নিউইয়র্ক ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৫:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০১৫
  • / ৬৯১ বার পঠিত

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় গুঞ্জনও সত্য হল। দফতরবিহীন মন্ত্রী করার পর নতুন করে তাকে ভিন্ন কোনো মন্ত্রণালয় বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে বুধবার (১৫ জুলাই) বাজারে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। যার অবসান ঘটে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) । এদিন তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ মন্ত্রণালয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন কর্মকান্ডের মন্ত্রণালয় হিসেবে যেমন এলজিআরডি শীর্ষে, তেমনি সিভিল প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্রীড়নক এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতদিন মন্ত্রণালয়টি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত ছিল। যদিও আওয়ামী লীগের এ মেয়াদে এখানে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ইসমাত আরা সাদেককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদিকে এই নিয়োগের ফলে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রীর তকমা থেকে মুক্ত হলেন সৈয়দ আশরাফ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদের ছুটি শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, ‘সৈয়দ আশরাফকে ঈদের আগেই নতুন দায়িত্ব দেয়া হতে পারে’ শিরোনামে বৃহস্প্রতিবার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে এমন তথ্যের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। এরপর তাকে দফতরবিহীন করার প্রেক্ষাপটসহ তার লন্ডন চলে যাওয়ার প্রস্তুত নিয়ে গণমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোজুড়ে তিনিই প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন। অবশ্য আলোচনা ও সমালোচনার প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন বরফ গলার আভাস মেলে। নানামুখী গুজবের ডালপালা ভেদ করে রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়। যার মুলতবি বৈঠক হয় মঙ্গলবারও। এরপর ১৫ জুলাই সৈয়দ আশরাফের বিদেশ সফর স্থগিত হয়ে যায়। তিনি পনের দিনের ছুটিতে লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে গত সোমবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং মঙ্গলবার নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে তিনি বিরত থাকেন। এরপর বুধবার আরও এক দফা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বশেষ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। যার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এদিকে সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই মন্ত্রণালয় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আগের মন্ত্রণালয়ে তিনি গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু এখানে তার আরও বেশি কিছু ক্ষমতা ও সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুরো সিভিল ব্যুরোক্রেসির হার্ট বা হৃৎপিন্ড। বলতে গেলে সরকারের পুরো প্রশাসনযন্ত্র এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি হয় এই মন্ত্রণালয় থেকেই। এমনকি প্রশাসন ক্যাডারের বাইরেও যারা চতুর্থ গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেতে চান তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তথা এই মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এসএসবির (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) কাছে আসতে হয়। মোদ্দা কথা, সরকারের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর। এতদিন যা ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তা এখন সৈয়দ আশরাফ পেলেন। তিনি জানান, সৈয়দ আশরাফকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে তিনি আপন ভুবনে আরও সম্মানিত হয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে পদোন্নতি বঞ্চনাসহ প্রশাসন দলীয়করণ করার কোনো যৌক্তিক অভিযোগ উঠলে সে দায় তাকেই বহন করতে হবে।
সাবেক একজন সচিব বলেন, সৈয়দ আশরাফের এ পদায়ন সরকারপন্থী কর্মকর্তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা আশরাফকে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কেননা ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার ব্যস্ততা এবং প্রটোকল ডিঙিয়ে সাক্ষাৎ পাওয়া দুরূহ। এক্ষেত্রে সরকারপন্থী কর্মকর্তারা চাইলে অনেকটা সহজেই যে কোনো বিষয়ে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন। জানাতে পারবেন নিজেদের অভিযোগ, অনুযোগের কথা। তিনি জানান, সরকারি দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুধু সারা দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির মধ্যে আজ সীমাবদ্ধ নেই। প্রশাসনেও তার বাতাস লেগেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ টানা সাড়ে ৬ বছর হওয়ায় নানারকম ব্যক্তি ও কোটারি স্বার্থকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের মধ্যেও সরকারপন্থী কর্মকর্তাদের দ্ব›দ্ব এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। যে কারণে গত এপ্রিল মাসে প্রশাসনে তিন স্তরে প্রায় ৯০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার সময় বেশ কয়েকজন সরকারপন্থী কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। তাই দল সমর্থক পদোন্নতিবঞ্চিত এসব কর্মকর্তার কাছে সৈয়দ আশরাফের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া বিরাট সুখবরের বিষয়।
