নিউইয়র্ক ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হব না

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:১৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৬ বার পঠিত

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হব না। আর মাত্র ১০ মাস পর নির্বাচন। এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে-আমাকে পক্ষপাতিত্বহীন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মনোনিবেশ করতে হবে। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করবে যমুনা টেলিভিশনকে সোমবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক দাবি তুলে বা সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে কিছু করা সম্ভব নয়।

আমরা সংবিধানের আলোকে কাজ করতে বাধ্য। আগের সংবিধানের ৫৮ ধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল। সেই বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এখন সেটা সংবিধানের অংশ নয়। তাই এখন সংবিধানে যা আছে তার মধ্যে থেকে সব দলকে অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতির কিছু দায়িত্ব আছে। সেটি হচ্ছে কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে যে অন্তরায়, তা দূর করা। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা। এই দায়িত্ব পালনে আমি পিছপা হব না।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটা (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইসি গঠন প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনারদের সার্চ কমিটির মাধ্যমে ‘এন্টিসিডেন্স’ (আগের রেকর্ড) পরীক্ষা করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। তাদের স্বাধীনতা আছে বলেই গাইবান্ধার নির্বাচনটি তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে বাতিল করে দেয়।

আওয়ামী লীগের কিছু বলার থাকলেও বলেনি। কারণ ইসি যা মনে করেছে, স্বাধীনভাবে তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে। তাই আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংঘাত ভুলে গিয়ে, ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো সংঘাতে না গিয়ে, জানমালের ক্ষতি না করে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে করা যায়-তাহলে এ দেশের মঙ্গল। এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষ এগুবে। (তখন) জনগণের মাধ্যমে দেশে একটি সত্যিকার ও শক্তিশালী সরকার নির্বাচিত হবে। (যেহেতু) সংবিধানে ৭ ধারায় বলা আছে, দেশের মালিক জনগণ। তাহলে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারেরই তো জনগণের ভালো-মন্দ (দেখার) কাজ করা সম্ভব।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক-এটা শুধু সরকারের কামনা নয়, সারা বিশ্বের ও দেশের জনগণেরও কামনা। ছোট দল, বড় দল, জোট-সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাদের (দলগুলোর) স্বার্থেই নির্বাচনে আসতে হবে, আমরা যদি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করি। তারা (বিরোধী দল) সংবিধান সংশোধনসহ নানান যুক্তি দেখান। যারা যুক্তি দেখান সেটা তাদের যুক্তি। আমি এটা নিয়ে বিতর্কে যাব না। কিন্তু সংবিধানের ভেতরেই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে-ইসিকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী যেন তারা দায়িত্ব পালন করে। আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো কোনো সময়ে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। যেমন : জাতীয় দুর্যোগ, নির্বাচনে অরাজকতা বা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার প্রচেষ্টা দেখা দিলে হস্তক্ষেপ করা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি।

এ ব্যাপারে কিছু ভাবনা আমার আছে। আর সেটা হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বা নৈরাজ্য যদি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তা দূর করতে আমার যে ভূমিকা রাখা দরকার তা আমি রাখব। কিন্তু আমি চাইব, ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে যেন আমি আমার ক্ষমতা প্রয়োগ করি। যাতে সেখানে পক্ষপাতিত্বের চিহ্নও না থাকে। মানুষ যেন (সেটা দেখে) উপলব্ধি করতে পারে যে, রাষ্ট্রপতি যে কাজ করেছেন তা দেশের জন্য করেছেন। আমার দায়িত্ব পালন হবে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে। কাউকে অবদমিত বা ‘ম্যালাইন’ করার জন্য নয়। সেখানে (দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে) ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল যে কেউ ‘ভিকটিমাইজ’ (ক্ষতিগ্রস্ত) হলেও হতে পারে। কিন্তু আমার চাওয়া থাকবে সুষ্ঠু নির্বাচন।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তার ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যুক্ত থাকা, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার আন্দোলন ও বাকশালের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরে বলেন, আমি রাজনীতি করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ যখন আমার ওপর একটি মহান দায়িত্ব অর্পণ করল, আমার এখন প্রথম কাজ হলো জাতীয় বিভেদকে ঐক্যে পরিণত করা। আমার কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই। আমি মনে করি, সবার সহযোগিতায় দেশের ও মানুষের অগ্রগতির জন্য এটা হতেই হবে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে সবাইকে সহাবস্থানে এনে গণমানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কীভাবে নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায়ই ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে অনেকে শরমবোধ করেন। স্বীকৃত বিষয়গুলোতে যদি কারও অনীহা থাকে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতি সম্ভব নয়। কিন্তু প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। যারা একপক্ষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়, যেমন : ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়।

জাতির পিতা তার সারা জীবনের সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তিনি শুধু নন, তার গোটা পরিবারকে শহিদ করা হয়েছে। এমন নৃশংসতা এ দেশে সম্ভব! এটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা কল্পনা করতে পারিনি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা এ জাতির আছে। তখন থেকে আমাদের উচিত ছিল যে, এদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। বিচার করে আইনের গতিতে দেশ চলতে থাকবে। কিন্তু তা না করে ইনডেমনিটি দিয়ে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে কি তারা এই হত্যাকাণ্ডে অংশীদার নয়?

