ‘বিপন্ন ভাষা বাঁচানোর কিছু মানদণ্ড আছে। যে ভাষাগুলোর লিখিত রূপ নেই, তাদের জন্য লিপির ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলা লিপি, রোমান বা অন্য যেকোনো লিপি নিতে পারে তারা। জাতিগুলো সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন লিপি গ্রহণ করবে। ইনস্টিটিউট যদি ভাষাগুলোর ডকুমেন্টেশন করাসহ এ কাজগুলো করে তাহলে হয়তো এ ভাষাগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে আপাতত রক্ষা পাবে।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপন্ন ও সংকটাপন্ন ভাষাগুলো রক্ষায় আমরা শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা হাতে নেব। এ জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাইব। ব্যক্তি পর্যায়ে যাঁরা গবেষণা করছেন তাঁদেরও ভাষা ইনস্টিটিউট সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া আমরা ভাষা গবেষণার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (ঝওখ) ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক (২০২২-২০৩২) পালন করব এবং বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেব।’ সূত্রঃ কালের কন্ঠ

হককথা/ সাথী