এদিকে নতুন মন্ত্রণালয় পাওয়ার পরও প্রতিক্রিয়াহীন সৈয়দ আশরাফ। আশরাফ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, তিনি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। সন্ধ্যা ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহস্প্রতিবার তার সঙ্গে দেখা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং সচিব কামাল আবদুল নাসের। তাছাড়া এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় দলে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। আশরাফের শুভাকাঙ্খীরা মনে করছেন, যোগ্যতা-সততা এবং সত্যের জয় হয়েছে, আর বিরোধী শিবিরে হতাশার ছায়া নেমে এসেছে।
উল্লেখ, গত ৭ জুলাই একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য আটটি প্রকল্প তালিকায় প্রথমেই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।’ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথমেই পাসের জন্য প্রকল্পটি উঠানো হয়। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কেউই উপস্থিত ছিলেন না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিরক্তি প্রকাশ করে তখন বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার এত বড় প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দু’জন মন্ত্রী রয়েছেন, অথচ একজনও আসেননি। তাই এ প্রকল্প একনেক সভা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তাদের মতামত নিয়ে প্রকল্পটি পাস করা দরকার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, মনে করেন আমিই মন্ত্রী। প্রকল্পটা প্রত্যাহার করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, উনি যখন মিটিংয়ে আসেন না, আমি উনাকে সরিয়ে (চেঞ্জ করে) দিচ্ছি। এখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আছেন, আজকেই চেঞ্জ করতে বলব।’ এরপর একনেক সভার নিয়মিত কার্যক্রম চলতে থাকে। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন। ওই বৈঠকের পরই দেশব্যাপী সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার গুঞ্জন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়।
দফতর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গণভবনে প্রবেশ করেন। রাত ৮টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি গণভবনেই অবস্থান করছিলেন। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ

প্রকাশের সময় : ০৯:২৫:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জুলাই ২০১৫

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে দ্বিতীয় গুঞ্জনও সত্য হল। দফতরবিহীন মন্ত্রী করার পর নতুন করে তাকে ভিন্ন কোনো মন্ত্রণালয় বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে বুধবার (১৫ জুলাই) বাজারে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। যার অবসান ঘটে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) । এদিন তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ মন্ত্রণালয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন কর্মকান্ডের মন্ত্রণালয় হিসেবে যেমন এলজিআরডি শীর্ষে, তেমনি সিভিল প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্রীড়নক এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতদিন মন্ত্রণালয়টি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত ছিল। যদিও আওয়ামী লীগের এ মেয়াদে এখানে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ইসমাত আরা সাদেককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদিকে এই নিয়োগের ফলে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রীর তকমা থেকে মুক্ত হলেন সৈয়দ আশরাফ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদের ছুটি শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, ‘সৈয়দ আশরাফকে ঈদের আগেই নতুন দায়িত্ব দেয়া হতে পারে’ শিরোনামে বৃহস্প্রতিবার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে এমন তথ্যের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। এরপর তাকে দফতরবিহীন করার প্রেক্ষাপটসহ তার লন্ডন চলে যাওয়ার প্রস্তুত নিয়ে গণমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোজুড়ে তিনিই প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন। অবশ্য আলোচনা ও সমালোচনার প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন বরফ গলার আভাস মেলে। নানামুখী গুজবের ডালপালা ভেদ করে রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক হয়। যার মুলতবি বৈঠক হয় মঙ্গলবারও। এরপর ১৫ জুলাই সৈয়দ আশরাফের বিদেশ সফর স্থগিত হয়ে যায়। তিনি পনের দিনের ছুটিতে লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে গত সোমবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং মঙ্গলবার নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে তিনি বিরত থাকেন। এরপর বুধবার আরও এক