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসতে যাচ্ছি, সে সময়ে এ কথা বলা উচিত হবে না। কিন্তু আমি আমার ‘কনশাসের’ (চেতনা) সঙ্গে তো ‘বিট্রে’ (বিশ্বাসঘাতকতা) করতে পারি না। আমার মুখে সত্য ঘটনা বলতে আপত্তি নেই। ইনডেমনিটি দেওয়া, তাদের রক্ষার চেষ্টা করা কখনো সভ্য দেশে গ্রহণীয় হতে পারে না। আবার এখানেই শেষ নয়, যারা আগস্ট ঘটাল, তারা এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি একসাথে মিলে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে নিয়ে গেল। তারা স্বাধীনতাকে মানতে পারল না। তাই এই মানসিকতা যেখানে আছে, সে দেশে এটা (ঐক্য) হবে না। তবে এর জন্য সব উদ্যম আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে যে সহিংসতা হয়েছে সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় দৃষ্টান্ত। আমি ওই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি রিপোর্ট দিয়েছি। আমার গা শিউরে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পরে তিনি প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো মিছিল করেনি। হাতিয়ার তুলে নেওয়া দূরের কথা, বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করে দেন। তাদের বেহেশতে রেখেছিলেন। যেসব অপরাধী এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা তো স্বর্গে। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি করেননি। এটা এ কারণে যে তাদের মধ্যে অনুশোচনা হোক।

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহতালার শুকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি ও স্বীকার করি আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির প্রধান এবং সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী, দেশরত্ন ও দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সম্পূর্ণ বিবেচনা সংসদ নেত্রীর। যেখানে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, এই বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় দেখতাম। সব জায়গায় বিভিন্ন রকম সংবাদ জানতাম। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলাম। সেই সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। দলীয় কার্যালয়ে মাঝে-মধ্যে যাওয়া-আসা হতো। অনেক আলাপ-আলোচনা শুনতাম। কিন্তু আমি সেখানে কখনো আঁচ করতে পারিনি যে, আমি কোনো বিষয়বস্তু হতে পারি। এতটুকু ভাবনাও আমার মধ্যে ছিল না। সূত্রঃ যুগান্তর

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হব না

প্রকাশের সময় : ০২:১৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হব না। আর মাত্র ১০ মাস পর নির্বাচন। এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে-আমাকে পক্ষপাতিত্বহীন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মনোনিবেশ করতে হবে। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করবে যমুনা টেলিভিশনকে সোমবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অরাজনৈতিক দাবি তুলে বা সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে কিছু করা সম্ভব নয়।

আমরা সংবিধানের আলোকে কাজ করতে বাধ্য। আগের সংবিধানের ৫৮ ধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল। সেই বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এখন সেটা সংবিধানের অংশ নয়। তাই এখন সংবিধানে যা আছে তার মধ্যে থেকে সব দলকে অংশ নিতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতির কিছু দায়িত্ব আছে। সেটি হচ্ছে কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে যে অন্তরায়, তা দূর করা। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা। এই দায়িত্ব পালনে আমি পিছপা হব না।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটা (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইসি গঠন প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনারদের সার্চ কমিটির মাধ্যমে ‘এন্টিসিডেন্স’ (আগের রেকর্ড) পরীক্ষা করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। তাদের স্বাধীনতা আছে বলেই গাইবান্ধার নির্বাচনটি তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে বাতিল করে দেয়।

আওয়ামী লীগের কিছু বলার থাকলেও বলেনি। কারণ ইসি যা মনে করেছে, স্বাধীনভাবে তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে। তাই আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংঘাত ভুলে গিয়ে, ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো সংঘাতে না গিয়ে, জানমালের ক্ষতি না করে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে করা যায়-তাহলে এ দেশের মঙ্গল। এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষ এগুবে। (তখন) জনগণের মাধ্যমে দেশে একটি সত্যিকার ও শক্তিশালী সরকার নির্বাচিত হবে। (যেহেতু) সংবিধানে ৭ ধারায় বলা আছে, দেশের মালিক জনগণ। তাহলে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারেরই তো জনগণের ভালো-মন্দ (দেখার) কাজ করা সম্ভব।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক-এটা শুধু সরকারের কামনা নয়, সারা বিশ্বের ও দেশের জনগণেরও কামনা। ছোট দল, বড় দল, জোট-সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাদের (দলগুলোর) স্বার্থেই নির্বাচনে আসতে হবে, আমরা যদি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করি। তারা (বিরোধী দল) সংবিধান সংশোধনসহ নানান যুক্তি দেখান। যারা যুক্তি দেখান সেটা তাদের যুক্তি। আমি এটা নিয়ে বিতর্কে যাব না। কিন্তু সংবিধানের ভেতরেই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে-ইসিকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী যেন তারা দায়িত্ব পালন করে। আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো কোনো সময়ে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। যেমন : জাতীয় দুর্যোগ, নির্বাচনে অরাজকতা বা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করার প্রচেষ্টা দেখা দিলে হস্তক্ষেপ করা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি।