দফা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সর্বশেষ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। যার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এদিকে সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই মন্ত্রণালয় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আগের মন্ত্রণালয়ে তিনি গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু এখানে তার আরও বেশি কিছু ক্ষমতা ও সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুরো সিভিল ব্যুরোক্রেসির হার্ট বা হৃৎপিন্ড। বলতে গেলে সরকারের পুরো প্রশাসনযন্ত্র এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি হয় এই মন্ত্রণালয় থেকেই। এমনকি প্রশাসন ক্যাডারের বাইরেও যারা চতুর্থ গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেতে চান তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তথা এই মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এসএসবির (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) কাছে আসতে হয়। মোদ্দা কথা, সরকারের প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর। এতদিন যা ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে, তা এখন সৈয়দ আশরাফ পেলেন। তিনি জানান, সৈয়দ আশরাফকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে তিনি আপন ভুবনে আরও সম্মানিত হয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে পদোন্নতি বঞ্চনাসহ প্রশাসন দলীয়করণ করার কোনো যৌক্তিক অভিযোগ উঠলে সে দায় তাকেই বহন করতে হবে।
সাবেক একজন সচিব বলেন, সৈয়দ আশরাফের এ পদায়ন সরকারপন্থী কর্মকর্তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা আশরাফকে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কেননা ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার ব্যস্ততা এবং প্রটোকল ডিঙিয়ে সাক্ষাৎ পাওয়া দুরূহ। এক্ষেত্রে সরকারপন্থী কর্মকর্তারা চাইলে অনেকটা সহজেই যে কোনো বিষয়ে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন। জানাতে পারবেন নিজেদের অভিযোগ, অনুযোগের কথা। তিনি জানান, সরকারি দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুধু সারা দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির মধ্যে আজ সীমাবদ্ধ নেই। প্রশাসনেও তার বাতাস লেগেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ টানা সাড়ে ৬ বছর হওয়ায় নানারকম ব্যক্তি ও কোটারি স্বার্থকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের মধ্যেও সরকারপন্থী কর্মকর্তাদের দ্ব›দ্ব এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। যে কারণে গত এপ্রিল মাসে প্রশাসনে তিন স্তরে প্রায় ৯০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার সময় বেশ কয়েকজন সরকারপন্থী কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। তাই দল সমর্থক পদোন্নতিবঞ্চিত এসব কর্মকর্তার কাছে সৈয়দ আশরাফের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া বিরাট সুখবরের বিষয়।
এদিকে নতুন মন্ত্রণালয় পাওয়ার পরও প্রতিক্রিয়াহীন সৈয়দ আশরাফ। আশরাফ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, তিনি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। সন্ধ্যা ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহস্প্রতিবার তার সঙ্গে দেখা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং সচিব কামাল আবদুল নাসের। তাছাড়া এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় দলে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। আশরাফের শুভাকাঙ্খীরা মনে করছেন, যোগ্যতা-সততা এবং সত্যের জয় হয়েছে, আর বিরোধী শিবিরে হতাশার ছায়া নেমে এসেছে।
উল্লেখ, গত ৭ জুলাই একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য আটটি প্রকল্প তালিকায় প্রথমেই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।’ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রথমেই পাসের জন্য প্রকল্পটি উঠানো হয়। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কেউই উপস্থিত ছিলেন না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিরক্তি প্রকাশ করে তখন বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার এত বড় প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দু’জন মন্ত্রী রয়েছেন, অথচ একজনও আসেননি। তাই এ প্রকল্প একনেক সভা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তাদের মতামত নিয়ে প্রকল্পটি পাস করা দরকার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, মনে করেন আমিই মন্ত্রী। প্রকল্পটা প্রত্যাহার করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, উনি যখন মিটিংয়ে আসেন না, আমি উনাকে সরিয়ে (চেঞ্জ করে) দিচ্ছি। এখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আছেন, আজকেই চেঞ্জ করতে বলব।’ এরপর একনেক সভার নিয়মিত কার্যক্রম চলতে থাকে। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন। ওই বৈঠকের পরই দেশব্যাপী সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়ার গুঞ্জন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়।
দফতর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গণভবনে প্রবেশ করেন। রাত ৮টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি গণভবনেই অবস্থান করছিলেন। (দৈনিক যুগান্তর)