এ ব্যাপারে কিছু ভাবনা আমার আছে। আর সেটা হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য বা নৈরাজ্য যদি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তা দূর করতে আমার যে ভূমিকা রাখা দরকার তা আমি রাখব। কিন্তু আমি চাইব, ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে যেন আমি আমার ক্ষমতা প্রয়োগ করি। যাতে সেখানে পক্ষপাতিত্বের চিহ্নও না থাকে। মানুষ যেন (সেটা দেখে) উপলব্ধি করতে পারে যে, রাষ্ট্রপতি যে কাজ করেছেন তা দেশের জন্য করেছেন। আমার দায়িত্ব পালন হবে শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে। কাউকে অবদমিত বা ‘ম্যালাইন’ করার জন্য নয়। সেখানে (দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে) ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল যে কেউ ‘ভিকটিমাইজ’ (ক্ষতিগ্রস্ত) হলেও হতে পারে। কিন্তু আমার চাওয়া থাকবে সুষ্ঠু নির্বাচন।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তার ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যুক্ত থাকা, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার আন্দোলন ও বাকশালের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরে বলেন, আমি রাজনীতি করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ যখন আমার ওপর একটি মহান দায়িত্ব অর্পণ করল, আমার এখন প্রথম কাজ হলো জাতীয় বিভেদকে ঐক্যে পরিণত করা। আমার কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই। আমি মনে করি, সবার সহযোগিতায় দেশের ও মানুষের অগ্রগতির জন্য এটা হতেই হবে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে সবাইকে সহাবস্থানে এনে গণমানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কীভাবে নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায়ই ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে অনেকে শরমবোধ করেন। স্বীকৃত বিষয়গুলোতে যদি কারও অনীহা থাকে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতি সম্ভব নয়। কিন্তু প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। যারা একপক্ষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়, যেমন : ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়।

জাতির পিতা তার সারা জীবনের সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তিনি শুধু নন, তার গোটা পরিবারকে শহিদ করা হয়েছে। এমন নৃশংসতা এ দেশে সম্ভব! এটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা কল্পনা করতে পারিনি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা এ জাতির আছে। তখন থেকে আমাদের উচিত ছিল যে, এদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। বিচার করে আইনের গতিতে দেশ চলতে থাকবে। কিন্তু তা না করে ইনডেমনিটি দিয়ে প্রাইজ পোস্টিং দিয়ে তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে কি তারা এই হত্যাকাণ্ডে অংশীদার নয়?

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসতে যাচ্ছি, সে সময়ে এ কথা বলা উচিত হবে না। কিন্তু আমি আমার ‘কনশাসের’ (চেতনা) সঙ্গে তো ‘বিট্রে’ (বিশ্বাসঘাতকতা) করতে পারি না। আমার মুখে সত্য ঘটনা বলতে আপত্তি নেই। ইনডেমনিটি দেওয়া, তাদের রক্ষার চেষ্টা করা কখনো সভ্য দেশে গ্রহণীয় হতে পারে না। আবার এখানেই শেষ নয়, যারা আগস্ট ঘটাল, তারা এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি একসাথে মিলে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে নিয়ে গেল। তারা স্বাধীনতাকে মানতে পারল না। তাই এই মানসিকতা যেখানে আছে, সে দেশে এটা (ঐক্য) হবে না। তবে এর জন্য সব উদ্যম আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে যে সহিংসতা হয়েছে সেটাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় দৃষ্টান্ত। আমি ওই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি রিপোর্ট দিয়েছি। আমার গা শিউরে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পরে তিনি প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো মিছিল করেনি। হাতিয়ার তুলে নেওয়া দূরের কথা, বিজয় মিছিল নিষিদ্ধ করে দেন। তাদের বেহেশতে রেখেছিলেন। যেসব অপরাধী এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা তো স্বর্গে। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি করেননি। এটা এ কারণে যে তাদের মধ্যে অনুশোচনা হোক।

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহতালার শুকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি ও স্বীকার করি আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির প্রধান এবং সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী, দেশরত্ন ও দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সম্পূর্ণ বিবেচনা সংসদ নেত্রীর। যেখানে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, এই বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় দেখতাম। সব জায়গায় বিভিন্ন রকম সংবাদ জানতাম। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলাম। সেই সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। দলীয় কার্যালয়ে মাঝে-মধ্যে যাওয়া-আসা হতো। অনেক আলাপ-আলোচনা শুনতাম। কিন্তু আমি সেখানে কখনো আঁচ করতে পারিনি যে, আমি কোনো বিষয়বস্তু হতে পারি। এতটুকু ভাবনাও আমার মধ্যে ছিল না। সূত্রঃ যুগান্তর